অভিশ্রুতি শাস্ত্রী নাম নিয়ে ঢাকায় সাংবাদিকতা করলেও কুষ্টিয়ার খোকসার গ্রামে তাকে সবাই চেনে বৃষ্টি খাতুন নামে।
সেই নামে ডেকেই আহাজারি করছিলেন বিউটি বেগম। তবে সন্তানকে এখনই পাচ্ছেন না তিনি। কেননা, দুই রকম দাবি আসায় ডিএনএ পরীক্ষার পরই হবে লাশ হস্তান্তর।
বৃহস্পতিবার রাতে ঢাকার বেইলি রোডের অগ্নিকাণ্ডে প্রাণ হারান ইডেন কলেজের শিক্ষার্থী অভিশ্রুতি। তিনি সাংবাদিকতা করতেন।
অভিশ্রুতির লাশ অন্য ৪৫ জনের মতো মর্গে নেওয়া হয়। পরিচয় শনাক্তের পর অন্যদের লাশ হস্তান্তর করা হলেও অভিশ্রুতির লাশ হস্তান্তর হয়নি পরিচয় নিয়ে জটিলতায়।
ফেইসবুকসহ সোশাল মিডিয়ায় এমনি চাকরিস্থলেও অভিশ্রুতি শাস্ত্রী তার নাম।
তবে তিনি হিন্দু ধর্মীয় আচার পালন করতেন বলে ঢাকার রমনা কালীমন্দিরের সভাপতি উৎপল সাহা জানিয়েছেন।
তিনি সাংবাদিকদের বলেছেন, অভিশ্রুতি গত কিছুদিন ধরেই মন্দিরে যাতায়াত করছিলেন। তিনি নিজেকে হিন্দু বলে পরিচয় দিতেন। বলতেন, তার বাড়ি ভারতে, তবে তিনি ছোটবেলা থেকে কুষ্টিয়ায় একটি পরিবারে দত্তক মেয়ে হিসাবে রয়েছেন।
এরই মধ্যে কুষ্টিয়া থেকে এসে শাবলুল আলম সবুজ দাবি করেন, মৃত অভিশ্রুতি তারই মেয়ে, তার প্রকৃত নাম বৃষ্টি।
দুই রকম দাবি আসায় রমনা কালী মন্দির ডিএনএ পরীক্ষা করার পরই লাশ হস্তান্তরে ঢাকার জেলা প্রশাসককে আবেদন করেছে বলে জানান উৎপল।
এদিকে কুষ্টিয়ার খোকসার বেতবাড়িয়া ইউনিয়নের পশ্চিম বনগ্রাম এলাকায় সবুজের বাড়িতে শনিবার বিকালে গিয়ে দেখা যায় মানুষের জটলার মধ্যে ভেতর থেকে বিলাপের শব্দ আসছে।
ঘরের ভেতর ঢুকে দেখা যায়, ইডেন কলেজের ‘অভিশ্রুতি বৃষ্টি’ লেখা একটি ক্রেস্ট এবং ছবি সম্বলিত ‘বৃষ্টি খাতুন’ নামের একটি পরীক্ষার প্রবেশপত্র বুকে জড়িয়ে আহাজারি করছেন সবুজের স্ত্রী বিউটি বেগম। ছোট মেয়ে বর্ষা ও প্রতিবেশীরা মিলে তাকে শান্ত করার চেষ্টা করছেন। কিন্তু বার বার তিনি বৃষ্টি নাম ধরে কাঁদছিলেন।
পরিবারের সদস্যরা জানান, লাশ এখনও বুঝে না পাওয়ায় মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছেন তারা।
বিউটির মেজ মেয়ে শারমিনা সুলতানা ঝর্ণা খাতুন জানান, লাশ বুঝে নিতে ঢাকায় রয়েছেন তার বাবা সবুজ। তবে হিন্দু না কি মুসলমান, এই জটিলতায় হস্তান্তর নিয়ে তৈরি হয়েছে জটিলতা।
ঝর্ণা জানান, তিন মাস আগেও বাড়ি এসেছিলেন বৃষ্টি (অভিশ্রুতি)।
ছোট বোন বর্ষা খাতুন জানান, বৃহস্পতিবার দুপুরেও মায়ের সঙ্গে বৃষ্টির মোবাইল ফোনে কথা হয়েছিল।
বৃষ্টির অভিশ্রুতি নামে পরিচিতি পাওয়ার বিষয়টি তার গ্রামবাসীর মনেও কৌতূহলের সৃষ্টি করেছে।
বৃষ্টির স্কুলজীবনের এক সহপাঠীর বাবা মাসুদ রানা বলেন, “আমার মেয়ের সাথেই বৃষ্টি পড়াশোনা করত। পঞ্চম শ্রেণী পর্যন্ত তারা গ্রামের ব্র্যাক স্কুলে পড়েছে। মেয়েটিকে ছোটকাল থেকেই দেখছি। মেধাবী ছিল। তার মৃত্যুর খবরে আমরা খুব কষ্ট পেয়েছি।”
পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, বৃষ্টি প্রাথমিক ও মাধ্যমিকে পড়েছেন গ্রামের স্কুলে। উচ্চ মাধ্যমিক পড়েছেন কুষ্টিয়া সরকারি কলেজে। এরপর ঢাকার ইডেন কলেজে দর্শন বিভাগে ভর্তি হন।
বৃষ্টির চাচা জোয়াদ আলী বলেন, “ঢাকায় ছোট চাকরি করে দুই মেয়েকে বাইরে রেখে শিক্ষিত করার চেষ্টা করত সবুজ। সবুজের তিন মেয়ে। সবার বড় বৃষ্টি। মেজটি ঝর্ণা রাজবাড়ী সরকারি কলেজে প্রথম বর্ষের ছাত্রী। রাজবাড়ী থেকেই পড়াশোনা করে। আর ছোট মেয়ে বর্ষা মায়ের সাথে গ্রামের বাড়িতেই থাকে।”