Beta
রবিবার, ১৯ মে, ২০২৪
Beta
রবিবার, ১৯ মে, ২০২৪

কলাম

বিষ্ণুপ্রিয়া মণিপুরী ভাষা আন্দোলন নিয়েও আলাপ জরুরি

পাভেল পার্থ । প্রতিকৃতি অঙ্কন: সব্যসাচী মজুমদার

কেবলমাত্র বাংলাদেশ বা বাংলা ভাষা নয়; আরও বহু ভাষার জন্য মানুষ জীবন দিয়েছে, আরও বহু দেশে ভাষার জন্য লড়াই হয়েছে। আসামে বাংলা ও বিষ্ণুপ্রিয়া মণিপুরী ভাষার জন্য আন্দোলন হয়েছে। বিষ্ণুপ্রিয়া মণিপুরী ভাষা আন্দোলনে ১৯৯৬ সালের ১৬ মার্চ শহীদ হন সুদেষ্ণা সিনহা। এ লেখা তার স্মৃতির প্রতি একটুকরো নিবেদন। 

বাংলাদেশ সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীতে উল্লেখ করা হয়েছে, ‘‘…রাষ্ট্র বিভিন্ন উপজাতি, ক্ষুদ্র জাতিসত্তা, নৃগোষ্ঠী ও সম্প্রদায়ের অনন্য বৈশিষ্ট্যপূর্ণ আঞ্চলিক সংস্কৃতি এবং ঐতিহ্য সংরক্ষণ, উন্নয়ন ও বিকাশের ব্যবস্থা গ্রহণ করিবেন।’’ সংবিধানে ‘আদিবাসী’ প্রত্যয়টি নেই। এমনকি সংবিধানে ‘ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী’ প্রত্যয়টিও নেই। সংবিধানে আছে ‘নৃগোষ্ঠী’— ‘ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী’ নয়। কিন্তু সরকারিভাবে বহুল ব্যবহৃত প্রত্যয়টিই হলো ‘ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী’।

‘ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান আইন ২০১০’ এর সংজ্ঞায়ন এবং দেশের আদিবাসী সমাজ থেকে ঘোষিত একক আত্মপরিচয় হিসেবে চলতি আলাপে ‘আদিবাসী’ প্রত্যয়টি ব্যবহৃত হচ্ছে।

বিষ্ণুপ্রিয়া মণিপুরী বাংলাদেশের এক ঐতিহাসিক জাতিসত্তা। ‘জনশুমারি ও গৃহগণনা ২০২২’ অনুযায়ী দেশে আদিবাসী জনসংখ্যা দেখানো হয়েছে ১৬ লাখ ৫০ হাজার ১৫৯ জন এবং জাতিসত্তা ৫০টি। এর ভেতর বিষ্ণুপ্রিয়া মণিপুরীদের সংখ্যা প্রায় অর্ধলাখ। মৈতৈ মণিপুরী, বিষ্ণুপ্রিয়া মণিপুরী এবং মৈতৈ মুসলিম বা পাঙন তিনটি পরিচয়কে মণিপুরী নামের একক পরিচয়ের অধিপতি চল আছে।

আবদুস সাত্তারের (১৯৭৫) মত অনেক ডাকসাইটে লেখক-গবেষকেরা এখনও পর্যন্ত এটি বহাল রেখে বলেন, ‘‘অন্যান্য উপজাতিদের মত মণিপুরী লোকসংস্কৃতিও খুব সমৃদ্ধ।’’ মৈতৈ মণিপুরী ভাষার বিশিষ্ট কবি একে শেরাম (২০০৮) মণিপুরী সাহিত্য সম্পর্কে বলতে গিয়ে বলেছেন, ‘‘মণিপুরী ভাষা ও সাহিত্য যথেষ্ট সমৃদ্ধ। মণিপুরী সাহিত্য বাংলা সাহিত্যের চাইতে প্রাচীন বলে বিবেচিত। উৎকর্ষের বিচারেও মণিপুরী সাহিত্য যথেষ্ট উন্নত। মণিপুরী লোকগীতিগুলো লোকসাহিত্যের ভান্ডার।’’

