আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের রাস্তায় দেখলেই পিটিয়ে মারতে বলেছেন কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলা যুবদলের নেতা রফিকুল ইসলাম রফিক।
তার এমন বক্তব্যের এক মিনিটের একটি ভিডিও ক্লিপ মঙ্গলবার সোশাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়ে।
রফিক কুষ্টিয়ার মিরপুর পৌর যুবদলের সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক ও উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক রহমত আলী রব্বানের ভাগ্নে।
গণঅভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর আত্মগোপনে চলে যান আওয়ামী লীগের বেশিরভাগ নেতাকর্মী। বিভিন্ন মামলায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতেও গ্রেপ্তার হয়েছেন অনেকে।
আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের তিন দিন পর গত ৮ আগস্ট অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেয়। তবে এ সময়ে দেশে অরাজক পরিস্থিতি দেখা যায়। জনরোষ গিয়ে পড়ে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী, থানা ও পুলিশের ওপর। বিক্ষুব্ধ মানুষ হামলা চালায় আওয়ামী লীগ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন স্থাপনায়, দলটির নেতাকর্মীদের বাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে।
রাষ্ট্রক্ষমতার পট পরিবর্তনের পর আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির চরম অবনতি দেখা যায়, এখনও তার খুব একটা উন্নতি হয়নি।
গত ৭ সেপ্টেম্বর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাবেক নেতা আবদুল্লাহ আল মাসুদকে (৩১) বিনোদপুর বাজারে পিটিয়ে হত্যা করা হয়।
এ পরিস্থিতির মধ্যে কুষ্টিয়ার মিরপুর পৌর যুবদলের নেতা রফিক আবার আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের পিটিয়ে মারতে বললেন।
গত বুধবার রাতে মিরপুর উপজেলার আমলা ইউনিয়নের নিমতলা বাজারে স্থানীয় বিএনপি অফিস উদ্বোধন অনুষ্ঠানে তিনি এই নির্দেশ দেন। ১ মিনিট ২ সেকেন্ডের সেই ভিডিও নিজেই ফেইসবুকে পোস্ট করেন।
ভিডিওতে রফিকুলকে বলতে শোনা যায়, “যদি কখনও কোনও আওয়ামী লীগকে দেখেন, রাস্তায় পিটিয়ে মারবেন। ওরা আমাদের রাস্তায় বের হতে দেইনি, বাজারে যেতে দেইনি। আমাদের বাজার পর্যন্ত করতে দেইনি। এতো জঘন্য রাজনীতি করে তারা।
“বিএনপি ও অন্যান্য অঙ্গ সংগঠনের কাউকে তিনজন একসাথে বসতে দেওয়া হয়নি। বিভিন্নভাবে হয়রানি করা হয়েছে। আমাদের নামে গায়েবী ও নাশকতা মামলা দেওয়া হয়েছে। আমরা সবাই অনেক কষ্ট করেছি। তাই আপনাদের অনুরোধ করে বলব, আপনারা দলের ভেতর কোনও গ্রুপিং করবেন না। কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে রাজনীতি করবেন।”
তার এই বক্তব্যর সময় তার সামনে বসে থাকা নেতাকর্মীদের অনেকে হাততালি দেন।
এমন বক্তব্যের বিষয়ে জানতে যোগাযোগ করা হলে যুবদল নেতা রফিকুল ইসলাম বলেন, “গত ১৫ থেকে ১৬ বছর আমরা নির্যাতনের শিকার হয়েছি। সবার নামে মামলা দেওয়া হয়েছে। বাড়িতে থাকতে পারিনি।
“ঘুমাতে দেয়নি। ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে বসতে দেয়নি। সেই কষ্টের জায়গা থেকে আবেগে একথা বলেছি। নেতাকর্মীদের ধরে রাখতে গেলে এমন কথা বলতে হয়।”
তবে বিএনপি এ ধরনের বক্তব্যকে ‘সমর্থন করে না’ বলে জানিয়েছেন মিরপুর উপজেলা বিএনপির সভাপতি আব্দুল হক। তিনি বলেন, “আমাদের এমন কোনও নির্দেশনাও নেই। এটার বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
এর আগে ‘কুষ্টিয়া থানা আমি ভেঙেছি’ এমন বক্তব্য দিয়ে ভাইরাল হন কুষ্টিয়া জেলা যুবদলের সমন্বয়ক আব্দুল মাজেদ। সোশাল মিডিয়ায় তার এ বক্তব্য ছড়িয়ে পড়ার পর ৯ সেপ্টেম্বর তিনি সংবাদ সম্মেলন ডেকে দুঃখ প্রকাশ করেন। ‘ভুলবশত’ এ বক্তব্য দিয়েছেন বলেও দাবি তার।
এসব ঘটনার পর তীব্র সমালোচনার মুখে পড়ে স্থানীয় যুবদল নেতা কর্মীরা।