নব্বইয়ের দশকের স্বৈরাচারবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম নেতা শফী আহমেদকে শেষবারের মতো দেখতে মানুষের ঢল নেমেছিল তার নেত্রকোণার বাড়িতে।
মঙ্গলবার বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে ঢাকা থেকে শফী আহমেদের লাশবাহী গাড়িটি পৌঁছে নেত্রকোণা শহরের মোক্তারপাড়ার আজিজ ভবনে। প্রিয় মানুষটিকে শেষবারের মতো দেখতে সেখানে স্বজনদের পাশাপাশি ভিড় জমান দলীয় নেতা-কর্মী, সহযোদ্ধা, অনুসারীসহ নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ।
সন্ধ্যায় মাগরিবের নামাজের পর মোক্তারপাড়া মাঠে শফী আহমেদের জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। এতে অংশ নেন হাজারো মানুষ।
এর আগে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সাংস্কৃতিক বিষয়ক সম্পাদক অসীম কুমার উকিল দলীয় পতাকা দিয়ে ঢেকে দেন শফী আহমেদের মরদেহ। এরপর তাকে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানাতে শুরু করেন সবাই।
স্থানীয় সংসদ সদস্য আশরাফ আলী খান খসরু, নেত্রকোণা-৩ আসনের সংসদ সদস্য ইফতিখার উদ্দিন তালুকদার পিন্টু, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অসিত সরকার সজল, পৌর মেয়র নজরুল ইসলাম খান, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আমিরুল ইসলাম, জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি প্রশান্ত রায়, সাধারণ সম্পাদক শামছুর রহমান, সদর উপজেলা চেয়ারম্যান মারুফ হাসান খান অভ্রসহ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির জেলা পর্যায়ের নেতাকর্মী, জেলা ছাত্রলীগ, ছাত্র ইউনিয়ন, উদীচীসহ আওয়ামী লীগের সহযোগী ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মী, বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনের পক্ষ থেকে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানো হয়।
এসময় শফী আহমেদের স্মৃতিচারণ করেন তারা। পরে সাবেক এই ছাত্রনেতার লাশ নেওয়া হয় নেত্রকোণা সদর হাসপাতালের হিমাগারে। দাফন হওয়ার আগ পর্যন্ত সেখানেই সংরক্ষণ করা হবে তার লাশ।
জেলা আওয়ামী লীগের শিক্ষা ও মানবসম্পদ উন্নয়ন বিষয়ক সম্পাদক গাজী মোজাম্মেল হোসেন টুকু জানান, আগামীকাল সকাল ১০টায় গ্রামের বাড়ি মদন উপজেলা সদরে জানাজা শেষে নেত্রকোণা পৌর কবরস্থানে শফী আহমেদকে দাফন করা হবে।
সোমবার বিকালে উত্তরায় নিজের বাসায় ঘুমের মধ্যেই হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান ৬২ বছর বয়সী এই নেতা। সে রাতেই উত্তরার সাত নম্বর সেক্টর মসজিদে তার প্রথম জানাজা অনুষ্ঠিত হয়।
এরপর মঙ্গলবার বেলা ১১টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদে তার দ্বিতীয় জানাজা হয়। সেখান থেকে লাশ নেওয়া হয় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে। সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের এই আয়োজনে বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতা-কর্মীরা ফুল দিয়ে তার প্রতি শ্রদ্ধা জানান।
নব্বইয়ের স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে যারা মুখ্য ভূমিকা রেখেছিলেন তাদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন শফী আহমেদ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের এই ছাত্র সেসময় ছিলেন জাসদ ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক।
এরপর বাংলাদেশ আওয়ামী লীগে যোগ দেন তিনি। দলটির কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সম্পাদক ছিলেন, পরে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক উপ-কমিটির সদস্যও হন।
২০০৭ সালের বাতিল হওয়া নির্বাচনে নেত্রকোনা-৪ আসন থেকে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছিলেন শফী আহমেদ। কিন্তু সেবার নির্বাচন না হওয়ায় তার আর ভোট করা হয়নি।
এরপর গত চারটি সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চেয়েছিলেন, কিন্তু পাননি। সর্বশেষ ২০২৪ সালের জানুয়ারি অনুষ্ঠিত দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছিলেন শফী আহমেদ। তবে তার মনোনয়ন ফরম বাতিল হয়ে যায়।