অগুনতি মানুষের ভালোবাসা নিয়ে চলে গেলেন ঐতিহাসিক টংক আন্দোলন ও হাজং বিদ্রোহের অন্যতম মুখ কুমুদিনী হাজং।
শনিবার দুপুরে নেত্রকোনার দুর্গাপুর সীমান্তের বহেরাতলী গ্রামে নিজ বাড়িতে মৃত্যু হয় এই শতবর্ষী এই নারীর।
দীর্ঘদিন ধরেই বার্ধক্যজনিত রোগে ভুগছিলেন তিনি। আত্মীয়স্বজনদের উপস্থিতিতে রবিবার সকালে সোমেশ্বরী নদীর বিজয়পুর ঘাটে তার অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া হবে বলে পরিবারের সদস্যরা জানিয়েছেন।
বাংলাদেশের আন্দোলন সংগ্রামের ইতিহাসে কুমুদিনী হাজং একজন অবিস্মরণীয় ব্যক্তিত্ব। তাকে ঘিরেই টংক আন্দোলন নতুন মোড় নিয়েছিল, যার নেতৃত্বে ছিলেন কমিউনিস্ট নেতা মণি সিংহ।
সময়টা ১৯৪৬ সালের ৩১ জানুয়ারি। সেদিন টংক আন্দোলনের মাঠ পর্যায়ের নেতা কুমুদিনী হাজংয়ের স্বামী লংকেশ্বর হাজংকে খুঁজতে তার বাড়িতে গিয়েছিল ব্রিটিশ পুলিশ।
ইস্টার্ন ফ্রন্টিয়ার বাহিনীর সদস্যরা লংকেশ্বরকে না পেয়ে তার স্ত্রীকে ধরে বিরিশিরি সেনা ছাউনিতে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। এই সংবাদ হাজং অধ্যুষিত গ্রামগুলোতে ছড়িয়ে পড়লে শতাধিক হাজং নারী-পুরুষ লাঠি, কাস্তে, দা নিয়ে ঘিরে ধরে ব্রিটিশ পুলিশদের।
বিক্ষুব্ধ জনতা কুমুদিনীকে ছিনিয়ে নিতে চাইলে পুলিশ গুলি চালায়। এতে ঘটনাস্থলেই বেশ কয়েকজন হাজং নিহত হয়। এই ঘটনায় ক্ষিপ্ত জনতা পুলিশের ওপর হামলা চালালে এতে দুই পুলিশ নিহত হয়। বাকি পুলিশ সদস্যরা সেদিন পালিয়ে বাঁচে।
ওই ঘটনার পর কুমুদিনী হাজং হয়ে ওঠেন টংক আন্দোলনের প্রেরণার উৎস। টংক প্রথা উচ্ছেদ, জমির খাজনা স্বত্ব, জোত স্বত্ব, জমিদারি প্রথা উচ্ছেদসহ বিভিন্ন দাবি নিয়ে শুরু হয়েছিল টংক আন্দোলন। হাজং সম্প্রদায় নিজেদের স্বার্থেই এই আন্দোলনের সঙ্গে সক্রিয়ভাবে যুক্ত হয়েছিল।
কুমুদিনীর স্বামী লংকেশ্বর হাজং ২০০০ সালে মারা যান। তাদের তিন ছেলে ও দুই মেয়ে। বড় সন্তান লমিন হাজং আগেই মারা গেছেন। মেঝ ছেলে অর্জুন হাজংয়ের সঙ্গেই থাকতেন কুমুদিনী। ছোট ছেলে মুক্তিযুদ্ধের পর ভারতে চলে যান। মেয়েদের মধ্যে বড় জন মেনজুলি হাজং মানিকগঞ্জে ও ছোট মেয়ে অঞ্জুলী হাজং থাকেন ঢাকায়।
বাংলা একাডেমি সমাজসেবায় অবদানের জন্য ২০১৯ সালে কুমুদিনী হাজংকে সম্মানসূচক ফেলোশিপ দেয়। এছাড়া তিনি পেয়েছেন অনন্যা শীর্ষদশ (২০০৩), আহমদ শরীফ স্মারক (২০০৫), কমরেড মণি সিংহ স্মৃতি পদক (২০০৭), সিধু-কানহু-ফুলমণি পদক (২০১০), জলসিঁড়ি (২০১৪) ও হাজং জাতীয় পুরস্কার (২০১৮)।