সশস্ত্র সংগঠন কুকি চিন ন্যাশনাল ফ্রন্টের (কেএনএফ) ভয়ে বান্দরবান জেলার রুমা ও থানচি উপজেলার গণপরিবহন চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে।
রবিবার সকাল থেকেই এই দুই উপজেলায় গণপরিবহন বন্ধ বলে জানিয়েছেন রুমা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও ইউপি চেয়ারম্যান শৈমং মারমা শৈবং।
গত ১৩ ফেব্রুয়ারি রুমা উপজেলায় কেএনএফ সদস্যদের গুলিতে রুমা সদর ইউনিয়নের এক যুবক আহত হন। এর প্রতিবাদে গত ১৪ ফেব্রুয়ারি নাগরিক সমাজের ব্যানারে কেএনএফের বিরুদ্ধে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ হয়েছিল।
এতে ক্ষুব্ধ কেএনএফ ১৮ ফেব্রুয়ারি থেকে রুমা, থানচি, রোয়াংছড়ি উপজেলায় চলাচলকারী গণপরিবহন ধর্মঘট পালনের নির্দেশ দেয়।
এরপর রবিবার সকালে রুমা উপজেলায় বাসের লাইনম্যানের দায়িত্বে থাকা লুপ্রু মারমা নিজ বাড়ি সদরঘাট থেকে রুমা বাজারে যাওয়ার সময় কেএনএফের মারধরের শিকার হন বলে জানান শৈমং মারমা।
এরপর নিরাপত্তাজনিত কারণে গণপরিবহণ চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয় বলে জানিয়েছেন বান্দরবান বাস মালিক সমিতির অফিস সহকারী মিলন দাস।
তিনি বলেন, বান্দরবান স্টেশন হতে সকালে যথারীতি বাসের টিকেট বিক্রি করলেও যাতায়াতের নিরাপত্তার কারণে সব টিকেট ফেরত নেওয়া হয়।
বান্দরবান-রোয়াংছড়ি-রুমা-থানচি মোটরযান পরিবহন মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. নুরুল আলম জানিয়েছেন, বান্দরবান থেকে বাঘমারা ও রোয়াংছড়ি বাস চলাচল স্বাভাবিক আছে। কিন্তু রুমা ও থানচি স্টেশন থেকে সকাল হতে কোনও বাস ছেড়ে আসেনি।
এর মধ্যে থানচিতে সীমান্ত সড়কের উপকরণ পরিবহনে থাকা একটি ট্রাকে আগুন দেওয়া হয় রবিবার বিকালে।
থানচি ফায়ার সার্ভিস স্টেশনের ফায়ার ফাইটার হৃদয় হোসেন জানান, বাকলাই ১১ কিলো এলাকায় ট্রাকটিকে আগুন দেওয়া হয়।
থানচি থানার ওসি মোহাম্মদ জসীম উদ্দীন বলেন, কেএনএফ সদস্যরা আগুন দেয় বলে তাদের ধারণা।
চেয়ারম্যান শৈমং মারমা বলেন, রবিবার সকালে বম সম্প্রদায় অধ্যুষিত সদরঘাট, রুমা সরকারি কলেজ এলাকা, পলিকা পাড়া, বেথেল পাড়া এলাকায় কেএনএফ সদস্যরা ফাঁকা গুলিবর্ষণ করেছে। আতঙ্কের কারণে দোকানপাটও খোলেনি।
রুমা থানার ওসি মো. শাহজাহান জানান, এসব ঘটনার পর আইন-শৃঙ্খলা-বাহিনীর টহল জোরদার করা হয়েছে।
রুমা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সৈয়দ মাহবুবুল হক জানান, জননিরাপত্তার জন্য উপজেলার গুরুত্বপূর্ণ সড়কে বিজিবি, সেনাবাহিনী এবং পুলিশের টহল দল কাজ করছে।
কুকি জনগোষ্ঠীর মধ্য থেকে গড়ে ওঠা সংগঠন কেএনএফ বছর খানেক আগে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর নজরে আসে। দলটি বম পার্টি নামে বেশি পরিচিত, এর নেতার নাম নাথান বম। দলটি রাঙ্গামাটি ও বান্দরবানের কয়েকটি উপজেলা নিয়ে বম রাজ্য প্রতিষ্ঠা করতে চায়। তাদের সশস্ত্র দল কুকি চিন ন্যাশনাল আর্মি।
কেএনএফের সঙ্গে আলোচনা করার জন্য ২০২২ সালের নভেম্বর মাসে বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ক্যশৈ হ্লার নেতৃত্বে একটি শান্তি প্রতিষ্ঠা কমিটি গঠন করা হয়েছিল।
সেই কমিটির মূখপাত্র ও বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদ সদস্য কাঞ্চন জয় তঞ্চঙ্গ্যা জানান, বর্তমান পরিস্থিতি ‘গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ’ করছেন তারা। পরিস্থিতি বিবেচনা করে কেএনএফের সঙ্গে আলোচনা করবেন তারা।
কেএনএফের সঙ্গে ইসলামী জঙ্গি গোষ্ঠীর যোগাযোগ গড়ে ওঠার কথাও গত বছর জানিয়েছিল র্যাব।