তিনি গান করেন, জানেন কিনা জানি না, বেশ কিছু অ্যালবামও প্রকাশিত হয়েছে তার। নিজের প্রথম গানে নিজেই মডেল হয়ে ক্যামেরার সামনে দাঁড়িয়েছিলেন সাহসী ভঙ্গিমায়; হৈ-চৈ বাঁধিয়ে দিয়েছিলেন। ২০০২ সালে তিনি আবির্ভূত হলেন লাক্স-আনন্দধারা ফটোজেনিক চ্যাম্পিয়ন হয়ে। তারপর অভিনয়ে, ছোটপর্দায় অর্জন করলেন তুমুল জনপ্রিয়তা। প্রতিনিয়তই নতুন রূপে হাজির হতে ভালো লাগে তার।
বলছি বাংলা বিনোদন জগতের মডেল, গায়িকা এবং নায়িকা কুসুম শিকদারের কথা।
২০১০ সালে ক্যারিয়ারে নতুন বাঁকবদল হলো তার। চিত্রনায়িকা কুসুম! কি নেই তার! নাচ-গান অভিনয়-গ্ল্যামার, কেন নয় বড়পর্দা? সবাই স্বাগত জানালো। কিন্তু না, কুসুম যেন খুব সিলেক্টিভ, কোন হাতছানিতেই তিনি ধরা দেবার পাত্রী নন।
নিজের গন্তব্য নিজেই আঁকেন তিনি…
গৌতম ঘোষের ‘শঙ্খচিল’- এ সমস্ত গ্ল্যামার ভুলে অন্য এক কুসুম। তারপর আবার ডুব। আটবছর পর একদিন কুসুমের দেখা মিলল। সঙ্গে একগাদা নতুন পরিচয়। লেখক তো বটেই এবার বড়পর্দার প্রযোজক-চিত্রনাট্যকার-নির্মাতা হয়ে। নাহ… গল্পটা তার মুখেই শুনি!
‘অজাগতিক ছায়া’র লেখক কুসুম শিকদার
“অজাগতিক ছায়া প্রথম প্রকাশিত হয় ডেইলি স্টারের একটি ঈদ সংখ্যায়। তারপর বই আকারে প্রকাশের প্রস্তুতি নেই। তারপর তাম্রলিপি প্রকাশন থেকে ২০১৯ সালে বইটি বইমেলায় প্রকাশিত হয়, কিন্তু কোভিডের কারণে বইটি তখন প্রচার পায়নি। কোভিড পরবর্তী সময়ে বইটি আবারও প্রকাশিত হয়। তখন বইটি সকলের নজরে আসে। পাঠকদের কাছ থেকে, গণমাধ্যমের বন্ধুদের কাছ থেকে অনেক সাড়া পাই। লেখালেখির অনুপ্রেরণা যেমন আসে তেমনি বইটি থেকে নির্মাণের অনুরোধও আসে।”
গল্পটা কেমন?
“গল্পের কেন্দ্রীয় চরিত্রগুলো হঠাৎ করেই অলৌকিকভাবে, দিন ও রাতের নির্দিষ্ট কিছু প্রহরে কতিপয় অজাগতিক ঘটনার সম্মুখীন হতে থাকে। যেগুলোর ব্যাখ্যা খুঁজতে গিয়ে তারা সময়ের এক অপার্থিব চোরাবালিতে ডুবে যেতে থাকে। তাদের চারদিকে বিরাজ করতে থাকে এক অবিচ্ছেদ্য বলয়ের শক্তি। কীভাবে সেই অতল গভীর ও অন্ধকার রহস্যময়, প্রায় অদৃশ্য অজানার চোরাবালি থেকে তারা উঠে আসে- সেই ভয়ংকর যাত্রার সাক্ষী হতে চাইলে দেখতে হবে ‘শরতের জবা’।”
‘শরতের জবা’ দৃশ্যায়নের আকাঙ্ক্ষা থেকেই প্রযোজনায়
“প্রযোজক হয়ে ওঠার পেছনে ‘অজাগতিক ছায়া’র দৃশ্যায়নের আকাঙক্ষাই প্রধান ছিল। প্রথমে ভেবেছিলাম নাটক বা টেলিফিল্ম করবো। তবে আমার পরিবারের অনুপ্রেরণায় এটিকে চলচ্চিত্র হিসেবে ভাবতে পেরেছি। তাদের সমস্ত কৃতজ্ঞতা জানাতে চাই। প্রযোজক হিসেবে কাজ করতে গিয়ে চিত্রনাট্যে মন দিতে হয়। খুব সহজ ছিল না কাজটা।”
কবিতা-গল্প লিখেছি, চিত্রনাট্যতো লিখিনি!
“আমি কবিতা লিখেছি, উপন্যাস লিখেছি কিন্তু চিত্রনাট্য তো লিখিনি। লিখতে গিয়ে প্রতিটা বিষয় মাথায় রাখতে হয়েছে। যেহেতু আমিই পরিচালনা করবো সেহেতু আমাকে মাথায় রাখতে হয়েছে প্রতিটি বিষয়, লোকেশনটা কোথায় হবে, কোন জিনিসটা কোথায় থাকবে, সবই হিসেব করে লিখেছি।”
‘ডিরেকশন? নো কম্প্রোইজ’
“নির্মাতা হিসেবে কাজ করতে গিয়ে আমি একটা কথা শুধু বলতে পারি, মানের প্রশ্নে আমি কোন কম্প্রোমাইজ করিনি। সত্যি বলতে শুটিংটা আমার বাড়িতেই হয়েছে। তাই খুব বেশি বেগ পেতে হয়নি। উপভোগ করেছি চলচ্চিত্রের সম্পাদনার কাজটা করতে। কালার গ্রেডিং থেকে সাউন্ড মিক্সিং প্রতিটি কাজ বারবার করেছি। যতোক্ষণ না নিজের মনঃপুত হয়েছে। আর পুরো কাজটা করতে আমার উপদেষ্টা পরিচালক সুমন ধর ও আমার চিত্রগ্রাহক খায়ের খন্দকার আমাকে দারুণ সহযোগিতা করেছেন। তাদের প্রতিও আমার কৃতজ্ঞতা।”
অভিনেত্রী কুসুম যখন নির্মাতা কুসুমের সামনে
“এটা খুব দারুণ অভিজ্ঞতা হয়েছে। আমার চরিত্রটির নাম জবা। যাকে আমি লিখেছি। নিজের মনে ধারণ করেছি-তাকে পর্দায় ফুটিয়ে তুলতে নিজের সর্বোচ্চটুকু দিয়ে চেষ্টা করেছি। এ সিনেমায় দুটি নারী চরিত্র ছিল। একটি জবা অন্যটি বেলি। বেলি চরিত্রটি পাওয়া যাচ্ছিল না। একসময় মনে হচ্ছিল বেলি চরিত্রটি হয়তো আমাকেই করতে হবে। কিন্তু শেষ দিকে এসে বেলি চরিত্রটিকে পেয়ে যাই। ফলে জবা হয়েই সবার সামনে আসতে পারছি। এটা দর্শক বিবেচনা করবেন, কতটুকু পেরেছি।”
নীরবে কিভাবে ঘটলো এত কিছু?
“আমি সবসময় কাজটাকেই প্রধান্য দিয়েছি। প্রচারণায় আসতে চাইনি কাজ ছাড়া। তাই কেউ জানতে পারেনি কখনো কী করছি। আমার ভক্তরা আমাকে অনেক মিস করেন জানি। আমার গণমাধ্যমের বন্ধুরাও আমাকে অনেক অনুপ্রেরণা দিয়েছেন। সহযোগিতা করেছেন। তবে, কেউ জানতে পারেনি গত এপ্রিলে সেন্সর সনদও পেয়ে গেছে ‘শরতের জবা’।”
প্রচারণায় থাকছে না আড়ম্বর
“দেশের সিচুয়েশান একেক সময় একেক রকম যাচ্ছে। তাই আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি খুব বেশি জমকালো কিছু করবো না। তবে, প্রচারণার জন্য ব্যাসিক যতটুকু তাতো অবশ্যই করবো। আমার প্রিয়জন, আমাকে যারা ভালোবাসেন, আমার কাজ যারা পছন্দ করেন সকলকে বলবো নতুন এ যাত্রায় যেন তারা আমার পাশে থাকেন।”