Beta
রবিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৫
Beta
রবিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৫

কুষ্টিয়ায় ইউপি চেয়ারম্যান সেন্টু খুনের নেপথ্যে কী

নঈম উদ্দিন সেন্টু।
নঈম উদ্দিন সেন্টু।
[publishpress_authors_box]

কুষ্টিয়ার দৌলতপুরের ইউপি চেয়ারম্যান নঈমুদ্দিন সেন্টুকে হত্যার ঘটনায় মামলা হলেও কেউ এখনও গ্রেপ্তার হয়নি।

স্থানীয় পুলিশ কর্মকর্তারা বলছে, খুনিরা চিহ্নিত করা হয়েছে। খুব শিগগিরই তাদের গ্রেপ্তার করা হবে।

চরাঞ্চলে সন্ত্রাসী বাহিনী দমনে ভুমিকা রাখার কারণেই সেন্টুকে হত্যা করা হয়েছে বলে পরিবারের অভিযোগ। তারা বলছে, দুই দশক আগের শত্রুতার শোধ এখন নেওয়া হয়েছে।

আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর পুরনো শত্রুদের সঙ্গে বিএনপির স্থানীয় এক নেতার উচ্চাভিলাষও যোগ হয়েছিল বলে দাবি সেন্টুর পরিবারের।

সোমবার দৌলতপুর উপজেলার ফিলিপনগর ইউনিয়ন পরিষদের কার্যালয়ে গুলি চালিয়ে হত্যা করা হয় সেন্টুকে। ময়নাতদন্ত শেষে মঙ্গলবার বাড়ির আঙিনায় তাকে দাফন করা হয়েছে।

সেন্টু এক সময় বিএনপিতে যুক্ত থাকলেও অনেক দিন ধরেই ওই দলের সঙ্গে সম্পৃক্ততা নেই তার। এরমধ্যে আওয়ামী লীগ নেতাদের সঙ্গে সখ্য গড়ে তুললেও ভোট তিনি করতেন স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে।

চরাঞ্চলের দ্বন্দ্ব

এলাকার মানুষ ও নিহত চেয়ারম্যান সেন্টুর পরিবারের সদস্যদের সাথে কথা বলে জানা যায়, ২০০১ সালে বিএনপি ক্ষমতায় আসার পর দৌলতপুর উপজেলার পদ্মার চরাঞ্চলে মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে বিভিন্ন সন্ত্রাসী বাহিনী। এর মধ্যে ছিল লালচাঁদ বাহিনী।

তখন অভিযোগ উঠেছিল, স্থানীয় বিএনপি নেতাদের আশ্রয় প্রশ্রয়ে লালচাঁদ এই সন্ত্রাসী বাহিনী গড়ে তোলেন। দৌলতপুর উপজেলার চর অঞ্চলের মানুষ এই বাহিনীর হাতে জিম্মি হয়ে পড়েছিল।

সে সময় চেয়ারম্যান সেন্টুও ওই বাহিনীর তোপের মুখে পড়ে। তখন সেন্টু তার ভাই ব্যবসায়ী আব্দুর রাজ্জাকের মাধ্যমে তদবির করে ফিলিপনগর এলাকায় একটি র‌্যাব ক্যাম্প স্থাপন করেছিলেন। এরপর র‌্যাবের কথিত বন্দুকযুদ্ধে ওই বাহিনীর কয়েকজন মারা যায়। লালচাঁদও এলাকাছাড়া হন। কিছুদিন বাদে তার গলাকাটা লাশ পাওয়া গিয়েছিল।

লালচাঁদের মৃত্যুর পর চেয়ারম্যান সেন্টু ও তার সমর্থকরা উল্লাস প্রকাশ করেছিল বলে স্থানীয়রা জানায়।

ধারণা করা হচ্ছে, সেই ঘটনার প্রতিশোধ নিতেই এখন সুযোগ বুঝে ওই বাহিনীর সদস্যরা ফের সংগঠিত হয়ে চেয়ারম্যান সেন্টুকে হত্যা করেছে।

