Beta
রবিবার, ১৮ মে, ২০২৫
Beta
রবিবার, ১৮ মে, ২০২৫

নানা বিতর্কের জেরে, আসল-নকল হীরে

Diamond feature
[publishpress_authors_box]

নিজের বিয়ের জন্য কেনা কাটা করছিলেন নাবিলা। আংটি পছন্দ করার সময় হঠাৎ তার মাথায় এল প্রাকৃতিক হীরার তো আকাশ ছোঁয়া দাম। ল্যাবরেটরিতে তৈরি হীরা কিনলে কেমন হয়? কারণ সে শুনেছে ল্যাবরেটরিতে তৈরি হীরার দাম প্রাকৃতিক হীরার চাইতে নাকি পাঁচ গুণ সস্তা!

প্রাকৃতিক উপায়ে হীরা উত্তোলনের যে পদ্ধতি তা পরিবেশ বিধ্বংসী- সে কথা নাবিলা ভালো করেই জানে। বিশেষত লিওনার্দো দ্য ক্যাপ্রিও অভিনীত হলিউডি সিনেমা ‘ব্লাড ডায়মন্ড’ দেখে তার জানা ছিল বহু মানুষের ঘাম আর রক্ত শোষণ করেই এইসব হীরা কনের আঙ্গুলে শোভা পায়। ল্যাবে তৈরি কৃত্রিম হীরার আংটির কথা মাথায় আসার এটাও একটি কারণ।

অবশ্য ভারতীয় এক কনে সম্প্রতি ইন্ডিয়া টুডেকে বলেন, “ল্যাবের হীরা তো আর আসল হীরার অনুভূতি দিতে পারেনা, ওটা নকল। যদিও কম্পোজিশনে তারা একই রকম। তবে খনিজ হীরার মূল্য নিশ্চয়ই বেশি।”

ল্যাবে উৎপাদিত হীরা কতটা খাঁটি?

এই ২০২৪ সালে এসে ‘আসল হীরা’ র ধারণাটাই গেছে বদলে। ‘বিরল’, ‘মূল্যবান’ ইত্যাদি শব্দকে ছাপিয়ে বরং গুরুত্ব পাচ্ছে নৈতিকতার প্রশ্নটি।

পৃথিবী গঠনের কোটি কোটি বছরের যাত্রায় ভূগর্ভে হয় হীরার সৃষ্টি। আর এই হীরা উত্তোলনের যে ইতিহাস তা রীতিমত রক্তাক্ত। বাজারে প্রাপ্ত ‘আসল’ হীরার গায়ে লেগে আছে তাই উপনিবেশের রক্তাক্ত শাসন আর জুলুমের দাগ।

আর তাই প্রয়োজনীয় উপাদানের রাসায়নিক বিক্রিয়ার মাধ্যমে ল্যাবে উৎপাদিত যে হীরা, তার পক্ষেই আজ ঝুঁকে পড়ছেন অনেকে।

ল্যাবে হীরা তৈরি হয় প্রধানত দুটি উপায়ে। এর একটি হলো ‘কেমিকেল ভ্যাপর ডেপজিশন’ এবং আরেকটি হলো ‘হাই প্রেশার-হাই টেম্পারেচার’।

এ ব্যাপারে হীরার গহনার প্রতিষ্ঠান  ‘ট্রু ডায়মন্ড’ এর সহপ্রতিষ্ঠাতা দারিয়ুস মেহতা বলেন, “এই পদ্ধতিতে, কার্বনের একটি ছোট টুকরা একটি চেম্বারে স্থাপন করা হয়, যেখানে আমরা হাইড্রোকার্বন ধারণকারী একটি গ্যাসের মিশ্রণ প্রস্তুত করি। খুব উচ্চ তাপমাত্রা এবং চাপ প্রয়োগ করে, আমরা ভূ-গর্ভস্থ চাপ এবং তাপের মতো পরিবেশ তৈরি করি। কয়েক সপ্তাহের মধ্যে, এই প্রক্রিয়াটি কার্বনকে হীরার খণ্ডে রূপান্তরিত করে।”

জুয়েলারি ব্র্যান্ড ডিআইএআই এর প্রতিষ্ঠাতা দিশা শাহা বলেন, “ল্যাবে বানানো হীরা হলো টেস্ট টিউব বেবির মতো। আপনি যদি টেস্ট টিউব বেবিকে আসল বেবি বলে মেনে নেন তাহলে ল্যাবের হীরাও তাই।”

