অসুস্থ খালেদা জিয়াকে বিদেশে উন্নত চিকিৎসার জন্য পাঠানোর দাবি বিএনপির দীর্ঘদিনের। এজন্য সাবেক সরকারের কাছে বহুবার আবেদন জানিয়েছে তার পরিবার, দলের নেতারাও বারবার বলেছেন চেয়ারপারসনকে বিদেশে চিকিৎসার জন্য অনুমতি দেওয়ার কথা।
কিন্তু আওয়ামী লীগ সরকার আইনের মারপ্যাঁচ দেখিয়ে কখনোই সেই অনুমতি দেয়নি।
তীব্র ছাত্র-গণআন্দোলনের মুখে গত ৫ আগস্ট পদত্যাগ করে দেশ ছাড়েন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সরকারের পতন ঘটতেই ৬ আগস্ট নির্বাহী আদেশে মুক্ত হন খালেদা জিয়া। ফলে চিকিৎসার জন্য বিদেশ যাওয়ার ক্ষেত্রে তার যে বাধা ছিল, তা উঠে যায়।
মঙ্গলবার নয়াপল্টনে আয়োজিত সমাবেশে মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর জানালেন, খালেদা জিয়া চিকিৎসার জন্য দেশের বাইরে যাবেন। চিকিৎসা শেষে আবার ফিরেও আসবেন তিনি।
৭৯ বছর বয়সী সাবেক প্রধানমন্ত্রী লিভার সিরোসিস, ফুসফুস, আর্থ্রাইটিস, হৃদরোগ, কিডনি জটিলতা, ডায়াবেটিসসহ বিভিন্ন রোগে ভুগছেন। চলতি বছরও দীর্ঘ সময় নানা জটিলতার কারণে ঢাকার এভার কেয়ার হাসপাতালে ভর্তি থাকতে হয়েছে তাকে।
সবশেষ গত ১২ সেপ্টেম্বর শারীরিক কিছু জরুরি পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য তাকে হাসপাতালটিতে ভর্তি করা হয়। এখনও তিনি সেখানেই চিকিৎসাধীন।
রাজনৈতিক দমন-পীড়নের শিকার ব্যক্তিদের স্মরণে ও আন্তর্জাতিক গণতন্ত্র দিবস উপলক্ষ্যে আয়োজিত সমাবেশে মির্জা ফখরুল খালেদা জিয়ার বিদেশ যাওয়ার প্রসঙ্গে কথা বলেন। জানান বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের দেশে ফেরার কথাও, যিনি দীর্ঘদিন ধরে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে যুক্তরাজ্যে বসবাস করছেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, “আমাদের নেতা তারেক রহমান দেশে ফিরে আসবেন। খালেদা জিয়া চিকিৎসার জন্য বাইরে যাবেন আবার ফিরে আসবেন।”
খালেদা জিয়ার ছেলে ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব তারেক রহমান ২০০৮ সালের ১১ সেপ্টেম্বর উন্নত চিকিৎসার জন্য যুক্তরাজ্যে যান। এরপর থেকে আর দেশে ফেরেননি তিনি। দেশের গণমাধ্যমে তার বক্তব্য প্রচারও দীর্ঘদিন বন্ধ ছিল।
তারেক রহমান বাংলাদেশের বেশ কয়েকটি মামলার দণ্ডিত আসামি। যার মধ্যে রয়েছে অর্থপাচার, ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা, অবৈধ সম্পদ অর্জনসহ নানা অভিযোগ। ২০১৩ সালে তাকে ধরতে ইন্টারপোলের মাধ্যমে গ্রেপ্তারি পরোয়ানাও জারি করে ঢাকার একটি আদালত।
আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের দিনই দীর্ঘদিন পর লন্ডন থেকে ভিডিওবার্তায় নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে বক্তব্য দেন তিনি। সেখানে শেখ হাসিনা সরকারের পতন উদযাপন করলেও কাউকে প্রতিশোধপরায়ণ না হওয়ার আহ্বান জানান।
সরকারের পতনের পর তারেক রহমান দেশে ফিরবেন বলে আশা করছিলেন দলটির নেতাকর্মীরা। তবে করে তিনি ফিরবেন বা কোন প্রক্রিয়ায় ফিরবেন সে বিষয়ে বিএনপির পক্ষ থেকে স্পষ্ট করে কিছু বলা হয়নি।
সমাবেশে মির্জা ফখরুল আরও বলেন, “আজ আমি গণতন্ত্রের সংগ্রামে আহত-পঙ্গু সবাইকে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার জন্য সরকারকে আহ্বান জানাচ্ছি। নিহতদের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার অনুরোধ করছি। এটাই হোক আজকের দিনের শপথ।”
দীর্ঘ ১৬ বছর আওয়ামী লীগ সরকার দেশের মানুষের ওপর স্টিমরোল চালিয়েছে, এমন অভিযোগ করে তিনি বলেন, “সেই স্টিমরোলার উপেক্ষা করে বিএনপি দীর্ঘ সংগ্রাম করে মুক্ত পরিবেশ পেয়েছে।
“২০১৬ সালে বেগম খালেদা জিয়া ভিশন-২০৩০ দিয়ে সংস্কারের কথা বলেছিলেন। বছর দুয়েক আগে আমরা ৩১ দফা দিয়ে সংগ্রাম করেছি। গত ১৬ বছরে আমাদের অসংখ্য প্রাণ গেছে, অনেকে কারাগারে গেছেন। আজ আমাদের সামনে সুযোগ এসেছে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার। আমরা যেন এই সুযোগ হেলায় না হারাই।”
শেখ হাসিনার ভারতে যাওয়ার প্রসঙ্গ টেনে সমাবেশে মির্জা আব্বাস বলেন, সুযোগ পেয়েও দেশ ছেড়ে পালাননি খালেদা জিয়া।
তিনি বলেন, “খালেদা জিয়া তার কর্মীদের জন্য দেশে থেকে গেলেন। তিনি পালান নাই। দেশনেত্রী বলেছিলেন, এ দেশ আমার, মাটি আমার, বাইরে আমার কেউ নাই, আমি বাইরে যেতে পারব না।”
আওয়ামী লীগ সভাপতিকে উদ্দেশ্য করে মির্জা আব্বাস বলেন, “আমাদের দেশের জনগণ আপনার অপেক্ষায় আছে। আপনি আমাদের নেত্রীকে দীর্ঘদিন জেলে রেখে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিয়েছেন। এ দেশের জনগণ আপনার বিচার করবে।”