প্রশ্ন ফাঁসের অভিযোগে সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি) কর্মকর্তাসহ ১৭ জন গ্রেপ্তার হয়েছে। এরপরও কমিশনের অধীনে অনুষ্ঠিত পরীক্ষার বিষয়ে সাফাই বক্তব্য দিয়েছেন পিএসসি চেয়ারম্যান মো. সোহরাব হোসাইন।
প্রশ্নপত্র প্রস্তুত ও বণ্টন কার্যক্রমের সঙ্গে অনেকের জড়িত থাকার কথা উল্লেখ করে তিনি এও বলেন, প্রশ্ন ফাঁস যে হয়নি বা হতে পারে না, তা শতভাগ নিশ্চিত করে বলা যায় না। তবে প্রশ্ন ফাঁস হওয়া খুবই কঠিন।
মঙ্গলবার ঢাকায় নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের তিনি এসব কথা বলেন।
পিএসসি চেয়ারম্যান বলেন, “ব্যক্তিগতভাবে অনেকেই প্রশ্ন বানিয়ে ফেইসবুকে আপলোড করেন এবং সেটিকে পিএসসির প্রশ্ন দাবি করেন। গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনে যে পরীক্ষাগুলোর কথা বলা হয়েছে ১২ বছরের, আজ পর্যন্ত কোনও অভিযোগ আসেনি ওইসব পরীক্ষা নিয়ে। ফলে সেটিই প্রমাণ করে পরীক্ষাগুলো সুষ্ঠু হয়েছে।”
এ সময় তিনি ‘প্র্যাকটিক্যালি’ পরীক্ষার প্রশ্নপত্রের সেট নির্ধারণের প্রক্রিয়া দেখান।
তিনি দাবি করেন, “বিসিএসসহ প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস করা ভীষণ কঠিন। পরীক্ষায় প্রশ্নপত্রের সেট আগের রাতে জানা সম্ভব নয়। যে প্রক্রিয়ায় প্রশ্ন নির্ধারণ ও সাপ্লাই করা হয়, সেখানে প্রশ্ন ফাঁসের কোনও সুযোগ নেই। তবে এ কার্যক্রমের সাথে যেহেতু অনেকেই জড়িত থাকেন, তাই শতভাগ নিশ্চিতভাবেও বলা যায় না।
“প্রশ্নপত্রের সেট লটারির মাধ্যমে নির্ধারণ হয়। লটারিতে কোন সেট আসবে, সেটা তো আল্লাহ ছাড়া কেউ বলতে পারবেন না। সেক্ষেত্রে প্রশ্ন ফাঁস খুবই কঠিন। তবে প্রশ্ন ফাঁস যে হয়নি বা হতে পারে না, তা শতভাগ নিশ্চিত করে বলা যায় না।”
তবে পিএসসি থেকে প্রশ্নফাঁস করা ‘ভীষণ কঠিন’ বলেও দাবি করেন তিনি।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে সোহরাব হোসাইন বলেন, “পিএসসির অধীনে নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নপত্র যিনি তৈরি করেন, তার পরিচয় সম্পূর্ণ গোপন থাকে। ১০ জনের কাছ থেকে প্রশ্ন পাওয়ার পর একদিন মডারেশনের জন্য বৈঠক হয়। গোপন কক্ষে সিলগালা করা সেই প্রশ্ন খুলে মডারেশন শেষে আবারও সিলগালা করে রাখা হয়। সেখান থেকে সর্বোচ্চ নিরাপত্তায় প্রশ্ন প্রেসে যায়। প্রেস থেকে আসার পর পুলিশ প্রহরায় একটি কক্ষে তা তালাবদ্ধ থাকে।
“পরীক্ষার দিন দুজন বিশেষজ্ঞের উপস্থিতিতে পিএসসিতে লটারি হয়। সকাল ১০টায় পরীক্ষা হলে ৯টা ২০ মিনিট থেকে ৯টা ২৫ মিনিটে লটারি করে সাড়ে ৯টার মধ্যে কেন্দ্রে জানাতে হয়। বিসিএসের ক্ষেত্রে ৬ সেট থেকে ১টি সেট লটারির মাধ্যমে বেছে নেওয়া হয়। আর নন-ক্যাডার বা দশম গ্রেড ও তার পরের গ্রেডগুলোর জন্য চারটি সেট থেকে লটারিতে একটি নেওয়া হয়।”
রেলপথ মন্ত্রণালয়ের নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁসের বিষয়টি প্রমাণিত হলে সেটি বাতিল করা হবে জানিয়ে পিএসসি চেয়ারম্যান সোহরাব হোসাইন বলেন, “এরই মধ্যে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্তের পর অগ্রগতিও জানানো হবে। তবে পূর্বের পরীক্ষাগুলো নিয়ে পরবর্তীতে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
“কমিশনের যাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে, নিয়ম অনুযায়ী তাদের সাসপেন্ড করা হবে। এখন পর্যন্ত সিআইডি থেকে কোনও প্রতিবেদন পাইনি, তাই আনুষ্ঠানিকভাবে কোনও সাসপেন্ড লেটার তৈরি করা হয়নি। গ্রেফতার দেখানোর সাথে সাথেই তাদেরকে সাসপেন্ড লেটার দেওয়া হবে।”
“যদি কোনও অভিযোগের প্রমাণ মেলে, তাহলে আমার বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে,” বলেন তিনি।
পিএসসির বিজ্ঞপ্তি