বাংলাদেশে শুভাসিস সিনহা বেশ পরিচিত বিষ্ণুপ্রিয়া মণিপুরী ভাষার লেখক। বিষ্ণুপ্রিয়া মণিপুরীদের মণিপুরী থিয়েটার স্থানীয় থেকে জাতীয় পর্যায়ে বেশ লড়াকু নাট্যদল এবং জনইতিহাস থেকে গণবিপ্লবের দ্রোহ ছড়িয়েছে চা বাগান থেকে সকল মণিপুরী বসত অবধি।

২০০৫ সালে প্রথম জানতে পারি বিষ্ণুপ্রিয়া মণিপুরী ভাষা আন্দোলনের কথা। ভাষা শহীদ সুদেষ্ণা সিনহার কথা। তখন পর্যন্ত এ সম্পর্কে দেশে কোনও লেখালেখি খুঁজে পাইনি। মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জের বিষ্ণুপ্রিয়া মণিপুরী গ্রামগুলো ঘুরে ২০০৬ সালে পত্রিকায় লিখি ‘বিষ্ণুপ্রিয়া মণিপুরী ভাষা আন্দোলন’। ২০০৭ সালে উত্তর-পূর্ব ভারতের আসাম রাজ্যের হাইলাকান্দি, করিমগঞ্জ ও শিলচর যাওয়া হয়। হাইলাকান্দি আশ্রমরোডের বাসায় বিস্তর আলাপ হয় শিক্ষক ও লেখক ব্রজেন্দ্র কুমার সিনহার সঙ্গে। শিলচরের জ্যোর্তিময় সিনহা, হাইলাকান্দির মণিময় সিনহা, প্রতিশ্রুতি মহিলা কল্যাণ সমিতির সুখদা সিনহারাও আলাপে অংশ নেন। ঘুরে দেখি করিমগঞ্জের কলকলিঘাট রেলস্টেশন। এখানেই মাতৃভাষার দাবিতে ১৯৯৬ সালের ১৬ মার্চ শহীদ হন সুদেষ্ণা সিনহা।

দেশে বিষ্ণুপ্রিয়া মণিপুরীদের শিল্পসাহিত্য ভুবন বেশ সক্রিয়। মণিপুরী শাড়ি, মণিপুরী নৃত্য কিংবা রাসলীলার জন্য বিষ্ণুপ্রিয়া মণিপুরী সংষ্কৃতি বেশ পরিচিত হলেও বিষ্ণুপ্রিয়া ভাষা আন্দোলন কী সুদেষ্ণা সিনহাকে এখনও বাংলাদেশে মাতৃভাষার আলাপের ময়দানে দেখা যায়নি।

দেশে ফিরে ‘দুনিয়ার প্রথম আদিবাসী ভাষা শহীদ’, ‘দুনিয়ার প্রথম রক্তক্ষয়ী আদিবাসী ভাষা আন্দোলন’, ‘ভাষা শহীদ সুদেষ্ণা সিনহা’ এমন শিরোনামে বেশকিছু লেখা লিখি। এর আগে কেবল জানা ছিল রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবিতে বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন আর বাংলা ভাষা শহীদদের কথা।

২৬ বছর পার হলেও বাংলাদেশে বিষ্ণুপ্রিয়া ভাষা আন্দোলন নিয়ে খুব একটা পাবলিক আলাপ বা তৎপরতা দেখিনি। দেশে বিষ্ণুপ্রিয়া মণিপুরীদের শিল্পসাহিত্য ভুবন বেশ সক্রিয়। মণিপুরী শাড়ি, মণিপুরী নৃত্য কিংবা রাসলীলার জন্য বিষ্ণুপ্রিয়া মণিপুরী সংষ্কৃতি বেশ পরিচিত হলেও বিষ্ণুপ্রিয়া ভাষা আন্দোলন কী সুদেষ্ণা সিনহাকে এখনও বাংলাদেশে মাতৃভাষার আলাপের ময়দানে দেখা যায়নি।

এমনকি আসামে বাংলাভাষার দাবিতে ১৯৬১ সালের ১৯ মে শহীদ ১১ ভাষাযোদ্ধার কথাও খুব একটা আলাপে আসে না। আরও আসে না ১৯৬০ সালের ৪ জুলাই অসমীয়া ভাষা আন্দোলনে শহীদ রঞ্জিত বরপূজারীর কথাও। বাংলাদেশের ভাষা আন্দোলনের গর্বিত সত্তর বছরে চলতি আলাপখানি বিষ্ণুপ্রিয়া মণিপুরী ভাষা আন্দোলন ও ভাষা শহীদ সুদেষ্ণা সিনহাকে স্মরণ করছে।

