“কালো প্যান্ট, সাদা শার্ট, গলায় টাইসহ কালো কোট পরা মানুষ দেখতে খুবই চমৎকার লাগত ছোটবেলা। বিশেষ করে আইনজীবীদের দেখলে। তখন বাবার সঙ্গে চাচাদের জমি বিরোধ নিয়ে মাঝে-মধ্যে কোর্টে যাতায়াত ছিল। আইনজীবীরা যে কত কৌশলে সাধারণ মানুষের সম্পত্তি ও অধিকার রক্ষা করে আসছেন।
“তাই ছোট থেকেই মনে হতো- এই মহৎ পেশায় আসতে পারলেও আমিও মানুষের পাশে দাঁড়াতে পারব, পরিবারেরও হাল ধরতে পারব। সেই থেকে মনের মধ্যে জেদ কাজ করত- আমিও একদিন আইনজীবী হব। এরপর শুরু হয় আমার জীবনের আসল চ্যালেঞ্জ। কারণ পারিবারিকভাবে অসচ্ছলতা ছিল। অনেক কঠিন পথ পাড়ি দিয়ে আইনজীবী হয়েছি। কিন্তু এই পেশায় এসে দুর্বিষহ জীবন কাটছে।”
ঢাকা আইনজীবী সমিতির নবীন সদস্য অ্যাডভোকেট সোহেল রানা (ছদ্মনাম) এভাবেই সকাল-সন্ধ্যাকে জানাচ্ছিলেন অনেক প্রত্যাশা নিয়ে আইন পেশায় এসে হতাশায় ডুবে থাকার কথা।
সোহেল রানা বলেন, “বাবা অনেক ছোট থাকতেই মারা যান। আমি যখন ক্লাস ফাইভে পড়ি তখন মা, দুই ভাই ও দুই বোন রেখে বাবা মারা যায়। আমি ভাই-বোনদের মধ্যে ছোট। বাবার মৃত্যু পর সংসারের সব দায়িত্ব পড়ে বড় ভাইয়ের উপর। আমার পড়ালেখা এক পর্যায়ে বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়।
“নিকটাত্মীয়, স্বজনদের আর্থিক সহযোগিতায় এইচএসসি পাস করি। এরপর বাড়ি থেকে নিজের খরচে পড়ালেখা করতে বলা হয়। ওই সময় কী করবো, কোনও কূল-কিনারা পাচ্ছিলাম না। কিন্তু আমার বাসনা ছিল- যে করেই হোক আইনজীবী হতে হবে। অনেক চিন্তা-ভাবনা করে নিজ জেলা খুলনা ছেড়ে থেকে ঢাকায় চলে আসলাম।
“এরপর একটা প্রাইভেট ইউনিভার্সিটিতে ল তে অনার্সে ভর্তি হই। পড়ালেখার পাশাপাশি গার্মেন্টস সেক্টরে কাজ নেই। শুরু হয়, আমার জীবনে আসল স্ট্র্যাগল। অনেক কষ্টে পড়ালেখা শেষ করে কয়েক ধাপে পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে ২০২৩ সালে বার কাউন্সিলের সনদ প্রাপ্ত হই। শুরু হয় আইন পেশায় নতুন অধ্যায়।”
পরিবারের হাল ধরার যে আশায় সোহেল রানা আইন পেশায় এসেছিলেন তার সেই আশা এখন দুরাশায় পরিণত হয়েছে।
সকাল সন্ধ্যাকে তিনি বলেন, “প্রথমে ভেবেছিলাম বার কাউন্সিলের সনদ থাকলে সব কিছুই সম্ভব। কিন্তু এখন মনে হচ্ছে সব ভুল। প্রতিটি ক্ষেত্রেই বিভিন্ন বাধার সম্মুখীন হচ্ছি। নিজের মামলা-মোকদ্দমা না থাকায় তেমন ইনকামও হয় না। সিনিয়ার যা দেন, তা দিয়ে কোনও রকম চলে যাচ্ছে।
“নিজেই চলতে হিমশিম খাচ্ছি। পরিবারকে কী দিব? মঝেমধ্যে মনে হয় এই পেশায় না থেকে যদি অন্যত্রে কাজ করতাম তাহলে হইতো আরও ভালো কিছু করতে পারতাম। স্বপ্নের দ্বারপ্রান্তে এসেই স্বপ্নভঙ্গ।”
সোহেল রানার মতো হতাশার কথা শোনালেন ঢাকা জজ কোর্টের নবীন আইনজীবী আশরাফুল ইসলাম। তিনিও সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছেন। তার ধারণা, নবীন আইনজীবীদের ৮৫ শতাংশই খুবই অসহায় অবস্থায় জীবন কাটাচ্ছেন।
আশরাফুল ইসলাম সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, “আইন পেশাকে দেশের স্বাধীন পেশা হিসেবে গণ্য করা হয়। অথচ এই পেশাজীবীরা বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি অবহেলিত। একজন ডাক্তার ইন্টার্ন করার সময়ও বেতন পায়। আর ইঞ্জিনিয়াররা ইন্টার্ন করার সময়ও সম্মানী পায়। আমরা তার কোনওটাই পাই না।
