আর্চারিতে ভবিষ্যত দেখতে না পেয়ে যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমিয়েছেন এসএ গেমসের সোনাজয়ী আর্চার হাকিম আহমেদ রুবেল। ২০১৯ সালের এসএ গেমসে ছেলেদের রিকার্ভ দলগত ইভেন্টে রোমান সানা, তামিমুল ইসলামের সঙ্গে সোনা জয়ে বড় ভূমিকা ছিল হাকিম আহমেদ রুবেলের।
মঙ্গলবার যুক্তরাষ্ট্রে পৌঁছানোর পর এই প্রতিবেদককে ফোন করে রুবেল নিজেই নিশ্চিত করেছেন দেশ ছেড়ে চলে যাওয়ার এই তথ্য।
২০১৬ সাল থেকে টানা জাতীয় দলে খেলছেন বিকেএসপির সাবেক আর্চার রুবেল। বর্তমানে রিকার্ভ পুরুষ ইভেন্টে তার বিশ্ব র্যাঙ্কিং ৪৭। রুবেল অনেক আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েছেন বাংলাদেশের জার্সিতে।
সমৃদ্ধ প্রোফাইল রুবেলের
এর মধ্যে বিশ্ব আর্চারি চ্যাম্পিয়নশিপে খেলেছেন ৪ বার। বিশ্বকাপের স্টেজ পর্যায়ে খেলেছেন ১০ বার। সর্বশেষ ২০২২ সালে চীনের হাংজু এশিয়ান গেমসে অংশ নেন রুবেল। এশিয়ান আউটডোর চ্যাম্পিয়নশিপে ৫ বার অংশ নিয়ে ২০২১ সালে দলগত ইভেন্টে ১টি রুপা ও ১টি বোঞ্জ পদক জিতেছেন। এশিয়ান গ্রাঁ প্রি সার্কিটে ৮ বারের অংশগ্রহণে প্রত্যেকবারই পদক জিতেছেন।
এর মধ্যে ২০২৩ সালে দলগত পর্যায়ে ১ বার সোনার পদক জেতেন। এছাড়া ২০২২ সালে ব্যক্তিগত ইভেন্টে ১টি রুপা জেতেন। আর ২০১৯, ২০২২ ও ২০২৪ সালে দলগত ইভেন্টে ১টি করে রুপা জেতেন। তার ব্রোঞ্জ পদকও আছে ৩টি- ২০২৩ সালে ব্যক্তিগত ইভেন্টে ১টি, ২০১৯ ও ২০২৩ সালে দলগত ইভেন্টে ২টি ব্রোঞ্জ জেতেন। এছাড়া এশিয়া কাপ ও এশিয়ান আর্চারি চ্যাম্পিয়নশিপেও অংশ নিয়েছেন রুবেল। ২০২১ সালে ঢাকায় অনুষ্ঠিত এশিয়ান আর্চারির রিকার্ভ দলগত ইভেন্টে জেতেন ব্রোঞ্জ। দিয়া সিদ্দিকীর সঙ্গে জুটি গড়ে মিশ্র দলগত ইভেন্টে জেতেন রুপা।
বাধ্য হয়ে দেশ ছেড়েছেন
হঠাৎ কেন খেলা ছেড়ে যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমালেন? এমন প্রশ্নে রুবেল সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, “অনেক দিন ধরেই আমি আর্চারি ছেড়ে দেওয়ার কথা ভাবছিলাম। এই দেশে আর্চারি খেলে কোনও ভবিষ্যত নেই। মূল্যায়ন নেই। পদক জিতলেও সেভাবে মূল্যায়ন করা হয় না। তাছাড়া দেশের সার্বিক পরিস্থিতিতে আবার কবে খেলাধুলা মাঠে গড়াবে সেটাও বুঝতে পারছিলাম না। সব মিলিয়ে এই সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয়েছি। খেলা ছাড়লেও আর্চারি ফেডারেশনের প্রতি কৃতজ্ঞতার কমতি নেই। কারণ আর্চারির কারণেই আমি এই অবস্থানে আসতে পেরেছি।”
যেভাবে পেলেন যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা
এটা সত্যি, আর্চারির সুবাদেই রুবেল যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা পেয়েছেন। রুবেল ২০২১ সালের নভেম্বরে বিশ্ব আর্চারি চ্যাম্পিয়নশিপে অংশ নিতে বাংলাদেশ জাতীয় দলের সঙ্গে গিয়েছিলেন যুক্তরাষ্ট্রে। সেই সুবাদে তার পাসপোর্টে ৫ বছরের যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা লাগানো ছিল। সুবাদে যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়া-আসার ব্যাপারে কোনও সমস্যা নেই রুবেলের।
জাতীয় দলের আরেক আর্চার অসীম কুমারও ২০২৩ সালের জানুয়ারি মাসে খেলা ছেড়ে চলে যান যুক্তরাষ্ট্রে। অসীম এরপর চলতি বছর মার্চ মাসে সে দেশে থাকার আনুষ্ঠানিক অনুমতি পান। যুক্তরাষ্ট্রের গ্রিননকার্ডের জন্য এবার রুবেলও আবেদন করবেন, “এখানে অসীম ভাই আছেন। আমি কোনও একটা কাজের যোগাড় করে নেব। পাশাপাশি গ্রিনকার্ডেরও আবেদন করব। ইনশাল্লাহ দ্রুতই গ্রিন কার্ড পেয়ে যাব আমি।”
এমনিতেই দেশের আর্চারির পাইপলাইনের অবস্থায় ভয়াবহ। রোমান সানা নিষেধাজ্ঞা পেরিয়ে ফিরলেও আগের ফর্মে নেই। অন্য আর্চারদেরও পারফরম্যান্স বিশ্বমানের নয়। রোমান পরবর্তী সময়ে রুবেলকেই তাই এক নম্বর আর্চার হিসেবে দেখছিল ফেডারেশন।
জানেন না মার্টিন ফ্রেডরিখ
আর্চারি ছেড়ে রুবেল যুক্তরাষ্ট্রে চলে গেছেন। অখচ এই খবর জানা নেই জাতীয় দলের কোচ মার্টিন ফ্রেডরিখের। প্রশ্নটা করতেই যেন আকাশ থেকে পড়লেন, “রুবেল যুক্তরাষ্ট্র চলে গেছেন কিনা সেটা আমি জানি না।” তবে এমন আর্চারের দেশ ছাড়ায় নিশ্চয় সেটার প্রভাব পড়বে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায়। জার্মান কোচ ফ্রেডরিখও সেটা মেনে নিলেন, “অবশ্যই সে বাংলাদেশের এক নম্বর আর্চার। গত অলিম্পিকে দুর্ভাগ্যবশত কোটা প্লেস পায়নি হাকিম। কিন্তু বিশ্বকাপে সে সেরা দশ আর্চারের মধ্যে ছিল। যেহেতু আমি জানি না, সত্যি সে চলে গেছে কিনা তাই এই বিষয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাই না। তবে ওর মতো আর্চারকে না পেলে অবশ্যই সেটার প্রভাব পড়বে জাতীয় দলের খেলায়।”
যা বলছে ফেডারেশন
আর্চারি ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক কাজী রাজীব উদ্দীন চপলও জানেন না রুবেলের যুক্তরাষ্ট্রের পাড়ি জমানোর ঘটনা, “আমি যতদূর জানি সে আমাদের কাছ থেকে ২৮ সেপ্টেম্বর ছুটি নিয়েছে। বলে গেছে তার দাদী মারা গেছে এবং বাবার অপারেশন করাবে। কিন্তু সে যুক্তরাষ্ট্রে এভাবে চলে গেলে আমরা তো আটকাতে পারব না। সে তো আসলে ভিসা নিয়েই গেছে।”
যদিও রুবেলের বিকল্প দ্রুতই তৈরি করে ফেলবেন মার্টিন ফ্রেডরিখ, এমনটাই আশা কাজী রাজীব উদ্দীনের, “সে আমাদের জানিয়ে গেলে খুশি হতাম। যেমন অসীম চলে গেছে, সেটা জানিয়ে গেছে। খেলোয়াড় তৈরি হয়ে যাবে। মার্টিন ক্যান ডু এভরিথিং। ও এমন একজন কোচ, সে সব কিছু জানে। সেরা খেলোয়াড় তৈরি করতে পারে।”