বরাক-ব্রহ্মপুত্র উপত্যকায় মাতৃভাষার দাবি

ভারতের উত্তর পূবাঞ্চলীয় রাজ্য আসামের দুটি প্রধান উপত্যকা, একটি ব্রহ্মপুত্র অপরটি বরাক। এই রাজ্যেই বাংলা, অসমীয়া ও বিষ্ণুপ্রিয়া মণিপুরী ভাষার জন্য শহীদ হয়েছেন ভাষাবিপ্লবীরা। ১৯২৭ সালে আসাম প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য সিলেটের গোলাপগঞ্জ থানার রণকেলী গ্রামের আবদুর হামিদ চৌধুরী (সোনা মিয়া) বাংলা ভাষায় প্রশ্ন করেন। জবাবে পরিষদের জুডিশিয়াল মেম্বার বলেন, ‘‘বাংলা ভাষায় প্রশ্ন করলে এর উত্তর দেওয়ার বিধান আইনে নাই।’’ তখন সিলেটের সব সদস্য রুখে দাঁড়ান। আসাম সরকার ১৯২৭ সালে বাংলা ভাষাকে পরিষদের ভাষা হিসেবে যুক্ত করে।

১৯৫২ সালেই আসামে অসমীয়া ভাষার সরকারি স্বীকৃতির জন্য আসামে আন্দোলন শুরু হয়। বাংলা ভাষার দাবিতে ১৯৬১ সালের ১৯ মে শহীদ আসামে কমলা ভট্টাচার্যসহ শহীদ হন ১১ জন।

বিষ্ণুপ্রিয়া মণিপুরী ভাষা আন্দোলন (১৯৫৫-১৯৯৬)

১৯৫৫ সাল থেকেই বিষ্ণুপ্রিয়া মণিপুরীরা মাতৃভাষার অধিকারের আন্দোলনে ঐক্যবদ্ধ হতে শুরু করেন। দাবি ছিল আসাম ও ত্রিপুরা রাজ্যে বিষ্ণুপ্রিয়া শিশুদের মাতৃভাষায় শিক্ষাদান। ভাষার দাবিতে গড়ে উঠে ‘সত্যাগ্রহ আন্দোলন’। ১৯৬১ সালের ২ জুলাই ভাষা পরিষদ ভাষা দাবি দিবস পালন করে। ভাষা পরিষদ ১৯৬৪ সালের ৭ জুলাই আসামের মূখ্যমন্ত্রীর কাছে একটি মেমোরেন্ডাম পেশ করেন। ১৯৬৮ সালের মে মাস থেকেই স্কুল, কলেজসহ রাস্তাঘাটে পিকেটিং, ধর্মঘট শুরু হয়। ১৯৬৯ সালের ১৫ অক্টোবর কাছাড়ের বিষ্ণুপ্রিয়া মণিপুরী শিক্ষার্থী ও যুবসমাজ রক্ত দিয়ে রক্তস্বাক্ষর কর্মসূচি পালন করে। ১৯৬৯ সালের ২২ অক্টোবর কাতিগড়া বন্ধ কর্মসূচি থেকে সাতজন ভাষাবিদ্রোহীকে গ্রেপ্তার করা হয়। ১৯৭০ সাল থেকে ভাষা আন্দোলন অন্য মোড় নেয়। ১৯৭০ সালের ১৯-৩০ এপ্রিলের ভেতর কাছাড়, ত্রিপুরা ও শিলং-এ ২৪ ঘন্টার গণঅনশণ করেন বিষ্ণুপ্রিয়া ভাষাবিদ্রোহীরা।

