নিখোঁজের ২২ দিনেও সন্ধান মেলেনি কক্সবাজারের নাফ নদী থেকে ‘অপহৃত’ চাকমা সম্প্রদায়ের দুই যুবকের।
পরিবারের ধারণা, মিয়ানমারের ভেতরে চলমান সংঘাতের জেরে সীমান্তে সক্রিয় হয়ে ওঠা রোহিঙ্গাদের কোনও সন্ত্রাসী গোষ্ঠী তাদের অপহরণ করেছে। তবে এখন পর্যন্ত কোনও ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর পক্ষ থেকে মুক্তিপণ দাবি বা কোনও ধরণের যোগাযোগ করা হয়নি।
নিখোঁজ দুই যুবকের জন্য আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তাদের পরিবারের সদস্যরা এসব কথা জানান। শুক্রবার বিকালে কক্সবাজার প্রেসক্লাবে অপহৃতদের পরিবারের পক্ষে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন টেকনাফের আদিবাসী নেতা মণি স্বপন চাকমা।
গত ১৬ মে টেকনাফ উপজেলার হোয়াইক্যংয়ে নাফ নদীতে কাঁকড়া আহরণ করতে গিয়ে অপহৃত হন ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী চাকমা সম্প্রদায়ের ২ জন। নিখোঁজরা হলেন, টেকনাফের হোয়াইক্যং ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের লম্বাঘোনা চাকমা পল্লীর বাসিন্দা মৃত উচামং চাকমার ছেলে ছৈলামং চাকমা (৩০) এবং মৃত মংতাইন চিং তজ্ঞঙ্গার ছেলে ক্যামংথোএ তজ্ঞঙ্গা (১৯)।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন নিখোঁজ ছৈলামং চাকমার মা ছুচিংছা চাকমা ও স্ত্রী চিনু চাকমা এবং ক্যামংথোএ তজ্ঞঙ্গার মা মাতাইন ছিং তজ্ঞঙ্গা ও স্ত্রী ছিংমালা তজ্ঞঙ্গা।
মণি স্বপন চাকমা বলেন, গত ১৬ মে সকাল ৭ টার দিকে নাফ নদীতে অন্য জেলেদের সঙ্গে কাঁকড়া আহরণ করতে যান তারা দুজন। কিন্তু সন্ধ্যাতেও ঘরে না ফিরলে স্বজনরা দুশ্চিন্তায় পড়েন। তখন স্থানীয় অন্য জেলেরা জানায়, কয়েকজন ব্যক্তি অস্ত্রের মুখে দুই জনকে অপহরণ করে মিয়ানমারের অভ্যন্তরে নিয়ে গেছে। দীর্ঘ ৩ সপ্তাহেও একমাত্র উপার্জনক্ষম দুই যুবকের খোঁজ না পেয়ে উদ্বিগ্ন পরিবার। তারা কি জীবিত নাকি মৃত তাও নিশ্চিত নয়।
অপহৃতদের পরিবারের সদস্যদের ধারণার বরাতে আদিবাসীদের এ নেতা বলেন, “মিয়ানমারের ভেতরে গৃহযুদ্ধের জেরে সীমান্তে উদ্ভূদ পরিস্থিতিতে রোহিঙ্গাদের কোনও সন্ত্রাসী গোষ্ঠী তাদেরকে আটকে রেখেছে। তবে এখনো জিম্মি রাখা গোষ্ঠী বা ব্যক্তির পক্ষ থেকে মুক্তিপণের দাবি বা কোনও ধরনের যোগাযোগ করা হয়নি।”
নিখোঁজদের স্বজনরা ঘটনার পরদিনই টেকনাফ থানায় লিখিত অভিযোগ করেছেন বলে জানান মণি স্বপন। বিজিবি ও র্যাবকেও লিখিতভাবে জানানো হয়েছে। এছাড়াও গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর সংশ্লিষ্টদের এই বিষয়ে মৌখিকভাবে অবহিত করা হয়েছে।
নিখোঁজ যুবকদের পরিবারে দিন দিন উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা বাড়ছে জানিয়ে আদিবাসীদের এ নেতা জানান, প্রশাসনের কাছে বার বার ধর্না দেওয়া হলেও তাদের উদ্ধারে দৃশ্যমান কোনও পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়নি।
এ বিষয়ে টেকনাফে বিজিবি ২ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. মহিউদ্দীন আহমেদ জানিয়েছেন, এ বিষয়ে একটি লিখিত অভিযোগ পেয়ে বিষয়টি নিয়ে সংশ্লিষ্ট পর্যায়ে খোঁজ খবর নেয়ার পরও কোনও তথ্য পাওয়া যাচ্ছে না।
টেকনাফ থানার ওসি মুহাম্মদ ওসমান গণি জানান, একটি অভিযোগ থানায় জমা হয়েছে। বিষয়টি সীমান্ত এলাকায় হওয়ায় সংশ্লিষ্টদের অবহিত করা হয়েছে। সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলাপ আলোচনার পরও কোনও সুনিদিষ্ট তথ্য মিলছে না।
