কিলিয়ান এমবাপ্পে-পিএসজি নাটকে নতুন বোমা ফাটাল ‘দ্য অ্যাথলেটিক’। বৃহস্পতিবfর তারা খবর দিয়েছে, ফরাসি সুপারস্টার মৌসুম শেষে পিএসজি ছাড়ার সিদ্ধান্ত জানিয়ে দিয়েছে ক্লাব সভাপতিকে। এবার নাসের আল-খেলাইফি কী চাল দেবেন, সেটাও দেখার আছে বৈকি ! আগে এই বিশ্বকাপজয়ীর ক্লাব ছাড়ার প্রত্যেক উদ্যোগে জল ঢেলে দিয়েছিলেন কাতার স্পোর্টস ইনভেস্টমেন্টের চেয়ারম্যান।
পিএসজি ছাড়ার বোমা
এমবাপ্পের প্যারিস ছাড়ার খবর দাবানলের মত ছড়িয়ে পড়ে ইউরোপের সংবাদ মাধ্যমে। সেটার সত্যতাও মিলেছে লা প্যারিসিয়ানের খবরে, “এখন আর কোনো সন্দেহ নেই। কিলিয়ান এমবাপ্পে মৌসুম শেষে লিগ আঁ ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।” এর আগেও অবশ্য তারা মোটামুটি নিশ্চিত করে দিয়েছিল এই তারকার প্যারিস ছাড়ার খবর। গত ৩ ফেব্রুয়ারি তারা লিখেছিল, “ফরাসি ফুটবলের সবচেয়ে বড় তারকা আগামী মৌসুমে ফুটবল বিশ্বের সবচেয়ে বড় ক্লাবে যোগ দিতে যাচ্ছেন।” কোন ক্লাবে যাচ্ছেন সেটা কেবল আঁচ করা যায়, নিশ্চিত করে বলা যায় না। তবে ২৫ বছর বয়সী এই ফুটবল তারকা যে ক্লাব ছাড়ার কথা পিএসজি সভাপতি নাসের আল-খেলাইফিকে জানিয়ে দিয়েছেন, এটা সত্যি। উয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগের শেষ ষোলোর ম্যাচ খেলতে নামার আগেই তিনি এই দুঃসংবাদটা দিয়েছিলেন খেলাইফিকে।
চুক্তির বাধ্যবাধকতা
তবে বললেই বন্ধন মুক্ত হওয়া যাবে, ব্যাপারটা এমন নয়। ২০১৭ সালে মোনাকো ছেড়ে প্যারিসে পাড়ি জমানোর পরও এমবাপ্পে কখনো আড়াল করেননি রিয়াল মাদ্রিদে খেলার স্বপ্ন। বিভিন্ন সময় সেটা প্রকাশও করেছেন এবং বর্তমান ক্লাব ছাড়ার উদ্যোগও নিয়েছিলেন। একবার গোপনে মাদ্রিদ ঘুরেও গিয়েছিলেন। তবে ২০২২ সালে স্বপ্ন পূরণের কাছাকাছি গিয়েও শেষমেষ নিজে ইউ-টার্ন দিয়ে নতুন চুক্তি করে থেকে যান পিএসজিতে। ওই চুক্তি অনুযায়ী ২০২৪ সালের পর তিনি চাইলে পিএসজিতে আরও একটি মৌসুম খেলতে পারবেন। আর ছাড়তে গেলেও বেশ কিছু শর্তও জুড়ে দেওয়া হয়েছিল। যেমন ক্লাব ছেড়ে গেলে ৮০ মিলিয়ন ইউরোর আনুগত্য বোনাসে ছাড় দিতে হবে ফুটবলারকে। এরকম নানা শর্তে মোড়ানো জীবন থেকে বেরিয়ে আসতে গেলে আগে দুই পক্ষকে এক বিন্দুতে পৌঁছাতে হবে। এটা আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যে চূড়ান্ত হলে ফরাসি তারকা পিএসজি মুক্তির আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দিতে পারবেন। এজন্য আরও কয়েক সপ্তাহ অপেক্ষা করতে হবে।
নতুন ঠিকানা
তার পিএসজি ছাড়ার ঘোষণার আগে থেকেই আবার আলোচনায় রিয়াল মাদ্রিদ। ব্যর্থ হয়েও স্প্যানিশ অভিজাতরা কখনো ফরাসি তারকার আশা ছাড়েনি। এবার আগেভাগেই ২৫ বছর বয়সী ফরাসি ফরোয়ার্ডকে পেতে নতুন প্রস্তাব দেয়। তবে আগের চেয়ে বেশ কঠিন তারা। এমবাপ্পে সম্মত হলে আগেই কথা পাকা হবে, নইলে বিকল্প খুঁজবে স্প্যানিশ জায়ান্টরা। অথচ এবারের প্রস্তাবে সুযোগ-সুবিধা আগের চেয়েও কম। ২০২২ সালের প্রস্তাবে বার্ষিক বেতন ছিল ৩০ মিলিয়ন ইউরোর বেশি। নতুন প্রস্তাবে সেটা নাকি কমেছে। যদিও এখন পিএসজিতে পাচ্ছেন তার দ্বিগুন।
এদিকে ফরাসি কিংবদন্তি থিয়েরি অঁরি বিকল্প প্রস্তাব দিয়ে এমবাপ্পেকে আর্সেনালের পথ দেখাচ্ছেন। লা লিগার চেয়ে প্রিমিয়ার লিগেই নাকি তাকে মানাবে ভাল ! তবে ফুটবল বিশেষজ্ঞদের ধারনা, রিয়ালের অর্থবলের সামনে পাত্তা পাবে না আর্সেনালের প্রস্তাব। এছাড়া রিয়াল মাদ্রিদের খ্যাতি ও তাদের চ্যাম্পিয়নস লিগের সাফল্যের আকর্ষনীয় মোড়ক উপেক্ষা করা যে কোনও ফুটবলারের জন্য কঠিন। এখানে থেকে যত সহজে ব্যালন ডি’অরের অঙ্ক মেলানো যায়, অন্য কোথাও কী সেভাবে সম্ভব ! তাই ফুটবল ইতিহাসে নামটা খোদাই করে রাখতে এসব হিসাব-নিকাশও মাথায় নিতে হচ্ছে বিশ্বকাপজয়ীর। নইলে আরলিং হল্যান্ড বা বেলিংহামরা সাফল্য ও পুরস্কারে ছাড়িয়ে যেতে পারে তাকে। স্পেনের রাজধানীতে গেলে অর্থের জায়গাতেও খুব পিছিয়ে পড়ার শঙ্কা নেই। রিয়াল মাদ্রিদ সভাপতি ফ্লোরেন্তিনো পেরেজের বেশ সুখ্যাতি তার ফুটবল বোধ ও ক্ষুরধার ব্যাবসায়িক বুদ্ধির জন্য। ক্লাবটিকে তিনি এমন আকর্ষনের জায়গায় নিয়ে তুলেছেন, কোনও ফুটবলার রিয়ালে এলে তার ব্যাক্তিগত বিপণনের বাজার কত বড় হবে, সেটাও বুঝিয়ে দেন আগেভাগে। কিলিয়ানের সামনেও সেই ছবিটা তুলে ধরা হয়েছে ইতোমধ্যে।
নাটকের পরিণতি
এই তারকা কোথায় যাবে, না যাবে, সেটা পরে। সত্যি সত্যি তিনি পিএসজির শর্ত-বন্ধন ছিঁড়ে বের হতে পারবেন কিনা, এটাই আপাতত বড় প্রশ্ন। কারণ মাঠের বাইরে পিএসজির বড় খেলোয়াড় ক্নাব সভাপতি নাসের আল-খেলাইফি। এই কাতারি ব্যবসায়ীর অনিচ্ছায় কোনও তারকার ক্লাব ছেড়ে বেরিয়ে আসা যে চাট্টিখানি ব্যাপার নয়, সেটা হাড়ে হাড়ে বুঝেছেন কিলিয়ান এমবাপ্পে। এই তারকাকে প্যারিসের ক্লাবে ধরে রাখতে ২০২২ সালে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্টকেও নিয়ে এসেছিলেন দৃশ্যপটে। শেষমেষ প্রেসিডেন্টের অনুরোধে তার পিএসজি ছেড়ে নতুন স্বপ্নের পানে ছোটা হয়নি। খেলাইফি গত গ্রীষ্মে আরেক দফা শিক্ষা দিয়েছেন এই তারকাকে। চুক্তি নবায়ন না করার চিঠি ক্লাবকে পাঠিয়ে তিনি এমন তোপের মুখে পড়েছিলেন, যা ইউরোপের ক্লাব ফুটবলে দেখা যায়নি। পিএসজির প্রাক মৌসুমে এশিয়ার সফরের দল থেকে ছেটে ফেলা হয় বিশ্বকাপজয়ী ফরসি তারকাকে। এরপর পুরো মৌসুম তাকে বেঞ্চে বসিয়ে রাখার হুমকিও দিয়েছিল। এমন ঘটন-অঘটনে এগিয়ে যাওয়া একটি সম্পর্কের শেষাঙ্ক কী সহজে অনুমান করা যায় !