জামায়াতে ইসলামীকে নিষিদ্ধ করা হচ্ছে সন্ত্রাসবিরোধী আইনে, আর সেই প্রজ্ঞাপন কিছুক্ষণের মধ্যেই জারি হচ্ছে।
আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বৃহস্পতিবার দুপুরে সচিবালয়ে সাংবাদিকদের এই খবর দিয়েছেন। দলটি আনুষ্ঠানিকভাবে নিষিদ্ধের পর এর নেতা-কর্মীদের কী হবে, তা নিয়েও কথা বলেন তিনি।
তিনি বলেন, “সন্ত্রাসবিরোধী আইনের ১৮ (১) ধারায় জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ছাত্রশিবিরসহ এর অঙ্গ সংগঠনগুলোকে রাজনৈতিকভাবে নিষিদ্ধ করা হচ্ছে। প্রজ্ঞাপন কিছুক্ষণের মধ্যেই জারি করবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।”
২০০৯ সালে প্রণীত সন্ত্রাসবিরোধী আইনের ‘নিষিদ্ধ ঘোষণা ও তালিকাভুক্তকরণ’ শিরোনামের ১৮ অনুচ্ছেদের ১ নম্বর ধারায় সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে জড়িত যে কোনও ব্যক্তি বা সত্তাকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করতে পারে সরকার।
বাংলাদেশের অখণ্ডতা, সংহতি, জননিরাপত্তা বা সার্বভৌমত্ব বিপন্ন করার জন্য জনসাধারণ বা জনসাধারণের কোনও অংশের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টির মাধ্যমে সরকার বা কোনও সত্তা বা কোনও ব্যক্তিকে কোনও কাজ করতে বা করা থেকে বিরত রাখতে বাধ্য করিবার উদ্দেশ্যে কিছু কাজকে আইনটিতে অপরাধ হিসাবে গণ্য করা হয়েছে।
তবে এই আইন ব্যবহার করে সরকার যেমন প্রজ্ঞাপন দিয়ে কোনও ব্যক্তি কিংবা দলকে নিষিদ্ধ করতে পারে। তেমনি তা প্রত্যাহারও করে নিতে পারে; যা আইনের ১৮ অনুচ্ছেদেরেই দ্বিতীয় ধারায় বলা আছে।
জামায়াত নিষিদ্ধের পর এর নেতা-কর্মীদের কী হবে- এই প্রশ্নে আইনমন্ত্রী বলেন, “গণহারে তাদের বিচার করা হবে না। ১৯৭১ সালের পরে যারা জন্ম নিয়েছে, তাদের বিচার করা হবে না। বাংলাদেশে আইন আছে, তারা যদি কোনও অপরাধ করে, সেক্ষেত্রে আইন অনুযায়ী বিচার হবে।”
একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতার সঙ্গে বাঙালি হত্যাকাণ্ডে পাকিস্তানি বাহিনীকে সহযোগিতাকারী দল হিসাবে জামায়াতকে নিষিদ্ধের দাবি বাংলাদেশে দীর্ঘদিনের।
একাত্তরের যুদ্ধাপরাধের বিচারে গঠিত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল এক রায়ে জামায়াতকে ‘ক্রিমিনাল দল’ আখ্যায়িত করার পর দল হিসাবে তাদের বিচারের দাবিও উঠেছিল গণজাগরণ আন্দোলন থেকে।
সেই বিচারের পথ তৈরি করতে আইন সংশোধনের উদ্যোগ নেওয়ার কথা সরকার বললেও এক দশকেও তা হয়নি।
এর মধ্যে কোটা সংস্কারের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনকে কেন্দ্র করে সহিংসতার জন্য জামায়াত-শিবিরকে দায়ী করে গত সোমবার ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলের বৈঠকে দলটিকে নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত আসে। এরপর নিষিদ্ধের প্রক্রিয়া শুরু করে সরকার।
আইনমন্ত্রী বলেন, “গত পরশু প্রথমে ১৪ দলের একটি সভা হয়েছিল, সেখানে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল যে জামায়াতে ইসলামীকে রাজনৈতিকভাবে নিষিদ্ধ করা হবে।
“তবে এটার একটা আইনি প্রক্রিয়া আছে, সেটা আমরা গত পরশু শুরু করেছিলাম। এর মধ্যে এই নিষিদ্ধের যে গেজেট প্রকাশ করা হবে, সেটারও কিছু আইনি বাধ্যবাধকতা আছে, সেগুলো পূরণ করতে হবে। যে কারণে গতকাল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সেই আইনি বাধ্যবাধকতা পূরণ করে আমার মন্ত্রণালয়ের লেজিসলেটিভ বিভাগে পাঠিয়েছে, এরপর সেটিকে ভেটিং করে আবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়ে দিয়েছি।”
সরকারের এই পদক্ষেপ যুদ্ধাপরাধী দল হিসাবে জামায়াতের বিচারের পথ আটকে দেবে কি না- এ প্রশ্নের উত্তরে আইনমন্ত্রী বলেন, “নিষিদ্ধ করলেও আদালতে শাস্তি দেওয়া যাবে না, এমনটি নয়। যেহেতু ব্যান হয়ে গেছে, তাই হয়, তো আর ব্যান করার ব্যাপারটা আর সাজার মধ্যে আসবে না।”
জামায়াতে ইসলামী এরই মধ্যে সরকারের পদক্ষেপের প্রতিবাদ জানিয়েছে। ১৪ দলের বৈঠকের পরপরই দলটি এক বিবৃতিতে বলেছে, “এরকম একটি গণতান্ত্রিক সংগঠনকে নিষিদ্ধ করার দাবি বেআইনি, এখতিয়ারবহির্ভূত ও সংবিধান পরিপন্থি। জনগণ ১৪ দলের এই দাবি গ্রহণ করবে না।”