কুষ্টিয়ায় চাঞ্চল্যকর তিন খুনের মামলার একমাত্র আসামি পুলিশের বরখাস্ত হওয়া সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) সৌমেন রায়কে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছে আদালত। একইসঙ্গে তাকে এক লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে।
সৌমেন রায়ের অনুপস্থিতিতে রবিবার কুষ্টিয়া জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক মো. রুহুল আমীন এ রায় দেন।
মাগুরা সদর উপজেলার কুচিয়ামোড়া ইউনিয়নের আসবা গ্রামের সুনীল রায়ের ছেলে সৌমেন সর্বশেষ খুলনার ফুলতলা থানায় এএসআই হিসেবে কর্মরত ছিলেন।
আদালত সূত্রে জানা গেছে, ২০২১ সালের ১৩ জুন বেলা সোয়া ১১টার দিকে কুষ্টিয়া শহরের কাস্টমস মোড় এলাকার নাজ ম্যানশন মার্কেটের বিকাশের দোকানের সামনে কথিত স্ত্রী আসমা খাতুন (২৫), আসমার ছেলে রবিন (৫) ও আসমার পরকীয়া প্রেমিক শাকিলকে (২৮) পুলিশের রিভলবার দিয়ে গুলি করে হত্যা করেন এএসআই সৌমেন রায়। স্থানীয়রা তখনই তাকে আটকে পুলিশে দেয়।
এ ঘটনায় এএসআই সৌমেন রায়কে একমাত্র আসামি করে হত্যা মামলা করেন আসমা খাতুনের মা হাসিনা বেগম। পরদিন ১৪ জুন বিকালে কুষ্টিয়া সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. এনামুল হকের আদালতে হত্যার দায় স্বীকার করে জবানবন্দি দেন সৌমেন। পরে মামলার তদকারী কর্মকর্তা নিশিকান্ত সরকার তার বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেন।
সৌমেন ‘ভারতে’
২০২১ সালের ১৩ জুন হত্যাকাণ্ডের দিনই সৌমেনকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করে কর্তৃপক্ষ। ২০২২ সালের ৬ নভেম্বর হাইকোর্ট থেকে জামিন নেন তিনি। সেই থেকে পলাতক রয়েছেন সৌমেন।
মামলার বাদী হাসিনা বেগম বলেন, “শুনেছি হাইকোর্ট থেকে জামিনে বেরিয়ে ভারতে পালিয়ে গেছেন।”
রায়ে সন্তুষ্টি প্রকাশ করে তিনি বলেন, “তাকে দ্রুত গ্রেপ্তার করে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হোক।”
মামলা সূত্রে জানা গেছে, কুষ্টিয়ার কুমারখালী থানায় দায়িত্বে থাকার সময় এএসআই সৌমেনের সঙ্গে একটি মামলাকে কেন্দ্র করে আসমার পরিচয়। পরে তাদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক হয়। সে সময় সৌমেন তার নাম মো. সুমন হোসেন রাখেন এবং সুমন নামেই মুসলিম বিধানমতে আসমাকে বিয়ে করেন। সৌমেন আসমার তৃতীয় স্বামী। বিয়ের পর থেকেই কুষ্টিয়ার আড়ুয়াপাড়ায় একটি ভাড়া বাসায় তারা বাস করছিলেন। এ বিয়ের বৈধ কাগজপত্র দেখাতে পারেনি আসমার পরিবার।
এএসআই সৌমেন কুমারখালী থানা থেকে খুলনার ফুলতলা থানায় বদলি হওয়ার পর থেকেই বিকাশকর্মী শাকিলের সঙ্গে সম্পর্কে জড়ান আসমা। এ সম্পর্ক মেনে নিতে পারেননি সৌমেন। সেই ক্ষোভ থেকেই প্রকাশ্যে আসমা, আসমার দ্বিতীয় স্বামীর ছেলে রবিন ও পরকীয়া প্রেমিক শাকিলকে গুলি করে হত্যা করেন তিনি।
সৌমেন রায় ২০১৫ সালে কনস্টেবল থেকে এএসআই হন। ২০১৬ সালে কুমারখালী থানায় যোগ দেন। সেখান থেকে মিরপুর থানার হালসা ক্যাম্প, বাগেরহাট থানাসহ বিভিন্ন জায়গায় কর্মরত ছিলেন। সর্বশেষ ছিলেন খুলনার ফুলতলা থানায়।