কুষ্টিয়ায় এক বাড়ি থেকে এক ব্যক্তি এবং তার শিশুপুত্রের লাশ উদ্ধার হয়েছে। তারা দুজনই এক রশিতে ঝুলছিলেন বলে পুুলিশ জানিয়েছে।
জেলা শহরের মঙ্গলবাড়িয়া এলাকার একটি বাড়ি থেকে শনিবার বিকালে লাশ দুটি উদ্ধার করা হয় বলে কুষ্টিয়া মডেল থানার ওসি শেখ সোহেল রানা জানিয়েছেন।
মৃতরা হলেন রেজাউল ইসলাম মধু (৩৮) এবং তার ছেলে মুগ্ধ (৭)।
ধারণা করা হচ্ছে, তারা আত্মহত্যা করেছেন। কী কারণে, সে বিষয়ে পুলিশ নিশ্চিত করে কিছু বলতে না পারলেও স্বজনরা জানিয়েছে, ধর্মান্তরিত মধু জাতীয় পরিচয়পত্র সংক্রান্ত জটিলতায় তার ছেলেকে স্কুলে ভর্তি করাতে না পেয়ে হতাশাগ্রস্ত ছিল।
মধু শহরের আলফা মোড় এলাকার বিষ্ণুপদ রায়ের ছেলে। আট বছর আগে তিনি ধর্মান্তরিত হয়ে মিরপুর উপজেলার পোড়াদহ ইউনিয়নের গোবিন্দপুর গ্রামের আসাদুল মণ্ডলের মেয়ে শেফালি খাতুনকে ভালোবেসে বিয়ে করেন। ধর্মান্তরিত হওয়ার আগে তার নাম ছিল মধুসুদন রায়।
তারা শহরে বাসা ভাড়া নিলেও কিছুদিন ধরে থাকছিলেন শহরে শেফালীর বাবার বাড়িতে।
স্বজনরা জানিয়েছে, মধু শনিবার বেলা ১২টার দিকে ছেলে মুগ্ধকে নিয়ে হরেকৃষ্ণপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি করার কথা বলে বাড়ি থেকে বের হন। দীর্ঘ সময় পেরিয়ে গেলেও সন্তানকে নিয়ে ফিরে না আসায় শেফালি তাদের ভাড়া বাসায় যান।
ডাকাডাকি করে সাড়া না পেয়ে জানালার ছিদ্র দিয়ে শেফালি স্বামী ও সন্তানের ঝুলন্ত লাশ দেখতে পেয়ে চিৎকার করে উঠলে প্রতিবেশীরা ছুটে যায়। এরপর পুলিশ গিয়ে লাশ দুটি উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য হাসপাতালের পাঠায়।
ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, সেই বাড়িতে মানুষের ভিড়। সংজ্ঞা হারিয়ে পড়ে আছেন শেফালি। তার জ্ঞান ফেরানোর চেষ্টা করছেন স্বজনরা।
হত্যাকাণ্ডের কারণ জানতে চাইলে পুলিশ কর্মকর্তা সোহেল রানা বলেন, “এখনি কিছু বলা যাচ্ছে না। এখানে আত্মহত্যা ও হত্যার দুটি ঘটনা থাকতে পারে। ছেলেকে হত্যার পর বাবা আত্মহত্যা করতে পারে। ময়নাতদন্ত রির্পোট পাওয়ার পর মৃত্যুর কারণ সঠিকভাবে জানা যাবে।”
কুষ্টিয়া মডেল থানার ওসি শেখ সোহেল রানা সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, “মধুর শ্বশুর বাড়ির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে যে মধু ধর্মান্তরিত হয়ে মুসলমান হওয়ায় এনআইডি কার্ড সংশোধন নিয়ে জটিলতায় ছিলেন। এ কারণে নিজের সন্তানকে বিদ্যালয়ে ভর্তি করতে পারেননি। অন্যদিকে মধুর আর্থিক অনটন ছিল। এরই মধ্যে স্ত্রী অসুস্থ হয়ে পড়েন।”
দুটি বিষয়কে প্রাধান্য দিয়ে পুলিশ তদন্ত শুরু করেছে বলে জানান ওসি।
এদিকে কুষ্টিয়া জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা আবু আনসার সকাল সন্ধ্যার প্রশ্নে বলেন, মধুর জাতীয় পরিচয়পত্র সংশোধন সংক্রান্ত জটিলতার কোনও খবর তার জানা নেই।
“ভোটার কার্ড সংশোধন নিয়ে কোনও জটিলতা থাকলে তিনি আমার সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারতেন।”
অন্যদিকে যে বিদ্যালয়ে মধু তার ছেলেকে ভর্তির চেষ্টা চালান বলে দাবি করা হচ্ছে, সেই হরে কৃষ্ণপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আরিফা শারমিন সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, মধু নামে কোনও ব্যক্তির তার বিদ্যালয়ে ছেলে ভর্তি করতে আসেননি। তাছাড়া শনিবার সরকারি ছুটি থাকায় বিদ্যালয় খোলাও ছিল না।