মূল আসামি টুকু

সেন্টু হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় স্থানীয় বিএনপি নেতা তরিকুল ইসলাম টুকুকে প্রধান আসামি করে মামলা হয়েছে। টুকুর সঙ্গে চেয়ারম্যান সেন্টুর বিরোধ ছিল।

স্থানীয়দের ভাষ্য, সেন্টু এলাকায় প্রভাবশালী হওয়ায় ক্ষমতার পালাবদলের পরও টুকু খুব একটা সুবিধা করে উঠতে পারছিলেন না। তাই পথের কাঁটা সরাতে সেন্টুর পুরনো শত্রুদের ব্যবহার করেন টুকু।

স্থানীয়রা জানায়, আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পরপরই টুকু এলাকার কিছু কিশোর ও উঠতি যুবকদের নিয়ে একটি দল তৈরি করেছে। লালচাঁদের ছেলে রুবেল সেই দলের সদস্য।

সেন্টুর ছোট মেয়ে নাজিয়া সুলতানা সাংবাদিকদের বলেন, তার বাবাকে সরিয়ে দিয়ে চেয়ারম্যান হতে চাইছিলেন টুকু। বেশ কিছুদিন থেকে হুমকিও দিচ্ছিলেন।

ফিলিপ নগর ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ের ঠিক পেছনে টুকুর বাড়ি। তিনি নিজেকে ফিলিপনগর ইউনিয়ন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক হিসাবে পরিচয় দেন।

হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে টুকুর কোনও বক্তব্য পাওয়া যায়নি। বিএনপির স্থানীয় কোনও নেতাও এবিষয়ে কথা বলতে রাজি হননি।

খুনিরা ‘চিহ্নিত’

নিহত সেন্টুর নাতি ফয়সাল আহমেদ হত্যাকাণ্ডের সময় ঘটনাস্থলে ছিলেন। তিনি প্রতিরোধের চেষ্টা করলে হামলাকারীরা তার দিকেও অস্ত্র তাক করেছিল। তখন তিনি পালিয়ে যান।

তার ও স্থানীয় অন্যান্যদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সেন্টু হত্যাকাণ্ডে অংশ নেয় মোট ছয়জন। তাদের সবার বয়স ১৫ থেকে ২২ বছরের মধ্যে। তারা কয়েকটি মোটরসাইকেলে করে এসে প্রথমে সেন্টুর কার্যালয়ের পেছন দিকের খোলা জানালা দিয়ে খুব কাছ থেকে শটগানের গুলি চালায়। এরপর তার কক্ষে ঢুকে আরও রাউন্ড গুলি করে তার মৃত্যু নিশ্চিত করে চলে যায়।

কুষ্টিয়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (মিরপুর সার্কেল) আব্দুল খালেক সাংবাদিকদের বলেন, “পুলিশ ইতোমধ্যে চেয়ারম্যান নঈমুদ্দিন সেন্টু হত্যায় সরাসরি জড়িতদের চিহ্নিত করেছে। এছাড়া ঘটনার পরিকল্পনাকারীরাও চিহ্নিত হয়েছে। খুব শিগগিরই তাদের আইনের আওতায় আনা হবে।”

মঙ্গলবার সকালে সেন্টুর জানাজায় বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা উপস্থিত ছিল। সেখানে সেন্টুর ভাই আব্দুর রাজ্জাক সন্ত্রাসীদের মদদ দেওয়া বন্ধ করার জন্য রাজনেতিক নেতাদের অনুরোধ জানান।

তিনি আরও বলেছিলেন, “কারা হত্যা করেছে, সেটা এলাকার সবার জানা।”

সেন্টুর ছেলে আহসান হাবিব বাদী হয়ে দৌলতপুর থানায় যে মামলা করেছেন, তাতে আসামির তালিকায় টুকুসহ ১০ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত