নিজের বিশেষ ট্রেনে চেপে চীনের রাজধানী বেইজিংয়ে যাচ্ছেন উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উন। সোমবার দুপুরে রাজধানী পিয়ংইয়ং থেকে তাকে বহনকারী ট্রেনটি যাত্রা শুরু করেছে বলে দেশটির স্থানীয় মিডিয়া জানিয়েছে।
বলা হচ্ছে, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের অবসানের স্মরণে আয়োজিত সামরিক কুচকাওয়াজে অংশ নিতে তিনি বেইজিং যাচ্ছেন। একে বিরল এক বিদেশ সফর হিসেবে দেখা হচ্ছে। এর মধ্য দিয়ে একদিকে চীনের সঙ্গে, অন্যদিকে রাশিয়ার সঙ্গে তার সম্পর্ক ভিন্ন মাত্রা পাবে বলে মনে করছেন পর্যবেক্ষকরা।
দক্ষিণ কোরিয়ার সম্প্রচারমাধ্যম এসবিএস টিভি ও ইয়োনহাপ নিউজ জানিয়েছে, কিম বিশেষ ট্রেনে চীন যাচ্ছেন। ইয়োনহাপের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মঙ্গলবার তার বেইজিংয়ে পৌঁছানোর কথা। তবে এ তথ্যটি নামহীন এক সূত্রের বরাতে জানানো হয়েছে।
এই সফর কিমের জন্য বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ। কারণ ২০২৩ সালে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে বৈঠকের জন্য রাশিয়া সফরের পর এটিই তার প্রথম বিদেশ যাত্রা। পাশাপাশি ২০১৯ সালের জানুয়ারির পর এটিই তার প্রথম চীন সফর। বেইজিংয়ে তিনি চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিনের সঙ্গে দাঁড়িয়ে যুদ্ধ-পরবর্তী ৮০ বছর পূর্তি উপলক্ষে আয়োজিত সামরিক কুচকাওয়াজ প্রত্যক্ষ করবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।
বহু বছর ধরেই উত্তর কোরিয়ার প্রধান সহায়তার জায়গা হয়ে আছে চীন। যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রদের আরোপিত কঠোর নিষেধাজ্ঞার মাঝেও চীনের সমর্থনেই ভঙ্গুর অর্থনীতিকে টিকিয়ে রেখেছে পিয়ংইয়ং। তবে সাম্প্রতিক সময়ে কিম আরও ঘনিষ্ঠ হচ্ছেন রাশিয়ার প্রতি। যুক্তরাষ্ট্র ও দক্ষিণ কোরিয়ার কর্মকর্তারা বলছেন, ইউক্রেন যুদ্ধে সহায়তা দিতে মস্কোকে অস্ত্রশস্ত্র এবং সেনাসহ বিভিন্ন রকম সহায়তা পাঠিয়েছে পিয়ংইয়ং।
পুতিন ও শি’র পাশাপাশি কিমের উপস্থিতি মূলত বিশ্বকে বার্তা দেওয়ার জন্য। তারা দেখাতে চাইছেন যে, এই তিন নেতা এখন সম্পর্ককে আরও সুদৃঢ় করছেন এবং যুক্তরাষ্ট্র নেতৃত্বাধীন আন্তর্জাতিক শৃঙ্খলাকে চ্যালেঞ্জ জানাতে তারা প্রকাশ্য সমন্বয়ের পথে হাঁটতে ইচ্ছুক।
কিমের জন্যও সফরটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এটি উত্তর কোরিয়ার কূটনৈতিক অবস্থানকে আরও উঁচুতে তুলে ধরছে, যেখানে তিনি বিশ্বের দুই প্রভাবশালী নেতার পাশে দাঁড়াচ্ছেন।
কিম ও শি সর্বশেষ সরাসরি সাক্ষাৎ করেছিলেন ২০১৯ সালের জুনে। তখন চীনের প্রেসিডেন্ট পিয়ংইয়ং সফরে গিয়ে কোরীয় উপদ্বীপকে পরমাণুমুক্ত করার আহ্বান জানিয়েছিলেন। তার আগে মাত্র ১০ মাসের মধ্যে চারবার বেইজিং গিয়েছিলেন কিম ওয়াশিংটন ও সিউলের সঙ্গে সম্পর্ক পুনর্গঠনের প্রচেষ্টায় চীনের সমর্থন নিশ্চিত করতে।
বেইজিংয়ের উদ্দেশে রওনা দেওয়ার আগের দিন রবিবার কিম একটি নতুন ক্ষেপণাস্ত্র কারখানা পরিদর্শন করেছেন বলে সোমবার উত্তর কোরিয়ার রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম জানিয়েছে। বিশ্লেষকদের মতে, এটি ইঙ্গিত দেয় যে সফরের আগেই দেশটি তাদের অস্ত্র সক্ষমতা আরও এগিয়ে নেওয়ার বার্তা দিচ্ছে।
কিমের এই বিলাসবহুল ও বুলেটপ্রুফ ট্রেন উত্তর কোরিয়ার শাসক পরিবারের দীর্ঘদিনের ভ্রমণ মাধ্যম। তার বাবা ও দাদাও একইভাবে বিদেশ সফর করেছেন। বিমান চলাচলের মানে হলো উত্তর কোরিয়ার জাতীয় বিমানসংস্থার তুলনায় ট্রেনকেই তারা নিরাপদ ও মর্যাদাপূর্ণ যাত্রার মাধ্যম মনে করেন।
২০১৮ সালে সিঙ্গাপুরে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে প্রথম বৈঠকের সময় অবশ্য কিম চীনের সরবরাহ করা একটি বোয়িং ৭৪৭ বিমানে ভ্রমণ করেছিলেন। এরপর ২০১৯ সালে ভিয়েতনামের হ্যানয়ে ট্রাম্পের সঙ্গে শীর্ষ সম্মেলনের জন্য ৬০ ঘণ্টার ট্রেনযাত্রা করেছিলেন তিনি। দুই বছর আগে পুতিনের সঙ্গে বৈঠকের জন্য রাশিয়ায়ও গিয়েছিলেন এই বিশেষ ট্রেনে।
তথ্যসূত্র : ব্লুমবার্গ।



