বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকে ‘মার্চ ফর জাস্টিস’ কর্মসূচি পালনের সময়ে খুলনা, বরিশাল ও সিলেটে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পুলিশের পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে।
বুধবার বেলা ১১টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত এসব ঘটনা ঘটে। এসময় কোথাও পুলিশ লাঠিচার্জ করে তো কোথাও ছোড়ে টিয়ারশেল। দুই পক্ষের মধ্যে ইট-পাটকেল ছোড়ার পাশাপাশি পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনাও ঘটেছে।
খুলনা
খুলনায় একাংশের সমন্বয়কদের কর্মসূচি প্রত্যাহারের মধ্যেই বুধবার সকালে থেকে মার্চ ফর জাস্টিস কর্মসূচি পালনের জন্য পথে নামে শিক্ষার্থীদের অন্য অংশ।
তাদের ছত্রভঙ্গ করতে টিয়ারশেল ছোড়ে পুলিশ, কয়েকজনকে আটকও করে। আন্দোলনকারীরাও রাস্তায় আগুন জ্বালিয়ে বিক্ষোভ করে, পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল ছোড়ে।
নগরীর ময়লাপোতা মোড়, রয়্যাল মোড়, সাত রাস্তার মোড়, পিটিআই মোড়, শান্তিধাম মোড়সহ বেশ কিছু এলাকায় চলে সংঘর্ষ। এ সময় গণমাধ্যম কর্মীসহ কয়েকজন আহত হয়।
এর আগে সকাল থেকেই নগরীর বিভিন্ন পয়েন্ট থেকে শিক্ষার্থীদের আটক করছিল পুলিশ। তখন খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের ডেপুটি পুলিশ কমিশনার তাজুল ইসলাম বলেছিলেন, সন্দেহভাজন হিসেবে ছাত্র-ছাত্রীদের আটক করে থানায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। পরে তাদের অভিভাবক ডেকে ছেড়ে দেওয়া হবে।
তবে কতজন আটক হয়েছে তা জানায়নি পুলিশ।
বরিশাল
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নয় দফা দাবিতে বরিশালে সাধারণ শিক্ষার্থীদের কর্মসূচিতে পুলিশ লাঠিচার্জ করেছে। এতে সাংবাদিকসহ অন্তত ৫০ জন আহত হয়।
বেলা ১১টা থেকে নগরীর সদর রোড ও ফজলুল হক এভিনিউ এলাকায় এসব ঘটনা ঘটে। এসব ঘটনায় ছাত্রীসহ ১২ জনকে হেফাজতে নিয়েছে পুলিশ।
বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দলের (বাসদ) বরিশাল জেলার সমন্বয়ক মনিষা চক্রবর্তী জানান, পুলিশের লাঠিপেটায় অন্তত ১০-১৫ জন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। তিনি এ ঘটনা নিন্দা জানানোর পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের মুক্তি দাবি করেন।
বরিশাল মহানগর উপ-পুলিশ কমিশনার এসএম তানভীর আরাফাত বলেন, “বিরোধী ছাত্রসংগঠনের কিছু নেতা রাস্তা অবরোধ করেছিল। কোর্ট একটি গুরুত্বপূর্ন স্থাপনা। এটা অবরোধ করেছিল। তারা পুলিশের উপর হামলার চেষ্টা করে, ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে, গাড়ি ভাংচুরের চেষ্টা করে।
“পরে আমরা আইনগত ব্যবস্থা নিয়ে তাদের উঠিয়ে দিয়েছি। এখানে বেশ কিছু শিবিরের সদস্য ছিল। তাদেরকে আমরা আটক করতে সমর্থ হয়েছি।”
পরিস্থিতি এখন নিয়ন্ত্রণে রয়েছে বলেও জানান তিনি।