মূলধারায় নয় এখনও

শান্তনু গুহ রায় তার ‘দ্য ডায়মন্ড ট্রেইল’ বইয়ে লিখেছেন,সারা বিশ্বের সেরা ল্যাবগুলোতে প্রাকৃতিক হীরার হুবহু হীরা তৈরি করা হচ্ছে। সেগুলি বেশ ভাল মানের, দাম কম এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো এতে কার্বন নিঃসরণও অনেক কম হয়।”

তবে তো প্রশ্ন এসেই যায় , কেন তবে ল্যাবে তৈরি হীরা আজও জনপ্রিয় নয়?

ল্যাবে তৈরি হীরা এখনও বাজারে তাদের শক্ত অবস্থান জানান দিতে পারেনি। বাজারে জনপ্রিয় করতেই কিনা তারা এখনো অতিরিক্ত উৎপাদনের দিকে বেশি করে মনোযোগ দিচ্ছে।  গ্লোবাল ট্রেড রিসার্চ ইনিশিয়েটিভ তাদের এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে, ভারতের ল্যাব-উৎপাদিত হীরা শিল্প একটি বড় চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি। গত বছর এর দাম কমেছে ৬৫ শতাংশ। প্রতি ক্যারেটের দাম কমে ৬০ হাজার রুপি থেকে ২০ হাজার রুপিতে ঠেকেছে। অতিরিক্ত উৎপাদনে জোর দিতে গিয়েই নাকি এমনটা ঘটেছে দাবি করছে প্রতিবেদনটি।

‘আসল হীরা’ পক্ষের নেতিবাচক বিজ্ঞাপন

‘আসল’ হীরার ব্র্যান্ডগুলো ল্যাবে প্রস্তুত হীরার বিরুদ্ধে কৌশলে বিজ্ঞাপন প্রচার করছে। ডি বিয়ার্স একটি জুয়েলারি ব্র্যান্ড। ২০২৩ সালে প্রচারিত তাদের একটি বিজ্ঞাপন ল্যাবে প্রস্তুত হীরার ব্যবসায়ীদের বেশ অস্বস্তিতে ফেলে দেয়। ওই বিজ্ঞাপনে তারা ‘ভাল জিনিস তৈরি হতে সময় নেয়’ এর মতো ট্যাগলাইন ব্যবহার করে। ‘সেরা জিনিস প্রস্তুত হতে সময় নেয় কোটি বছর’- এমন ট্যাগ লাইনও তাদের প্রচারণায় দেখা যায়।

তাহলে কারা ল্যাবে প্রস্তুত হীরার ক্রেতা?

ডিআইএআই জুয়েলারির দিশা শাহ বলছেন, ল্যাব-উৎপাদিত হীরার ক্রেতা মূলত দুটি শ্রেণি। একটি হলো প্রচুর সম্পদশালী, যারা প্রধাণত উপহার দেওয়ার জন্য এই হীরা কেনেন। আরেকটি শ্রেণি হলো মধ্যবিত্ত, যার কম দামের কারণে এই হীরা স্বল্প পরিমাণে কিনতে পারেন।

অবশ্য আরও একটি শ্রেণির কথা বলেছেন দিশা শাহ। এরা হলেন জেন-জি প্রজন্ম। তিনি বলেন, “উৎপাদনের নৈতিক এবং স্থায়িত্ব প্রশ্নে জেন-জি’রা ‘ব্লাড ডায়মন্ড’ পরিহারের বিষয়ে সচেতন।”

যদিও ‘স্থায়িত্বে’র এই দাবির পক্ষে খুব বেশি শক্ত প্রমাণ নেই।

কৃত্রিম হীরা মধ্যবিত্তের হাতের নাগালে। আর প্রাকৃতিক হীরা হয়তো ভোক্তাকে ‘খাঁটি’ এবং ‘খানদানি’ অনুভূতি দেয়। দুটোই আসলে পাশাপাশি বাজারে অবস্থান করতে পারে। সকল ভোক্তার কথা চিন্তা করে মুখোমুখি অবস্থানের চেয়ে সহাবস্থানই শ্রেয়।  

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত