শেষবারের মতো শ্রদ্ধায় সিক্ত হলেন সনজীদা খাতুন। ঢাকার ধানমন্ডিতে ছায়ানট ভবনে সনজীদা খাতুনের শেষবিদায়ে অংশ নেন অনেকে।
এরপর ঢাকার জাতীয় শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা জানানো হয় সনজীদা খাতুনকে। সেখানে তার প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে আসেন সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব, রাজনীতিবিদ, সাংবাদিক, শিক্ষকসহ সর্বস্তরের মানুষ।
আমৃত্যু ছায়নটের সভাপতির দায়িত্ব পালন করা সনজীদা খাতুনকে ছায়ানটে বিদায় জানানো হয় গানে গানে। শ্রদ্ধা জানানোর মঞ্চে গান পরিবেশন করেন বুলবুল ইসলাম, শাহীন সামাদ, লাইসা আহমেদ লিসা, পার্থ তানভীর নভেদ, রুচিরা তাবাসসুমসহ আরও অনেকে। ‘তুমি যে সুরের আগুন লাগিয়ে দিলে মোর প্রাণে’, ‘কান্না হাসির দোল দোলানো’ গানে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয় তার প্রতি।
ছায়ানটের সহসভাপতি ও প্রাবন্ধিক মফিদুল হকও ছিলেন সেখানে।
ছায়ানটে তাকে শ্রদ্ধা জানাতে এসেছিলেন ফাহমিদা খাতুন, ইফফাত আরা দেওয়ান, মিনু হক, খায়রুল আনাম শাকিল, রামেন্দু মজুমদার, খুরশীদ আলম, সেলিনা মালেক চৌধুরী, শামীম আরা নীপা, শিবলী মহম্মদসহ আরও অনেকে।
এরপর সনজীদা খাতুনের মরদেহ নেওয়া হয় শহীদ মিনারে। সেখানে গান, কবিতা ও ফুল দিয়ে তাকে শ্রদ্ধা জানানো হয়। ‘আমার প্রাণের মানুষ আছে প্রাণে’সহ বেশ কয়েকটি গান সেখানে পরিবেশন করেছেন শিল্পীরা।
সেখানে সনজীদা খাতুনের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে আসেন সংগীতশিল্পী লুভা নাহিদ চৌধুরী, ছিলেন ভাস্বর বন্দ্যোপাধ্যায়। সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব, রাজনীতিবিদ, সাংবাদিক, শিক্ষকসহ সর্বস্তরের মানুষ তার প্রতি শেষ শ্রদ্ধা জানাতে আসেন। সবশেষে জাতীয় সংগীতের মধ্য দিয়ে শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা জ্ঞাপন শেষ হয়।
গত শতকের ষাটের দশকে বাঙালির স্বাধিকারের দাবি স্বাধিনতার চেতনায় রূপায়নের ক্ষেত্রে যে ছায়ানটের ছিল গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা, ১৯৬১ সালে তা গড়ে তোলার অন্যতম কারিগর ছিলেন সনজীদা খাতুন। সনজীদা খাতুনের চিন্তার-লেখার বড় অংশজুড়ে ছিলেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। ব্যাপক পরিসরে জনমানসে কবিগুরুকে পৌঁছে দেওয়ার কাজে ঐতিহাসিক ভূমিকায় ছিলেন তিনি।
গত কয়েক বছর ধরেই বাধর্ক্যজনিত নানা শারীরিক সমস্যায় ভুগছিলেন সনজীদা খাতুন। উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিসে ভুগছিলেন। তার কিডনিরও সমস্যা ছিল।
অবস্থার অবনতি ঘটায় ধানমণ্ডির বাড়ি থেকে গত ১৯ মার্চ তাকে পান্থপথের স্কয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। জটিল অবস্থার কারণে তাকে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) রাখা হয়েছিল।
সনজিদা খাতুনের স্বামী লেখক, গবেষক ওয়াহিদুল হক ২০০৭ সালে মারা যান। তাদের ছেলে পার্থ তানভীর নভেদ, মেয়ে রুচিরা তাবাসসুম নভেদ। আরেক মেয়ে অপালা ফারহদ নবেদ অকালে মারা যান।
সনজীদা একাধারে ছিলেন রবীন্দ্রসঙ্গীত শিল্পী, শিক্ষক, লেখক, গবেষক, সংগঠক, সঙ্গীতজ্ঞ। দেশে একুশে পদক, বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কারের পাশাপাশি ভারত সরকারের বেসামরিক সম্মাননা ‘পদ্মশ্রী’ খেতাবে ভূষিত ছিলেন তিনি। পশ্চিমবঙ্গের রবীন্দ্র স্মৃতি পুরস্কারেও ভূষিত তিনি।
সনজীদা খাতুন ১৬টি গ্রন্থের রচয়িতা। ছায়ানটের সহযোগী প্রতিষ্ঠান ‘নালন্দা বিদ্যালয়’র সভাপতিও ছিলেন তিনি।
শহীদ মিনারে শ্রদ্ধাজ্ঞাপন শেষে তার মরদেহ ঢাকা মেডিকেল কলেজের হিমঘরে রাখা হয়। এরপরের কার্যক্রম নিয়ে এখনও কোনও সিদ্ধান্ত হয়নি বলে জানিয়েছে পরিবার।