তবে হামলার শিকার শিক্ষার্থী মৌসুমী বলেন, “আমি শিবির করি না। আমি যশোর ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী। পুরুষ পুলিশরা এসে আমাদের ইচ্ছেমতো পিটিয়েছে। কাউকে বাদ দেয়নি। সবাইকে মেরেছে, লাঠিপেটা করেছে।”
পুলিশের সঙ্গে শিক্ষার্থদের পাল্টাপাল্টি ধাওয়া ও লাঠিপেটার ছবি তুলতে গিয়ে আহত হয়েছেন দৈনিক যুগান্তরের আলোকচিত্রী শামীম আহমেদ, যমুনা টিভির ক্যামেরাপারসন হৃদয়সহ অন্তত ৫ সাংবাদিক।
সিলেট
সিলেটে বৈষম্যবিরেধী ছাত্র আন্দোলনের ‘মার্চ ফর জাস্টিস’ কর্মসূচির বিক্ষোভ মিছিল ছত্রভঙ্গ করে দিয়েছে পুলিশ। এসময় শিক্ষার্থীদের ওপর টিয়ারশেল নিক্ষেপ করা হয়।
দুপুরে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ‘মার্চ ফর জাস্টিস’ লেখা ব্যানার নিয়ে মিছিল বের করে সিলেট জেলা ও দায়রা জজ আদালতের দিকে রওনা দেয়। মিছিলটি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটক থেকে প্রায় দুই কিলোমিটার পথ পেরোতেই সুবিদবাজার পয়েন্টে পুলিশি বাধায় পড়ে।
এসময় শিক্ষার্থীরা পুলিশের সঙ্গে বাকবিতণ্ডায় জড়ায়। ওই বাধা অতিক্রম করে কিছুদূর পেরোতেই ব্লুবার্ড স্কুল অ্যান্ড কলেজের সামনে আবারও বাধা দেয় পুলিশ।
এসময় শিক্ষার্থীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল ছুড়তে শুরু করে। পুলিশও তাদের ছত্রভঙ্গ করতে কাঁদানে গ্যাস ছোড়ে।
এর আগে বেলা ১১টার দিকে শিক্ষার্থীরা পূর্বঘোষিত ‘কর্মসূচির অংশ হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকে জড়ো হন। সেখানে প্রথমে ফটকের সামনে সিলেট-সুনামগঞ্জ সড়কে পুলিশ তাদের দাঁড়াতে না দিলেও ফটকের অদূরে পদচারী–সেতুর নিচুর নিচে দাঁড়িয়ে শিক্ষার্থীরা স্লোগান দিতে থাকেন।
কিছুক্ষণ পর শিক্ষার্থীরা বাধা উপেক্ষা করে প্রধান ফটকে অবস্থান নেন। পরে নগরের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা জড়ো হলে ঘন্টাখানেক পর তারা বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে নগরের আদালত প্রাঙ্গণের দিকে রওয়ানা হন।
বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সমন্বয়ক আসাদুল্লাহ গালিব সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, “আমাদের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে পুলিশ সাউন্ড গ্রেনেড ও টিয়ার শেল নিক্ষেপ করে। এতে আমাদের ৪০/৫০ জন আহত হয়। পুলিশ টার্গেট করে মেয়েদের ওপর টিয়ার শেল ছুড়েছে।”
তিনি নিজেও টিয়ারশেলের আঘাতে আহত বলে জানান গালিব।
এ বিষয়ে সিলেটের অতিরিক্ত উপ পুলিশ কমিশনার (মিডিয়া) সাইফুল ইসলাম বলেন, “সুবিদবাজার এলাকায় শিক্ষার্থীরা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করলে আমরা তাদের ছত্রভঙ্গ করে দিই। কোনও হতাহতের ঘটনা ঘটেনি। কাউকে আটকও করা হয়নি।”
অন্যদিকে দেশব্যাপী ছাত্র হত্যা,নিপীড়ন ও হয়রানির ঘটনার প্রতিবাদে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে প্রতিবাদ র্যালি শেষে শাবিপ্রবির প্রধান ফটকে সমাবেশ করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষকরা।