লন্ডনে থাকা খালেদা জিয়া এখন অনেকটাই সুস্থ জানিয়ে তার ব্যক্তিগত চিকিৎসক ও বিএনপি নেতা এ জেড এম জাহিদ হোসেন বলেছেন, দেশে ফিরতে উদগ্রিব হয়ে আছেন বিএনপি চেয়ারপারসন।
খালেদা জিয়ার ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকোর মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে মঙ্গলবার পূর্ব লন্ডনের ব্রিক লেন মসজিদে যুবদলের যুক্তরাজ্য শাখা আয়োজিত এক দোয়া মাহফিলে বক্তৃতায় তিনি একথা বলেন বলে বাসস জানিয়েছে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য জাহিদ বলেন, “বেগম খালেদা জিয়া দেশে ফেরার জন্য অত্যন্ত উদগ্রীব। তিনি আজও আমাদের বলেছিলেন, ‘চল, আমরা দ্রুত বাংলাদেশে ফিরে যাই, দেশই আমাদের জন্য ভালো’। দেশনেত্রী দেশে ফেরার জন্য অত্যন্ত আগ্রহী।”
দেশে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনে প্রেক্ষাপটে কারামুক্তির পাঁচ মাস পর গত ৭ জানুয়ারি চিকিৎসার জন্য যুক্তরাজ্যে যান ৭৯ বছর বয়সী খালেদা জিয়া।
বেসরকারি হাসপাতাল দ্য লন্ডন ক্লিনিকে ১৭ দিন চিকিৎসা নেন তিনি। এরপর গত শুক্রবার তিনি বড় ছেলে তারেক রহমানের বাসায় যান, এখনও সেখানেই রয়েছেন। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক দেড় যুগ ধরে সপরিবারে লন্ডনে রয়েছেন।
লিভারসহ নানা জটিলতার চিকিৎসা নিয়ে খালেদা জিয়া বাসায় ফিরলেও তিনি চিকিৎসকদের তত্ত্বাবধানেই রয়েছেন। তার দেশে ফেরা নির্ভর করছে চিকিৎসকদের পরামর্শেও ওপর।
খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা তুলে ধরে ডা. জাহিদ বলেন, “চিকিৎসকসহ সবার নিরলস প্রচেষ্টায় তিনি (খালেদা জিয়া) আগের চেয়ে অনেকটা সুস্থ আছেন। তার শারীরিক অবস্থাও অনেক স্থিতিশীল।”
তারেক রহমান ও তার স্ত্রী জুবাইদা রহমান এবং ছোট ছেলের স্ত্রী শর্মিলা রহমান সিঁথিসহ তিন নাতনীকে নিয়ে তিনি পুরো পারিবারিক আবহে সময় কাটাচ্ছেন।
ডা. জাহিদ বলেন, “স্বাভাবিকভাবে মানুষ যখন তার নিকট আত্মীয়ের সঙ্গে থাকেন, তখন মানসিক দৃঢ়তার কারণেই অনেকটা প্রফুল্ল থাকেন।”
খালেদা জিয়ার এখনই দেশে ফিরতে চাওয়ার কারণ তুলে ধরে বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য বলেন, “দেশের সার্বিক অবস্থা যে দিকে যাচ্ছে, গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের জন্য তিনি মানসিকভাবে আপনাদের (জনগণের) পাশে আছেন এবং থাকতে চান।
“গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের জন্য তিনি আগেও যেমন আপসহীন ছিলেন, তেমনি এখনও মনে করেন, যত দ্রুত সম্ভব দেশে গণতন্ত্র ফিরে আসবে, মানুষ একটি গণতান্ত্রিক পরিবেশ পাবে।”
খালেদা জিয়ার দেশে ফেরা কবে নাগাদ হতে পারে- সে বিষয়ে ডা. জাহিদ বলেন, “তার বেশ কিছু পরীক্ষা আমরা করিয়েছি, যেগুলো বাংলাদেশে সম্ভব হয়নি। সেগুলো ওনারা (লন্ডন ক্লিনিক) করিয়েছে। কিন্তু তার রিপোর্ট আমরা এখনও পাইনি। সেগুলো পাওয়ার পরই সিদ্ধান্ত হবে, ম্যাডাম কত দ্রুত বাংলাদেশে ফিরে যাবেন।”
তারেক রহমানও শিগগিরই দেশে ফিরবেন জানিয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য বলেন, “বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান গত ১৫ বছর ধরে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে কাজ করেছেন। বর্তমানে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের যে আন্দোলন, তাতেও নেতৃত্ব দিচ্ছেন তিনি।
“আমরা খুবই আশাবাদী, হয়ত মা-ছেলে একসঙ্গে না গেলেও পরিস্থিতিই বলে দেবে তিনি কখন দেশে ফিরে যাবেন।”
সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া চিকিৎসার জন্য সবশেষ ২০১৭ সালের ১৬ জুলাই লন্ডনে গিয়েছিলেন। পরের বছর দুর্নীতির মামলায় দণ্ড নিয়ে কারাগারে যেতে হয় তাকে।
কোভিড মহামারি দেখা দিলে আওয়ামী লীগ সরকার নির্বাহী আদেশে তাকে মুক্তি দিয়ে বাড়িতে থাকার সুযোগ করে দিলেও বিদেশ যাওয়ার অনুমতি দেয়নি।
ছাত্র-জনতার অভ্যূত্থানে গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর মুক্তি পান খালেদা জিয়া। তারপরই চিকিৎসার জন্য যুক্তরাজ্যে যান তিনি।
বিদেশ যাওয়ার সময় তার লিভার প্রতিস্থাপনের কথা বলা হলেও লন্ডনে চিকিৎসা শুরুর পর ডা. জাহিদ জানান, খালেদা জিয়ার বয়স ও শারীরিক সক্ষমতার বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে লিভার ট্রান্সপ্লান্টের সিদ্ধান্ত নিতে চাইছেন না চিকিৎসকরা।
খালেদা জিয়া এছাড়াও আর্থ্রারাইটিস, হৃদরোগ, ফুসফুস, কিডনি, ডায়াবেটিসসহ বিভিন্ন জটিলতায় ভুগছেন। বছর খানেক আগে তার হৃদপিণ্ডে স্টেন্ট বসানো হয়, বসানো হয় পেস মেকারও।