“সত্যি কথা হলো- নবীন আইনজীবীদের মধ্যে ৮৫% খুবই অসহায় অবস্থায় আছেন। ব্যক্তিগত মামলা মোকদ্দমা পেতে পেতে অনেক সময় লেগে যায়। নবীন আইনজীবী বলে অনেকেই কাজও দিতে চায় না। কীভাবে বোঝাব- নবীন আইনজীবীরা কতটা কষ্টের মধ্যে রয়েছে। অল্প আয়ে বাবা-মা, বউ সংসার নিয়ে খুব টানাপড়েনে থাকতে হয়।”
নবীন এই আইনজীবী আরও বলেন, “মামলায় কোনও ক্ষেত্রে ভুল হলে সিনিয়র/বিচারকের কাছে কত যে লাঞ্ছনার শিকার হতে হয়। প্রতিটা পদে কাঁটাময় রাস্তা পাড়ি দিতে হচ্ছে। নবীন আইনজীবীদের সময় অনেক কষ্টকর। কোর্ট অঙ্গনে একটা কথা খুব প্রচলিত- ‘নবীন আইনজীবীরা টাকার অভাবে খেতে পান না আর প্রবীণ হলে টাকা থাকে কিন্তু খাওয়ার জন্য দাঁত থাকে না।’”
নবীন পুরুষ আইনজীবীদের তুলনায় নারী আইনজীবীদের জীবন আরও কঠিন বলে বলে মনে করেন অ্যাডভোকেট অনন্যা সুলতানা, যিনি ২০২১ সালে ঢাকা বারের সদস্য হয়েছেন।
অনন্যা সুলতানা জানান, ঢাকা বারের সদস্য হলেও আইন পেশায় তিনি নেই। সংসার সামলাচ্ছেন।
তিনি বলেন, “পুরুষ নবীন আইনজীবীরা অনেক কষ্টে এ পেশাকে আঁকড়ে ধরে রাখতে পারলেও অধিকাংশ নারী পারেন না। নারীদের শত বাধা আসে এ পেশায়। এসব সামলিয়ে এ পেশাকে ধরে রাখা অনেক কঠিন ও কষ্টসাধ্য।”
অনন্যা সুলতানার ধারণা, নারীদের মধ্যে যারা এই পেশায় আসছে তার মধ্যে ৯০ শতাংশই ঝরে পড়েছেন। অনেকেই পারিবারিক, আর্থিক ও সিনিয়রজনিত সমস্যার কারণে এ পেশা ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন।
“মেয়েদের তো এমনিতেই পড়ালেখা শেষ করা কঠিন। তার ওপর সংসার, বাচ্চা রেখে কোর্টে এসে প্র্যাকটিস করা অনেক কঠিন বিষয়। প্র্যাকটিস জীবনে তো অনেক রকমের বাধা-বিপত্তি আছেই, সেটা না-ই বা বললাম”, বলেন অনন্যা সুলতানা।
ঢাকা আইনজীবী সমিতিকে বলা হয় এশিয়ার বৃহত্তম বার। এখানে আইন পেশায় রয়েছেন ৩০ হাজারেরও বেশি আইনজীবী।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ঢাকা বারের এক আইনজীবী বলেন, “স্বপ্ন নিয়ে আইন পেশায় এসেছি। কিন্তু নিজের কাজ না থাকায় অনেক বড় ধাক্কা খেতে হচ্ছে। সিনিয়র আইনজীবী যে সম্মানী দেন তা দিয়ে ঠিকমত চলাই দুষ্কর। আমার মতো নবীন আইনজীবীরা বেশিরভাগই দুর্দশায় পড়েন।”
ঢাকা বারের শিক্ষানবিশ আইনজীবী সুমন হাওলাদার মনে করেন, বারের সনদ থাকলে এক রকম চলে যায়। কিন্তু না থাকলে দুর্বিষহ জীবন-যাপন করতে হয়।
সুমন হাওলাদার সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, “বার কাউন্সিলে কয়েক বার পরীক্ষা দিয়ে কৃতকার্য হতে পারিনি। আমার বন্ধু-বান্ধবরা অনেকেই হাইকোর্টের আইনজীবী হয়ে গেছে। কোর্ট এলাকায় ওদেরকে দেখলে নিজেকে খুব ছোট মনে হয়। নিজেকে আলাদা করে সবসময় গুটিয়ে রাখার চেষ্টা করি। সনদ হয়নি বলে প্রতিটি মুহূর্তে অপমানিত হতে হয়।
“সিনিয়র, কোর্টের স্টাফ থেকে শুরু করে সকলের কাছে হেয়-প্রতিপন্ন হই। ইনকাম বলতে কোনোরকমে দুমুঠো ভাত খেয়ে বেঁচে আছি। এই পেশার সাথে এমনভাবে জড়িয়ে গেছি চাইলেও বের হতে পারছি না। মাঝেমধ্যে মনে হয় ভুল পেশায় চলে আসলাম না তো?”
