প্রতি বছরের দোল পূর্ণিমায় কুষ্টিয়ার ছেঁউড়িয়ার লালন সাঁইয়ের আখড়ায় তিনদিনের উৎসবে মেতে উঠেন দেশ-বিদেশের বাউলরা। এবার রমজান মাসের কারণে উদ্বোধনের দিনেই শেষ হলো লালন আখড়ার দোল উৎসব।
রীতি অনুযায়ী রবিবার সন্ধ্যায় আখড়ার পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া মরা কালিগঙ্গা নদীর তীরে স্থায়ী মঞ্চে উৎসবের উদ্বোধন হওয়ার কথা। কিন্তু জেলা প্রশাসন পরিচালিত লালন একাডেমি কর্তৃপক্ষ নিয়ম ভেঙে সংক্ষিপ্ত আলোচনা অনুষ্ঠানের মাধ্যমে একই সঙ্গে উৎসবের উদ্বোধন ও সমাপ্তি টানে।
বাংলা পঞ্জিকা অনুযায়ী রবিবার সকাল ৯টা ৫৪ মিনিটে দোল পুর্ণিমা তিথি শুরু হয়েছে। এ তিথি শেষ হবে সোমবার দুপুর ১২টা ২৯ মিনিটে। বাউল সম্রাট ফকির লালন সাঁইয়ের অনুসারীদের কাছে এ তিথি এক উন্মাদনার নাম।
এর আগে একবার ঈদের কারণে একদিন দেরিতে উৎসব শুরু হয়েছিল, তবে এই প্রথম একদিনেই শেষ হলো বাউল আখড়ার দোল উৎসব।
মরমি সাধক ফকির লালন সাঁই জীবদ্দশায় শিষ্যদের নিয়ে দোল পূর্ণিমায় কালীগঙ্গা নদীর তীরে সারা রাত তত্ত্বকথা আলোচনা ও গান বাজনা করতেন। বাংলা ১২৯৭ সনে তার মৃত্যুর পর ভক্ত-শিষ্যরা এ বিশেষ দিনটি নিজস্ব রীতিতে পালন করে আসছে বছরের পর বছর ধরে। লালন একাডেমি প্রতিষ্ঠার পর থেকে দোল পূর্ণিমা তিথিতে আখড়া বাড়িতে ৩ দিনের অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। মাঝে কিছুদিন উৎসবের কলেবর বাড়িয়ে ৫ দিন করা হলেও পরে আবার তা ৩ দিনে নামিয়ে আনা হয়।
লালন আখড়ার দোল উৎসবে দেশের দূর-দূরান্ত থেকে মানুষ এসে যোগ দেয়। সেই কাতারে যেমন লালন ভক্ত বাউলরা থাকেন, তেমনি থাকেন সাধারণ দর্শনার্থী। দেশের বাইরে থেকেও আসেন অনেকে। তবে এবার অনেকটা নীরবেই শেষ হলো উৎসবের আনুষ্ঠানিকতা। রমজান মাসের কারণে কেবল একদিনের আলোচনা সভার মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল এ উৎসব।
কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার গোয়াবাড়িয়া এলাকার বাউল আহমেদ ফকির বলেন, “আমরা রাতে গান বাজনা করলে নাকি রোজাদারদের বা তারাবি নামাজে সমস্যা হবে, তাই এবার উৎসব হচ্ছে একদিনের। আমরা বাবা নির্বিবাদী মানুষ। আমরা এ সিদ্ধান্ত মেনে নিয়েছি।”
অনেক লালনভক্ত উৎসব কাটছাঁটকে স্বাভাবিকভাবে নিলেও তা মানতে পারছেন না অনেকে। আগের মতোই নিজস্ব রীতিতে দিনটি পালন করবেন বলে জানান তারা।
সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরের বাউল লিয়াকত আলী বলেন, “গুরু লালন না মুসলিম না হিন্দু, তিনি না বৌদ্ধ না খ্রিষ্টান। লালনের ধর্ম মানব ধর্ম। আমরা যারা সাঁইজির অনুসারী তাদের ধর্মও মানব ধর্ম। আমরা তো অন্য কারও ধর্ম পালনে বাধা দেই না। তাহলে আমাদের ধর্মে কেন বাধা আসছে।”
কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলার ধর্মদহের বাউল জিল্লুর রহমান বলেন, “সরকার বা জেলা প্রশাসন কী অনুষ্ঠান করল বা করল না, তাতে আমাদের কিছু যায় আসে না। আখড়া বাড়িতে এসেছি, আমাদের রীতি নীতি পালন করে তবেই বাড়ি ফিরব।”
এ বিষয়ে লালন একাডেমির সদস্য সেলিম হক বলেন, “রমজানের পবিত্রতা রক্ষায় সংশ্লিষ্ট সবার মতামতের ভিত্তিতে উৎসব সংক্ষিপ্ত করা হয়েছে। এক্ষেত্রে প্রবীণ ও নেতৃস্থানীয় বাউলদেরও মতামত নেওয়া হয়েছে। যত দূর জানি এতে কারও দ্বিমত বা ক্ষোভ নেই।”