সরকারের আমন্ত্রণে চারদিনের সফরে বাংলাদেশে আসছেন ভুটানের রাজা জিগমে খেসার নামগেল ওয়াংচুক। সফরে স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে অংশ নেবেন তিনি, যাবেন সাভারের স্মৃতিসৌধেও।
সোমবার সকালে ঢাকায় পৌঁছবেন ভুটানের রাজা। হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে তাকে স্বাগত জানাবেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। বিমানবন্দরে তাকে দেওয়া হবে গার্ড অব অনার।
রবিবার ভুটানের রাজার বাংলাদেশ সফর নিয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ সংক্রান্ত বিভিন্ন তথ্য জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ভুটানের রাজার সফরে নতুন করে তিনটি সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) সই হবে। এগুলো ভুটানের থিম্পুতে একটি বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিট প্রতিষ্ঠা, বাংলাদেশের কুড়িগ্রামে ভুটানের জন্য বিশেষায়িত অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠা এবং ভোক্তা সুরক্ষায় প্রযুক্তিগত সহযোগিতা বিষয়ক।
এছাড়া সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে সহযোগিতা সংক্রান্ত একটি চুক্তি আছে, যেটি নবায়ন করা হবে।
ভুটানের রাজার সফরসূচী সম্পর্কে হাছান মাহমুদ জানান, ভুটানের রাজা ২৫-২৮ মার্চ বাংলাদেশে থাকবেন। সফরে তিনি বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবসের অনুষ্ঠানে অংশ নেবেন।
প্রথম দিন রাজা জিগমে খেসার ধানমণ্ডির ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্মৃতি জাদুঘর পরিদর্শন এবং তার স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানাবেন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, “সফরকালে ভুটানের রাজা বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করবেন। প্রথম দিন আমি রাজার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করব। ২৬ মার্চ ভোরে সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধে মহান মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণ করবেন তিনি।”
ভুটানের রাজা পদ্মা সেতু পরিদর্শন করবেন জানিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, পাশাপাশি শেখ হাসিনা ন্যাশনাল ইনিস্টিটিউট অব বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি হাসপাতাল, নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজারে বাংলাদেশ স্পেশাল ইকোনমিক জোনও পরিদর্শন করবেন।
কুড়িগ্রামে ভুটানের বিশেষায়িত অর্থনৈতিক অঞ্চলটিও পরিদর্শন করবেন তিনি। এরপর সোনাহাট স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ ত্যাগ করবেন ভুটানের রাজা।
স্থলবন্দরে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) একটি দল তাকে গার্ড অব অনার দেবে। ভুটানের রাজাকে বিদায় জানাবেন নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী।
রাজার সফরে কোন বিষয়গুলো আলোচনা হবে তা তুলে ধরেন হাছান মাহমুদ। তিনি বলেন, “স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে সহযোগিতা, আইসিটি ও পর্যটন ক্ষেত্রে নিবিড়তর সহযোগিতার মতো বিষয়গুলো থাকবে। এছাড়া কানেক্টিভিটি বিষয়ক বিভিন্ন আঞ্চলিক ও উপ-আঞ্চলিক উদ্যোগে সমন্বিত সহযোগিতা, কুড়িগ্রামে বিশেষায়িত অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বৃদ্ধি, ট্রানজিট চুক্তি এবং অগ্রাধিকারমূলক বাণিজ্য চুক্তির বাস্তবায়নের মাধ্যমে বাণিজ্য বৃদ্ধি, বিদ্যুৎ খাতে ভারতকে সঙ্গে নিয়ে জলবিদ্যুৎ উৎপাদন ও বিনিময়ের ত্রিপক্ষীয় সহযোগিতার প্রস্তাব এবং স্বল্পন্নোত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে উত্তরণের ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবেলায় সহযোগিতা নিয়েও আলোচনা হবে।”
নতুন সরকার ক্ষমতা নেওয়ার পরে বাংলাদেশে এটিই প্রথম কোনও উচ্চ পর্যায়ের রাষ্ট্রীয় সফর উল্লেখ করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ফলে সফরটি তাৎপর্যপূর্ণ।
তিনি বলেন, “এ সফরে বিশেষায়িত অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে দেশে (বিশেষ করে উত্তরাঞ্চলে) ব্যবসা-বাণিজ্য, বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হবে। থিম্পুতে বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠা উদ্যোগের মাধ্যমে দক্ষিণ এশীয় অঞ্চলের বৃহত্তর কল্যাণ সাধন হবে। এছাড়া ভুটানের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য বৃদ্ধির সুযোগ, বিদ্যুৎ খাতে ত্রিপক্ষীয় সহযোগিতার চুক্তির মাধ্যমে বিদ্যুৎ সরবরাহ ও বিনিময়ের সুযোগ তৈরি হবে।”
এই সফর বাংলাদেশ-ভুটানের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে একটি মাইলফলক হয়ে থাকবে বলেও মনে করেন হাছান মাহমুদ।
ভুটানের রাজার জন্য উপহার
আগামী বছর থেকে ভুটানের শিক্ষার্থীদের জন্য বাংলাদেশের সরকারি মেডিকেল কলেজগুলোয় এমবিবিএস কোর্সে বরাদ্দ থাকা বার্ষিক আসন সংখ্যা বাড়াচ্ছে বাংলাদেশ।
ভুটানের রাজা জিগমে খেসার নামগেল ওয়াংচুকের বাংলাদেশ সফরের সম্মানে দেশটিকে এ উপহার দেবে সরকার। আগে বার্ষিক আসন সংখ্যা ছিল ২২, যা বাড়িয়ে করা হচ্ছে ৩০।
এছাড়া উপহার হিসেবে প্রতিবছর ভুটানের ফরেন সার্ভিস অফিসারদের জন্য বাংলাদেশ ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে প্রশিক্ষণের জন্য দুটি আসন বরাদ্দকরণ করা হবে। এর বাইরে বাংলাদেশ ফরেন সার্ভিস একাডেমি ভুটানে একটি কূটনৈতিক প্রশিক্ষণ কেন্দ্র প্রতিষ্ঠায় প্রয়োজনীয় কারিগরি সহযোগিতা দেবে।