১৯৮২ সালের ২৫ জানুয়ারি আসামের শিল্প মন্ত্রণালয় ও ‘বিষ্ণুপ্রিয়া মণিপুরী ছাত্র ইউনিয়নের’ ভেতর একটি বৈঠক হয়। ১৯৮৩ সালের ২৫ অক্টোবর আসামের রাজ্য সরকারের কেবিনেট মিটিংয়ে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয় যে, কাছাড় ও করিমগঞ্জ জেলার স্কুলগুলোতে বিষ্ণুপ্রিয়া মণিপুরী ভাষাকে প্রাথমিক পর্যায়ে অন্তর্ভুক্ত করার। ১৪ নভেম্বর ১৯৮৩ তারিখে বিষ্ণুপ্রিয়া মণিপুরী ভাষা চালু বিষয়ক একটি নোটিফিকেশন হয়, কিন্তু দুঃখজনকভাবে ৮ ডিসেম্বর ১৯৮৩ তারিখে তা স্থগিত করা হয়। ১৯৯২ সালের ২১ অক্টোবর বরাক উপত্যকার বারমুনি, কাটাখাল, কালানি, পাথাবরকান্দিতে ২৪ ঘন্টার জাতীয় সড়ক অবরোধ কর্মসূচি পালন করা হয়।

১৯৯২ সালের ৩ ডিসেম্বর আসামের মূখ্যমন্ত্রী হিতেশ্বর শইকিয়া দিসপুরে এক বৈঠক আহ্বান করেন। বিষ্ণুপ্রিয়া মণিপুরী ভাষা আন্দোলনের ইতিহাসে রাষ্ট্রের মূখ্যমন্ত্রী স্তরে এটিই ছিল কোনও প্রথম আনুষ্ঠানিক বৈঠক। ১৯৯৩ সালের ২০ ডিসেম্বরও বরাক উপত্যকার অনেক সড়কে ৭২ ঘন্টার অবরোধ কর্মসূচি পালিত হয়। আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় ১৯৯৫ সালের ২৬ মে ত্রিপুরা রাজ্য সরকার ত্রিপুরা রাজ্যের প্রাথমিক স্কুলগুলোতে বিষ্ণুপ্রিয়া মণিপুরী ভাষাকে অন্তর্ভুক্ত করে।

দেশে বিষ্ণুপ্রিয়া মণিপুরীদের শিল্পসাহিত্য ভুবন বেশ সক্রিয়। মণিপুরী শাড়ি, মণিপুরী নৃত্য কিংবা রাসলীলার জন্য বিষ্ণুপ্রিয়া মণিপুরী সংষ্কৃতি বেশ পরিচিত হলেও বিষ্ণুপ্রিয়া ভাষা আন্দোলন কী সুদেষ্ণা সিনহাকে এখনও বাংলাদেশে মাতৃভাষার আলাপের ময়দানে দেখা যায়নি।

জানামতে, দুনিয়ায় দুইজন নারী ভাষার লড়াইয়ে প্রাণ দিয়েছেন। দুইজনই ভারতের বরাক উপত্যকা এলাকার। কমলা ভট্টাচার্য আসামের বাংলা ভাষা আন্দোলনে এবং সুদেষ্ণা সিনহা বিষ্ণুপ্রিয়া মণিপুরী ভাষা আন্দোলনে শহীদ হন। সুদেষ্ণা শহীদ হয়েছিলেন করিমগঞ্জের কলকলিঘাট রেলস্টেশনে।

আসাম রাজ্যের ইলিমেন্টারি এডুকেশনের ডেপুটি ডিরেক্টর ২০০১ সালের ৭ ফেব্রুয়ারি বরাক উপত্যকার বিষ্ণুপ্রিয়া মণিপুরী অধ্যুষিত গ্রামের ৫২টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বিষ্ণপ্রিয়া মণিপুরী ভাষার প্রথম পাঠ্য পুস্তক ‘কনাক পাঠ’ তৃতীয় শ্রেণিতে চালু করার সিদ্ধান্ত নেন। ২০০১ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি থেকে তা বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। ২০০৬ সালের ৮ মার্চ ভারতের সুপ্রিমকোর্ট ‘বিষ্ণুপ্রিয়া মণিপুরী’ শব্দটি লেখার রাষ্ট্রীয় অনুমোদন দেয়।

ভাষা শহীদ সুদেষ্ণা সিংহ

জানামতে, দুনিয়ায় দুইজন নারী ভাষার লড়াইয়ে প্রাণ দিয়েছেন। দুইজনই ভারতের বরাক উপত্যকা এলাকার। কমলা ভট্টাচার্য আসামের বাংলা ভাষা আন্দোলনে এবং সুদেষ্ণা সিনহা বিষ্ণুপ্রিয়া মণিপুরী ভাষা আন্দোলনে শহীদ হন। সুদেষ্ণা শহীদ হয়েছিলেন করিমগঞ্জের কলকলিঘাট রেলস্টেশনে। ২০০৭ সালেই কলকলিঘাটে গিয়ে জানতে পারি, সুদেষ্ণা সিনহার পরিবার কোনও ক্ষতিপূরণ বা সহযোগিতা পাননি। তার মা মানসিকভাবে বিপর্যস্ত। সুদেষ্ণা তখন উচ্চমাধ্যমিকে অধ্যয়নরত ছিলেন।

সুদেষ্ণা সম্পর্কে বলতে গিয়ে এক প্রবীণ নারী জানান, ‘চাকগ কংগালা’। মানে তার মনটা খুব নরম ছিল। স্কুল থেকেই সুদেষ্ণা নানা সাংস্কৃতিক ও সামাজিক কর্মসূচিতে জড়িত ছিলেন। দরিদ্র পরিবারের মেয়ে হওয়ায় পড়াশোনা, সংসার এবং সামাজিক কর্মসূচি চালাতে বেশ বেগ পেতে হয়েছিল। কিন্তু সুদেষ্ণা নিজ জাতির আত্মপরিচয়ের নিদর্শন হিসেবে মাতৃভাষার অধিকারের দাবিতে সোচ্চার ছিলেন। যা আমরা বায়ান্নতে একুশে ফেব্রুয়ারিতে দেখতে পাই বাংলাদেশে।     

সব ভাষার মর্যাদা

বিষ্ণুপ্রিয়া মণিপুরীদের ঠার ভাষার জন্য দীর্ঘদিনের যে রক্তক্ষয়ী সংগ্রাম সেই সংগ্রামের প্রতি আমাদেরও মনোযোগ রাখা জরুরি। ২০০০ সালে দুনিয়ার ১৮৮টি দেশ ২১শে ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। বাংলাদেশে স্থাপিত হয়েছে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট। এখনও দেশের সকল আদিবাসী জাতিসত্তার মাতৃভাষা সমান স্বীকৃতি ও মর্যাদা পায়নি।

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট পরিচালিত ২০১৮ সালের শেষে হওয়া ভাষাগত জরিপের তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে আদিবাসীদের ৪০টি মাতৃভাষা আছে। এর ভেতর কন্দ, খাড়িয়া, কোডা, সৌরা, মুন্ডারি, কোল, মালতো, খুমি, পাংখোয়া, রেংমিটচা, চাক, খিয়াং, লুসাই ও লালেং— এই ১৪টি আদিবাসী মাতৃভাষা বিপন্ন।

আজ আন্তর্জাতিকভাবে মনোযোগ তৈরি হয়েছে দুনিয়ার সকলের মাতৃভাষাকে স্বীকৃতি ও গুরুত্ব দেওয়ার। বলা হয়ে থাকে, দুনিয়ায় চলতি সময়ে সাত হাজারেরও বেশি ভাষা আছে যার অর্ধেকেরও বেশি ভাষা বিলুপ্তির পথে।

বাংলাদেশে প্রায় ত্রিশ লাখ আদিবাসী জাতিসত্তার মাতৃভাষা সুরক্ষা প্রশ্নে আমাদের কাঠামোগত তৎপরতা জরুরি। ভাষা শহীদ সালাম, বরকত, রফিক, শফিক, কমলা ভট্টাচার্য, রঞ্জিত বরপূজারী কিংবা সুদেষ্ণা সিনহা জীবন দিয়ে মাতৃভাষার আওয়াজ প্রমাণ করে গেছেন।

তাই সকল মাতৃভাষার প্রতি সমমর্যাদা ও স্বীকৃতির সংস্কৃতি আমাদের প্রতিষ্ঠা করতে হবে। ১৬ মার্চ, ১৯ মে কিংবা ৪ জুলাই তারিখগুলি পাবলিক পরিসরে আয়োজনের ভেতর দিয়ে ২১শে ফেব্রুয়ারিকে আমরা আরও বেশি আমাদের সকলের করে তুলতে পারি সকল মাতৃভাষার সম্মান ও স্বীকৃতির এক বৈশ্বিক ময়দানে।

লেখক: প্রাণ ও প্রতিবেশ বিষয়ক গবেষক ও লেখক।
ইমেইল: animistbangla@gmail.com

ad

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত