রোজায় আবারও ৫৯৫ টাকায় গরুর মাংস বিক্রির ঘোষণা দিয়েছেন ঢাকার শাহজাহানপুরের আলোচিত ব্যবসায়ী খলিলুর রহমান।
রবিবার জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সংবাদ সম্মেলনে হাজির হয়ে তিনি জানান, আগামী ২০ রমজান পর্যন্ত এই দামে তার দোকানে গরুর মাংস পাওয়া যাবে।
এবার পুরো রমজান মাসজুড়েই ৫৯৫ টাকা দরে গরুর মাংস বিক্রির ঘোষণা দিয়েছিলেন খলিল। তবে ১০ রোজা থেকে তিনি মাংসের দাম ১০০ টাকা বাড়িয়ে ৬৯৫ টাকা করেন।
রবিবার জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর ‘ব্যক্তিপর্যায়ে সাশ্রয়ী মূল্যে গরুর মাংস বিক্রি’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে।
খলিলুর রহমান বলেন, “আগামী ২০ রোজা পর্যন্ত ৫৯৫ টাকা কেজিতে গরুর মাংস বিক্রি করব। তবে প্রতিদিন ২০টির বেশি গরু জবাই দেব না। সকাল ৭টা থেকে শুরু করে বেলা ৩টা পর্যন্ত মাংস বিক্রি করা হবে। এরপর দোকান বন্ধ হয়ে যাবে।”
রোজার শুরু থেকে ৫৯৫ টাকা কেজিতে গরুর মাংস বিক্রি করায় খলিলের দোকানে ছিল উপচেপড়া ভিড়। রমজানের প্রথম শুক্রবার তার দোকানে এক কোটি টাকার বেশি গরুর মাংস বিক্রি হওয়ার কথা জানিয়েছিলেন তিনি। তবে দাম বাড়ানোর পর তার দোকানে গত তিনদিনে তেমন ভিড় দেখা যায়নি।
মাংসের দাম বাড়ানোর পেছনে হাটে গরুর অতিরিক্ত দামকে কারণ হিসেবে উল্লেখ করে গত বৃহস্পতিবার সকাল সন্ধ্যাকে খলিল বলেছিলেন, “আমি তো ৫৯৫ টাকায় মাংস বিক্রি করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু হাটে গরুর দাম এত বৃদ্ধি পেয়েছে, তাতে আমার পক্ষে দাম ঠিক রাখা সম্ভব হয়নি।”
তিনি আরও বলেছিলেন, “একটি গরু তো শুধু কিনলেই হয় না। আমার কর্মচারী আছে ২০ জনের বেশি। তাদের মজুরিসহ সব কিছু মিলিয়ে আমার পক্ষে ৫৯৫ টাকা দাম ধরে রাখা সম্ভব হয়নি।”
ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সংবাদ সম্মেলনে খলিল বলেন, “আমি কথা দিয়েছিলাম রোজায় ৫৯৫ টাকায় মাংস বিক্রি করব। পরে গরুর দাম বেশি পড়ায় আমিও মাংসের দাম বাড়িয়েছিলাম, তাতে নানা প্রতিক্রিয়া এসেছে। এখন আগের কথায় ফিরে গেলাম। ২০ রোজা পর্যন্ত আগের দামেই মাংস বিক্রি করব।”
সংবাদ সম্মেলনে খলিলুর রহমানের পাশাপাশি মিরপুরের মোহাম্মদ উজ্জ্বল ও পুরান ঢাকার নয়ন আহমেদ উপস্থিত ছিলেন। তারাও সরকারের বেঁধে দেওয়া দরের চেয়ে কমে মাংস বিক্রির প্রতিশ্রুতি দেন। কৃষি বিপণন অধিদপ্তর গরুর মাংসের ‘যৌক্তিক মূল্য’ নির্ধারণ করেছে প্রতি কেজি ৬৬৪ টাকা।
গরুর মাংসের বিক্রেতাদের ব্যবসার প্রচারণার জন্য কিংবা তাদের সংবাদ সম্মেলনে আসার জন্য কোনও চাপ দেওয়া হয়েছে কিনা জানতে চাইলে ভোক্তা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এ এইচ এম সফিকুজ্জামান বলেন, “এই ব্যবসায়ীরা গরুর মাংসের বাজারে বড় পরিবর্তন নিয়ে এসেছেন। তবে এখন নানামুখী চ্যালেঞ্জের মধ্য দিয়ে যাচ্ছেন। আমরা তাদের কথা শুনতে চেয়েছি। মাংসের দাম তারা নিজেরাই নির্ধারণ করবেন। ব্যবসা তাদের, লাভ-লোকসানও তাদের।”
তিনি বলেন, “আমাদের পক্ষ থেকে সব ব্যবসায়ীর জন্য বার্তা স্পষ্ট— কৃষি বিপণনের নির্ধারিত দামের মধ্যে থেকে মাংস বিক্রি করুন। এই তিন ব্যবসায়ী পারলে, এটা সবার পক্ষে সম্ভব। এসব ব্যবসায়ী যেভাবে ইতিবাচক মানসিকতা নিয়ে এগিয়ে এসেছেন, সব ব্যবসায়ীকে এভাবে এগিয়ে আসতে হবে। তাহলে বাজারে স্বস্তি আসবে।”
গত নভেম্বরে গরুর মাংসের কেজি ৮০০ টাকা বা তারও বেশি ছিল বেশিরভাগ বাজারে। এই চড়া দামের মাঝে ১৯ নভেম্বর ‘খলিল গোস্ত বিতান’ ৫৯৫ টাকা দরে গরুর মাংস বেচতে শুরু করে। এর প্রভাবে বিভিন্ন স্থানে কমতে থাকে দাম।
৭ ডিসেম্বর মাংস ব্যবসায়ী সমিতি গরুর মাংসের দাম নির্ধারণ করে দেয় প্রতি কেজি ৬৫০ টাকা। তবে জানুয়ারির দ্বিতীয় সপ্তাহে ঢালাওভাবে গরুর মাংস ৭০০ টাকায় বিক্রি শুরু হলেও খলিলের দোকানে ৫৯৫ টাকাই ছিল গরুর মাংসের দাম। এর কয়েকদিন পর বাধ্য হয়ে দাম বাড়িয়েছিলেন ৫৫ টাকা।
রোজার আগ পর্যন্ত ৬৫০ টাকা দরেই মাংস বিক্রি করেন খলিল, যাকে মানুষ চেনে ‘খলিল কসাই’ নামে। তবে রোজার শুরুতে দাম আবার ৫৯৫ টাকায় নামিয়ে আনেন তিনি।
গত ২৬ জানুয়ারি সকাল সন্ধ্যাকে তিনি জানিয়েছিলেন, বাজার বুঝতে গত নভেম্বরে তিন দিনের জন্য গরুর মাংসের দাম কমানোর সিদ্ধান্ত নেন। ৮০০ টাকা থেকে এক লাফে ৫৯৫ টাকা কেজি।
তার এই সিদ্ধান্ত রীতিমতো ঝড় তোলে। কম দামে মাংস কিনতে প্রতিদিন খলিলের দোকানে ক্রেতাদের ভিড় জমতে থাকে। গণমাধ্যমের পাশাপাশি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এই ঘটনা ব্যাপক সাড়া ফেলে।
খলিলের দেখাদেখি অন্যান্য এলাকার মাংস বিক্রেতাদের মধ্যেও গরুর মাংসের দাম কমানোর প্রবণতা দেখা যায়। একই সঙ্গে সুপারশপগুলোতেও ছাড়কৃত মূল্যে গরুর মাংস বিক্রি হতে দেখা যায়।
এরই মাঝে গত ১৮ জানুয়ারি খলিলুর রহমানকে ফোন করে ২৫ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে কম দামে মাংস বিক্রি না করতে বলে হুমকি দেওয়া হয়। তা না হলে দুই দিনের মধ্যে দুই ছেলেসহ তাকে গুলি করে হত্যার হুমকি দেওয়া হয়।
খলিলুর রহমানের কাছে চাঁদা দাবি ও পরিবারের সদস্যসহ হত্যার হুমকি দেওয়া দুইজনকে গত ২৮ জানুয়ারি দুইজনকে গ্রেপ্তার করা হয়।