Beta
শুক্রবার, ৪ অক্টোবর, ২০২৪
Beta
শুক্রবার, ৪ অক্টোবর, ২০২৪

শিক্ষার্থীদের ৯ দফা মেনে নেওয়ার দাবি ‘ক্ষুব্ধ নারীসমাজের’

khubdho narisomaj
Picture of সকাল সন্ধ্যা প্রতিবেদন

সকাল সন্ধ্যা প্রতিবেদন

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ৯ দফা মেনে নেওয়ার দাবি জানিয়েছে ‘ক্ষুব্ধ নারীসমাজ’। বুধবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে সংবাদ সম্মেলন করে এ দাবি জানানো হয় নতুন এই প্ল্যাটফর্ম থেকে।

বিভিন্ন নারী সংগঠনের প্রতিনিধি, লেখক, শিল্পী, অভিনেত্রী ও পেশাজীবীদের অংশগ্রহণে গড়ে উঠেছে এই প্ল্যাটফর্ম। তারা বলছেন, দেশের ‘বর্তমান অবস্থায়’ নারীদের ক্ষোভ জানানোর জন্য এবং বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সঙ্গে সংহতি জানাতে এই প্ল্যাটফর্ম গঠন করা হয়েছে।

‘সকল লাশের হিসাব করো, গ্রেপ্তার-নির্যাতন বন্ধ করো’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলন সঞ্চালনায় ছিলেন প্রাবন্ধিক ও মানবাধিকার কর্মী ফরিদা আখতার। লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন চলচ্চিত্র নির্মাতা ঋতু সাত্তার।

বক্তব্য রাখেন রেহনুমা আহমেদ, তাসলিমা আখতার, মাহা মির্জা, বহ্নিশিখা জামালী, শিরিন হক, শারমিন মোর্শেদ, জান্নাতুল মাওয়া, বিথী ঘোষ ও কৃষ্ণকলি।

সংবাদ সম্মেলনে ‘ক্ষুব্ধ নারীসমাজ’ এর পক্ষ থেকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ৯ দফা মেনে নেওয়ার পাশাপাশি আরও পাঁচটি দাবি জানানো হয়।

সেগুলো হলো- আটক ছাত্র-ছাত্রীদের নিঃশর্ত মুক্তি, পুলিশের গুলিতে হত্যার তদন্ত, কারফিউ প্রত্যাহার, বিজিবি ও সেনাবাহিনী তুলে নেওয়া, সাধারণ মানুষের জীবনের নিরাপত্তা ও সাধারণ ছাত্র-ছাত্রীদের ‘বিভিন্ন সংস্থার মাধ্যমে হুমকি দেওয়া’ বন্ধ করা।

লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতি খুব উদ্বেগজনক। দেশের মানুষের বুকে রক্ত ঝরছে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কোটা সংস্কারের ন্যায্য ও যৌক্তিক দাবি আদায়ের আন্দোলনে গত ১৭ জুলাই থেকে আজ পর্যন্ত যেভাবে পুলিশ, বিজিবি আর সেনাবাহিনী দিয়ে নিরস্ত্র মানুষের ওপর সশস্ত্র আক্রমণ করে মানুষ খুন করা হয়েছে তা নজিরবিহীন।

সরকার আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পাশাপাশি ছাত্রলীগ, যুবলীগ, মহিলা লীগসহ আওয়ামী লীগের অঙ্গ সংগঠনের কর্মীদের দিয়ে জনগণকে মেরেছে। নারী শিক্ষার্থীদের ওপর চড়াও হয়েছে, এমনকি নারী সংগঠনের পক্ষ থেকে সংহতি প্রকাশ করতে গেলেও তাদের ওপর আক্রমণ করা হচ্ছে।

বিগত কয়েকদিনে যে নাশকতামূলক কার্যকলাপ হয়েছে তার দায় সরকার নিতে অস্বীকার করছে। সারাদেশে বিশেষ করে ঢাকা শহরে পুলিশ, বিজিবি ও সেনা মোতায়েন করে একটা যুদ্ধ অবস্থা সৃষ্টি করা হয়েছে।

বক্তারা বলেন, আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে গেলে সেখানেও তাদের ওপর আক্রমণ করা হচ্ছে। কিংবা ধরে নিয়ে যাচ্ছে। এমন ঘটনা নজিরবিহীন। কারফিউ জারি করে দেখামাত্র গুলির নির্দেশ দিয়ে জনজীবনে আতঙ্ক সৃষ্টি করা হচ্ছে।

“আমাদের প্রশ্ন- আমরা কি গাজা, কাশ্মীর বা সিরিয়ায় আছি”, বলা হয়েছে লিখিত বক্তব্যে।

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, এ পর্যন্ত সংবাদমাধ্যমে মৃতের সংখ্যা জানা গেছে কমপক্ষে ২১০। অন্যান্য সূত্র থেকে মৃতের সংখ্যা আরও বেশি বলে জানা যায়। তাছাড়া হাসপাতালে গুরুতর আহতদের অনেকে মারা যাচ্ছে প্রায় প্রতিদিন। পঙ্গুত্বের শিকার হয়েছে শত শত।

যারা মারা গেছে তাদের মধ্যে পত্রিকা মারফত ১৫০ জনের বিস্তারিত তথ্যে জানা যায় ১১৩ জন বা ৭৫% শিশু, কিশোর ও তরুণ, যাদের বয়স মাত্র ১৮-২৯ বছর। পুলিশের নির্বিচার গুলির শিকার হয়েছে দিনমজুর, রিকশা-ভ্যান চালকসহ সাধারণ মানুষ।

ঘরের মধ্যে থেকেও কিংবা ছাদের খেলতে গিয়েও শিশুরা রক্ষা পায়নি। অনেক নারী শিক্ষার্থীও আহত হয়েছে এবং হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছে। নিহতদের তালিকায়ও নারী শিক্ষার্থীর নাম পাওয়া যাচ্ছে, যেমন মাইলস্টোন কলেজের নাইমা সুলতানা (১৫)।

বক্তারা বলেন, আন্দোলনকারীরা কোনও অপরাধমূলক কাজ করেনি। তারা তাদের দাবি জানিয়েছে সংগঠিতভাবে। তারা এ দেশের ভবিষ্যত। অথচ আন্দোলনে অংশগ্রহণ করার কারণে তাদের বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।

এলাকায় এলাকায় ব্লক রেইড দেওয়া হচ্ছে। গণহারে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। গ্রেপ্তারের পর রিমান্ডের নামে চরম নির্যাতন করা হচ্ছে। অনেককে ধরে নিয়ে যাওয়ার পর ২৪ ঘণ্টা পার হলেও খবর পাওয়া যাচ্ছে না।

লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, “আমরা অনেক ছাত্রদের বাড়ি থেকে নিয়ে যাওয়ার পর তাদের খবর না পাওয়ায় উদ্বিগ্ন এবং উৎকণ্ঠিত। তাদের অবিলম্বে প্রকাশ্যে আনা হোক। এভাবে তাদের গুম করে দিয়ে সরকার ভয়ানকভাবে মানবাধিকার লঙ্ঘন করছে।”

‘ক্ষুব্ধ নারীসমাজ’ বলছে, সরকার দেশের অর্থনীতিকে ধ্বংস করেছে, দ্রব্যমূল্য ও মূল্যস্ফীতি কারণে মানুষের জীবন অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে। গণতন্ত্রকে ধ্বংস করা হয়েছে। মানুষের বাক স্বাধীনতা ছিনিয়ে নিয়েছে এবং ফ্যাসিস্ট শাসন ব্যবস্থায় দেশ চলছে।

লিখিত বক্তব্যে তারা আরও বলেন, বাংলাদেশের মানুষ স্বাধীনতার জন্যে জীবন দিয়েছে। অথচ এই স্বাধীন বাংলাদেশে মানুষ নিরাপদ নয়। নিজেদের অধিকারের জন্য লড়তে গিয়ে প্রাণ দিতে হচ্ছে।

“এ পরিস্থিতিতে আমরা নারীসমাজ ক্ষুব্ধ হয়েছি। আমরা বৈষম্যবিরোধী ছাত্রদের আন্দোলনের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করছি। এই আন্দোলনে যারা নিহত ও আহত হয়েছেন তাদের পরিবারের প্রতি আমাদের সমবেদনা জানাচ্ছি।”

তারা বলেন, সরকার বিষয়টি অনুধাবন করতে ব্যর্থ হচ্ছে যে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্রতি সারাদেশের কোটি কোটি মানুষের সমর্থন রয়েছে। এই ব্যর্থতার কারণে তারা ক্রমাগতভাবে আরও গণবিরোধী পদক্ষেপ নিচ্ছে এবং গুলির ভাষায় কথা বলছে।

“আমরা এ অবস্থার অবসান চাই। সকল লাশের হিসাব করতে হবে, গণগ্রেপ্তার ও নির্যাতন বন্ধ করতে হবে। স্বাধীন দেশে স্বাধীনভাবে বাঁচার পরিবেশ তৈরি করতে হবে।”

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

ad

সর্বাধিক পঠিত