সুমন হাওলাদারের অভিযোগ, শিক্ষানবিশ আইনজীবীদের প্রতিটি পদক্ষেপে বাধার মুখে পড়তে হয়। সনদ না থাকায় পরিবার ও সমাজের অনেকের কাছে বার বার লাঞ্ছনার শিকার হতে হচ্ছে।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ঢাকার সিএমএম আদালতের রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী এম কাউসার আহমেদবলেন, “অক্লান্ত পরিশ্রম আর মেধা খাটিয়ে স্বপ্ন জয়ের দ্বারপ্রান্তে আইনজীবী হিসেবে তালিকাভুক্ত হয় নবীনরা। কেউ সাত বছর, কেউবা পাঁচ বছর, আবার কেউ দুই/তিন বছর পরিশ্রমের পর ধাপে ধাপে উত্তীর্ণ হয়েছেন বার কাউন্সিলের সনদপ্রাপ্তির পরীক্ষায়।
এমসিকিউ, লিখিত ও ভাইভা- এই তিন ধাপে উত্তীর্ণ হয়ে চূড়ান্তভাবে তালিকাভুক্ত হওয়ার পরও প্রতিনিয়ত নানা চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হচ্ছে তাদের। একজন ডাক্তার ইন্টার্ন করার সময়ও বেতন পায়। আর ইঞ্জিনিয়াররা ইন্টার্ন করার সময়ও সম্মানী পায়।”
তিনি মনে করেন, নবীন আইনজীবী ও শিক্ষানবিশ আইনজীবীদেরও সম্মানী দেওয়া উচিত। নবীন ও শিক্ষানবিশ আইনজীবীদের প্রতি রাষ্ট্রের সুনজর দেওয়া উচিত। প্রবীণ আইনজীবীদের উচিত নবীন আইনজীবীদের সঙ্গে মার্জিত ব্যবহার করা।
“আমাদের ভুলে গেলে চলবে না, তারাও একদিন সিনিয়র হবেন। তাদেরও জুনিয়র থাকবে”, বলেন এপিপি কাউসার আহমেদ।
নবীন আইনজীবীদের এমন পরিস্থিতির কথা উঠে এসেছিল সাবেক প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের কথায়ও।
আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার আগে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেছিলেন, “একদম সত্যি কথা হলো নবীন আইনজীবীদের মধ্যে ৮০% খুবই অসহায় অবস্থায় আছেন। এরকম হলে সামনে ৮-১০ বছর পরে দেখা যাবে প্রকৃত মেধাবীরা এই পেশায় কখনও আসবে না আর।”
‘অনেক শুভাকাঙ্ক্ষী থাকলেও এখন বড়ই একা’
আইন পেশায় এখন আগের মতো সম্মান নেই বলে মনে করেন ঢাকা আইনজীবী সমিতির সবচেয়ে প্রবীণ আইনজীবী ৮৫ বছর বয়সী শাহজাহান খান। তিনি জানান, ৫৬ বছর ধরে আইন পেশায় রয়েছেন। ১৯৬৮ সালে তিনি ঢাকা আইনজীবী সমিতির সদস্যপদ লাভ করেন।
এক সময় আদালত প্রাঙ্গণ দাপিয়ে বেড়ালেও এখন নিশ্চুপ ঢাকার বারের সাবেক এই সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট।
শাহজাহান খান বলেন, “আইন অঙ্গনে এক সময়ে দাপিয়ে বেড়ানো এখন কেবলই স্মৃতি। অসুস্থ, বার্ধক্য এবং বয়সের ভারে আদালতে আগের মতো আসা হয় না। সময় কাটে বাসায় শুয়ে-বসে। চোখের সামনে এখনও ভাসে কোর্ট-কাচারি, মামলা পরিচালনা, ক্লায়েন্ট ডিল। যৌবনের অধিকাংশ সময় কেটেছে এই আইন অঙ্গনে। তবে শেষ বয়সে অনেক হিসাব-নিকাশ মিলছে না। অনেক শুভাকাঙ্ক্ষী থাকলেও এখন বড়ই একা।”
প্রবীণ এই আইনজীবী আরও বলেন, “১৯৬৮ সালে পাকিস্তান আমলে আমি ঢাকা বারের সদস্যপদ লাভ করি। ওই সময় আর এখনকার সময়ে আইন পেশায় অনেক পরিবর্তন। পকিস্তান আমলে আমি যখন সদস্য হয় তখন ঢাকা বারে আইনজীবীর সংখ্যা মাত্র ৩১৫ জন। আর এখন ৩০ হাজারও উপরে। এক সময়ে মামলা, মোকদ্দমা অনেক থাকলেই এখন হাতেগোনা কয়েকটি মাত্র। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ক্লায়েন্ট, মামলা ও মোকদ্দমা সংখ্যা কমে গেছে।”
স্মৃতিচারণ করে তিনি বলেন, “ঢাকা বারের সনদ পাওয়ার পরে আমার সিনিয়র খন্দকার মাহবুব হোসেনের সাথে অনেক মামলা, মোকদ্দমা করেছি । তিনি পাকিস্তান আমল থেকেই ক্রিমিনাল সাইড প্র্যাকিটস করতেন। সেই সুবাদে আমারও ক্রিমিনাল সাইড প্র্যাকিটস করতে ভালো লাগে। দেশ স্বাধীনের পরে আমি সরকারি আইনজীবী হিসেবে নিয়োগ পাই। ওই সময়ে ঢাকার সহকারী পাবলিক প্রসিকিউটর হিসেবে সব কোর্টেই কাজ করতাম।”
ওই সময়ে আদালতে একদিনে কয়টি মামলা শুনানির জন্য কার্যতালিকায় থাকত- এমন প্রশ্নে শাহজাহান খান বলেন, “বর্তমানে বিচার ব্যবস্থা হ-য-ব-র-ল। আগে খুব সুন্দর পদ্ধতিতে বিচার হতো। তবে মামলার সংখ্যা এখনকার যে অবস্থায় আছে, আগেই একই অবস্থায় ছিল।”
এর কারণ উল্লেখ তিনি বলেন, “এখন একটা জেলাকে ভাগ করে ৮টি জেলা করা হয়েছে। তখন ৮টা জেলা মিলে একটা কোর্টে বিচার হতো। সেই হিসাবে মামলার সংখ্যা কম ছিল না। দেশ স্বাধীনের পর একটা হত্যা মামলা ১৫ দিনের মধ্যে রায় ঘোষণা করতেন আদালত। আর অভিযোগপত্র দাখিল হতো সর্বোচ্চ তিন মাসের মধ্যে। তখনকার সময়ে বিচারক, পিপি, মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ওইভাবে সাজানো ছিল। যারা অভিযোগপত্র দিতেন তারাই আদালতে সব সাক্ষী নিয়ে আসতেন।”
সরকারি আইনজীবী থাকার সময় একটি মামলায় সাজা না হওয়ার আক্ষেপ প্রকাশ করে শাহজাহান খান বলেন, “পাবলিক প্রসিকিউটর থাকার সময়ে গাবতলীর একটা হত্যা মামলায় আসামিদের সাজা দিতে পারিনি। আমার আদালতে সকল মামলায় আসামিদের ৯৯% সাজা হয়েছে। কিন্তু এই মামলায় সাজা করাতে পারেনি। টাকা-পয়সা দিয়ে সব কিছু চেঞ্জ করে ফেলেছিল।”
প্রবীণ এই আইনজীবী জানান, স্বাধীনতার আগে ও পরের সময়ে সমাজে আইনজীবীদের অন্য রকম সম্মান ছিল। জ্যেষ্ঠ আইনজীবীরা ঢাকা বারের সভাপতি-সেক্রেটারি হতে চাইতেন না। তাদেরকে জোর করে ভোটে দাঁড় করাতে হতো।
শাহজাহান খান বলেন, “তখনকার সিনিয়র আইনজীবী যারা ছিলেন, তারা জুনিয়রদের অনেক স্নেহ করতেন। আর জুনিয়রাও সিনিয়রদের অনেক সম্মান করতো। সিনিয়ির আইনজীবীরা কখনও ঢাকা বারের সভাপতি-সেক্রেটারি হতে চাইতেন না। আমরাও একপ্রকার জোর করে তাদের নির্বাচনে দাঁড় করাতাম।
“আর এখন নিজে থেকে জুনিয়ারদের এসব করতে দেখা যার। আত্মসম্মানের ভয়ে অনেক মামলা ছেড়ে দিতেন সিনিয়র আইনজীবীরা। তবে এখন সব কিছুতেই উল্টো। আগে একজন আইনজীবীর সাথে কথা বলতে সাধারণ মানুষ ভয় পেতেন। এখন উল্টো। ক্লাইন্ট দ্বারাও লাঞ্ছনার শিকার হচ্ছে আইনজীবীরা।”
জীবনের শেষ প্রান্তে এসে কোনও চাওয়া-পাওয়া আছ কিনা- এমন প্রশ্নে প্রবীণ এই আইনজীবী বলেন, “বাংলাদেশ বার কাউন্সিল এবং বিভিন্ন বার অ্যাসোসিয়েশনের বেনাভোলেন্ট ফান্ডের টাকা ছাড়া কিছুই নেই আমাদের। সরকার ইচ্ছে করলে প্রবীণ আইনজীবীদের কিছু টাকা বেনাভোলেন্ট ফান্ডে যোগ করে দিতে পারে। মুক্তিযোদ্ধাদের ভাতার মতো যে কোনও প্রকার ভাতার ব্যবস্থা করতে পারে। যাদের ঘর-বাড়ি নেই তাদের নিরাপদে বসবাস করার জায়গায় করে দিতে পারে।”
তিনি বলেন, “অনেক আইনজীবী আছেন, যারা চোক্ষু লজ্জারে ভয়ে আর্থিক কষ্টে থাকলেও মুখ ফুটে কাউকে কিছু প্রকাশ করতে পারেন না। তাদের জন্য হলেও সরকারের কিছু একটা করা উচিত। আমার জানা মতে অধিকাংশ প্রবীণ আইনজীবী অর্থনৈতিক কষ্টে আছেন।
এ প্রসঙ্গে কথা হয়েছে ঢাকা বারের আরেক প্রবীণ আইনজীবী মাহবুব হোসেনের সঙ্গে।
৭২ বছর বয়সী মাহবুব সকাল সন্ধ্যাকে বলে, “যৌবনকালে অনেক মামলা-মোকদ্দমা করেছি। দুই হাতে অনেক টাকা ইনকাম করেছি। সেই টাকা দিয়ে ছেলে-মেয়েদের পড়ালেখা শেষ করেছি। এখন বয়সের ভারে আর পেরে ওঠি না। কোনও রকমে সংসার চলে যাচ্ছে। শেষ জীবনে বেনাভোলেন্ট ফান্ডের টাকার অপেক্ষায় আছি। এই ফান্ডের টাকাটা নিয়ে দেখি কত দিন ভালো থাকা যায়।”
বার কাউন্সিল ও বিভিন্ন বার অ্যসোসিয়েশনের বেনাভোলেন্ট ফান্ডের যে টাকা পাওয়া যায় তা একজন প্রবীণ আইনজীবীর জন্য যথেষ্ট নয় বলে মনে করেন মাহবুব হোসেন।
তিনি বলেন, “শেষ বষয়ে অনেকের কাছে হাত পাততেও দেখা গেছে প্রবীণ আইনজীবীদের। আমার জীবনে দেখা, খুব যশ খ্যাতি ছিল; এখন নেই তার পরিচয়। কিছু কিছু আইনজীবীর তো করুণ অবস্থায় মৃত্যু হতে দেখেছি। আইনজীবীদের অভিভাবকদের উচিৎ প্রবীণ আইনজীবীদের দিকে বিশেষ নজর দেওয়া। অনেকেই খারাপ অবস্থানে আছে। অনেকের থাকার মত ঘর-বাড়িও নেই।”
বেনাভোলেন্ট ফান্ডের সঙ্গে আরও কিছু টাকা ও মাথা গোঁজার ঠাঁইয়ের দাবি করেন প্রবীণ এই আইনজীবী।