Beta
মঙ্গলবার, ১০ ডিসেম্বর, ২০২৪
Beta
মঙ্গলবার, ১০ ডিসেম্বর, ২০২৪
প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাফজয়ীদের সাক্ষাৎ

বার্সেলোনার বিপক্ষে ম্যাচ আয়োজনের অনুরোধ কৃষ্ণার

প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে নারী ফুটবলাররা
Picture of ক্রীড়া প্রতিবেদক

ক্রীড়া প্রতিবেদক

[publishpress_authors_box]

সামাজিক ব্যবসার ধারণা দিতে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ ইউনূস ২০১৬ সালে গিয়েছিলেন বার্সেলোনায়। তাঁকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল বিশ্বের অন্যতম সেরা ক্লাবটিতে। ন্যু ক্যাম্পে গিয়ে তাঁর নাম লেখা একটি বিশেষ জার্সি পরেছিলেন। বার্সেলোনার সঙ্গে ড. ইউনুসের সু সম্পর্কের কথা জানা বাংলাদেশ জাতীয় নারী দলের ফুটবলার কৃষ্ণা রানী সরকারের।  

শনিবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় সদ্য সাফ জয়ী বাংলাদেশ নারী ফুটবল দলের সবাই প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূসের সঙ্গে তাদের স্বপ্ন এবং তাদের দৈনন্দিন সংগ্রামের কথা ভাগাভাগি করেন।

সেখানেই জাতীয় দলের উইঙ্গার কৃষ্ণা রানী প্রধান উপদেষ্টাকে অনুরোধ করেন, এশিয়ার বাইরে তাদের জন্য একটি প্রীতি ম্যাচের ব্যবস্থা করতে। বিশেষ করে ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়ন্স লিগ বিজয়ী বার্সেলোনার বিপক্ষে খেলতে চান মেয়েরা।

প্রধান উপদেষ্টা তার উদ্বোধনী বক্তব্যে ফুটবলারদের উদ্দেশে বলেন, “এই সাফল্য অর্জনের জন্য আমি সমগ্র জাতির পক্ষ থেকে তোমাদের অভিনন্দন জানাই। জাতি তোমাদের কাছে কৃতজ্ঞ। আমাদের দেশের মানুষ সাফল্য চায়। তোমরা আমাদের সাফল্য এনে দিয়েছো।”

অধিনায়ক সাবিনা খাতুন তাদের সংবর্ধনা দেওয়ার জন্য প্রধান উপদেষ্টাকে ধন্যবাদ জানান এবং বলেন যে সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে যোগ দিতে পেরে তারা সম্মানিত বোধ করেছেন।

প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে কৃষ্ণা রানী সরকার।

তিনি বলেন, “অনেক বাধা অতিক্রম করে আমরা এই পর্যায়ে এসেছি। শুধু নারী ফুটবল দলই নয়, বাংলাদেশের নারীরা অনেক সংগ্রামের মুখোমুখি হয়।”

সাবিনার ফুটবল ক্যারিয়ার শুরু ২০০৯ সালে। এখনও দুর্দান্ত খেলে চলেছেন। তার আগে যারা ফুটবলকে ক্যারিয়ার হিসেবে নিয়েছিল সেই মেয়েদের খেলার প্রতি আগ্রহ ও নিবেদনের কথাও স্মরণ করেন তিনি।

সাবিনা বলেন যে তাদের মধ্যে অনেকেই দরিদ্র পরিবার থেকে উঠে এসেছেন এবং তাদের পরিবার চলে ফুটবলারদের পাঠানো টাকায়।

এমনিতেই মেয়েদের ফুটবলে বেতন কম। সেটাও অনিয়মিতভাবে দেয় বাফুফে। যে কারণে সাবিনা বলেন, “আমরা যা বেতন পাই সেটা দিয়ে চলা খুব কষ্ট হয়ে যায়।”

সতীর্থ মারিয়া মান্দার উঠে আসার গল্প বলতে গিয়ে আবেগ আপ্লুত হয়ে পড়েন সাবিনা।

ময়মনসিংহের বিখ্যাত কলসিন্দুর গ্রামের শুধু মারিয়া নয়, এই সাফে সব মিলিয়ে রয়েছে ছয় ফুটবলার- শিউলি আজিম, তহুরা খাতুন, শামসুন্নাহার সিনিয়র, শামসুন্নাহার জুনিয়র ও সানজিদা আক্তার।

মারিয়া ছোটবেলা বাবাকে হারিয়েছিল। মা অনেক কষ্টে তাকে ফুটবলার বানিয়েছেন। গ্রামের নেতাই নদী পার করে তাকে শহরে আসতে সহযোগিতা করতো তার মা। অনেক সময় বর্ষাকালে নদীতে খেয়া নৌকা ও মাঝি থাকতো না। যে কারণে গভীর রাতে মাঝিকে ডেকে আনতেন। সে সব সংগ্রামের গল্প শুনেছেন প্রধান উপদেষ্টা।

মাসুরা পারভীনের কথা শুনছেন প্রধান উপদেষ্টা।

উইঙ্গার কৃষ্ণা রানী সরকার ঢাকায় একটি করে ফ্লাট চেয়েছেন। মিডফিল্ডার মনিকা চাকমা খাগড়াছড়ির প্রত্যন্ত উপজেলা লক্ষ্মীছড়িতে বেড়ে উঠেছেন। সেখান থেকে তাদের ঢাকায় আসার অবর্ণণীয় কষ্টের কথা তুলে ধরেন কৃষ্ণা।

মিডফিল্ডার স্বপ্না রানী দিনাজপুর জেলায় তার জন্মস্থান রানীশংকৈল গ্রামের ফুটবল অবকাঠামোর অভাবের কথা বলেছেন। কিভাবে তারা শুধু একটা মাত্র বিস্কুট খেয়ে অনুশীলন করেন সে সব কথা বলেন প্রধান উপদেষ্টাকে।  

প্রধান উপদেষ্টা প্রত্যেক ফুটবলারের বক্তব্য ধৈর্য্য ধরে শুনেছেন। তাদের ব্যক্তিগত আশা এবং আকাঙ্ক্ষা, সংগ্রাম এবং দাবিগুলো আলাদা কাগজে লিখে রাখতে এবং সেগুলো তাকে জানাতে বলেন।

অধ্যাপক ইউনূস বলেন, “তোমাদের মনে যা আসে সেটা লিখতে দ্বিধা কোরো না। আমরা তোমাদের দাবি পূরণ করার চেষ্টা করব। এখন যদি কিছু সমস্যার সমাধান করা যায় তবে আমরা এখনই তা করব।”

প্রধান উপদেষ্টা চ্যাম্পিয়ন ফুটবলারদের দাবিগুলো মনোযোগ সহকারে শুনেছেন এবং অগ্রাধিকার ভিত্তিতে সেগুলো সমাধান করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।

অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বৃটিশ কোচ পিটার বাটলার ও ম্যানেজার মাহমুদা আক্তার। অন্যান্যের মধ্যে সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ, সুপ্রদীপ চাকমা, বিধান চন্দ্র রায়, নুরজাহান বেগম প্রমুখ।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত