Beta
রবিবার, ১০ নভেম্বর, ২০২৪
Beta
রবিবার, ১০ নভেম্বর, ২০২৪

অবাধ নির্বাচনের জন্য যতটুকু দরকার সংবিধানে ততটুকুই সংস্কার চায় বাম জোট

প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সংলাপে বাম গণতান্ত্রিক জোটের নেতারা। ছবি : পিআইডি
প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সংলাপে বাম গণতান্ত্রিক জোটের নেতারা। ছবি : পিআইডি
Picture of সকাল সন্ধ্যা প্রতিবেদন

সকাল সন্ধ্যা প্রতিবেদন

[publishpress_authors_box]

একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানে সংবিধানে যেটুকু সংশোধন দরকার, কেবল সেটুকুই সংশোধন করার বিষয়ে মত দিয়েছে বাংলাদেশের বাম গণতান্ত্রিক জোট। নির্বাচিত সরকার ছাড়া সাংবিধানিক ধারাবাহিকতা রক্ষা করা যাবে না বলেও মনে করেন জোটের নেতারা।

প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সংলাপে জোটের নেতারা বলেছেন, সরকার গঠিত সংবিধান সংস্কার কমিশনের প্রধানকে নিয়ে বিতর্ক ও সন্দেহের আলাপ ওঠা অভিপ্রেত।

শনিবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপের অংশ হিসেবে বাম দলগুলোর এই জোটের সঙ্গে আলোচনা করেন প্রধান উপদেষ্টা। পরে গণতান্ত্রিক বাম জোটের পক্ষ থেকে পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে সংলাপে তাদের আলোচনার বিষয় তুলে ধরা হয়।

সেখানেই জানানো হয়, সংবিধান সংশোধন নিয়ে বাম দলগুলোর অবস্থানের কথা।

সংলাপে অংশ নেন বাম গণতান্ত্রিক জোট ও বাসদের (মার্কসবাদী) সমন্বয়ক মাসুদ রানা, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির সভাপতি মো. শাহ্ আলম, সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল-বাসদের সহ-সাধারণ সম্পাদক রাজেকুজ্জামান রতন, বাংলাদেশের বিপ্লবী কমিউনিস্ট লীগের সাধারণ সম্পাদক ইকবাল কবির জাহিদ, গণতান্ত্রিক বিপ্লবী পার্টির সাধারণ সম্পাদক মোশরেফা মিশু, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক পার্টির নির্বাহী সভাপতি আব্দুল আলী, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির সাবেক সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম এবং বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল-বাসদের উপদেষ্টা খালেকুজ্জামান।

সংস্কারকে চলমান প্রক্রিয়া উল্লেখ করে ছয়টি সংস্কার কমিশন গঠন করা সরকারকে ধন্যবাদ জানায় বাম গণতান্ত্রিক জোট। এই কমিশনগুলোর কার্যপরিধি এবং রোডম্যাপ সম্পর্কে দেশবাসীকে জানাতে অনুরোধ জানিয়েছে তারা।

সংবিধান সংশোধনের বিষয়ে জোটের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, “সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচনের লক্ষ্যে সংবিধান যতটুকু সংশোধন দরকার, ততটুকু সংশোধন করার উদ্যোগটাই যথার্থ হবে বলে আমরা মনে করি।”

সন্ধ্যা পৌনে ৬টা থেকে পৌনে ৭টা পর্যন্ত চলা এই বৈঠকের জন্য একপাতার লিখিত বক্তব্য নিয়ে গিয়েছিলেন জোটের নেতারা। সেটি প্রধান উপদেষ্টাকে পড়ে শোনানো হয়েছে, তার বাইরেও আলোচনা হয়েছে বলে সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে।

বৈঠক শেষে যমুনা থেকে বেরিয়ে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন জোটের নেতারা।

বাম গণতান্ত্রিক জোটের সমন্বয়ক ও কমিউনিস্ট পার্টি সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স জানান, তারা বলেছেন দেশের সব সংস্কারের দায়িত্ব বঅন্তর্বর্তী সরকারের নয়। তার চেয়ে নির্বাচন কবে হবে সেই রোডম্যাপ ঘোষণার দাবি জানিয়েছেন।

তিনি বলেন, “বিভিন্ন ক্ষেত্রে সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়ার জন্য আমরা ধন্যবাদ জানাই তবে এর মধ্যে প্রধান হবে নির্বাচন ব্যবস্থার সংস্কার। আজ থেকেই বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে পূর্ণাঙ্গ সংস্কার করে নির্বাচন কবে হবে সেই রোডম্যাপ ঘোষণা করতে হবে। অন্যান্য সংস্কারের যে কাজগুলো আছেন সেই প্রস্তাব তারা করে যাবেন এবং পরবর্তীতে নির্বাচিত সরকার সেই কাজগুলো করবে।

“আমরা বলেছি এই সরকারের এমন কোনও কাজ করা ঠিক হবে না যা মানুষের কাছে প্রশ্নবিদ্ধ করে। উনারা বলেছেন, অনেকগুলো সংস্কারের প্রস্তাব আসবে ঐক্যমত্য যতটুকু হবে সেটুকু তারা গ্রহণ করবেন।”

এছাড়া দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ, শিল্পাঞ্চলে শ্রমিক অসন্তোষ, মজুরি সমস্যার সমাধান, সমতল ও পাহাড়ের জাতিগত ও ধর্মীয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর আক্রমণ, বাউলের আখড়া বা মাজারে হামলার ঘটনা, সাম্প্রপ্রদায়িক শক্তির অশুভ তৎপরতা রোধ সম্পর্কেও সরকারের সঙ্গে আলোচনা করেছে বাম গণতান্ত্রিক জোট।

উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ক্যাম্পাসে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ করাকে মত প্রকাশের অধিকারের উপর আক্রমণ বলে মনে করেন জোটের নেতারা। এছাড়া মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীনতাকে বিতর্কিত করা, ধর্মীয় আবেগকে ব্যবহার করে গোষ্ঠীর স্বার্থে সাধারণ মানুষকে উত্তেজিত করে তোলা, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুন্যালসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে বিতর্কিত ব্যক্তিকে নিয়োগ দেওয়ার মাধ্যমে গণঅভ্যুত্থানের চেতনাকে প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে বলে মত দেন তারা। এসব ব্যাপারে সরকারের কাছ থেকে আরও গ্রহণযোগ্য পদক্ষেপ প্রত্যাশা করেন বলে প্রধান উপদেষ্টাকে জানিয়েছেন তারা।

সরকারকে প্রো-অ্যাক্টিভ দেখতে চায় গণতন্ত্র মঞ্চ

অন্তর্বর্তী সরকারকে প্রো-অ্যাক্টিভ বা সক্রিয় হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন নাগরিক ঐক্যের ও গণতন্ত্র মঞ্চের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না। প্রশাসনকে জবাবদিহিমূলক করার বিষয়েও কথা বলেছেন তিনি।

সংলাপ শেষে বেরিয়ে মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, “সংস্কার নিয়ে আলাপ হয়েছে। দুর্গাপূজা যাতে শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন করা যায়, গার্মেন্টস এলাকায় যে অসন্তোষ চলছের সেগুলোর ব্যাপারেও আলোচনা হয়েছে। আমরা বলেছি, দরকার হলে পূজার নিরাপত্তায় জনগণের সঙ্গে মিশে কাজ করব।”

সরকারকে আরও সক্রিয় হওয়ার আহ্বান জানিয়ে এই রাজনীতিবিদ বলেছেন, “যেন জেলা প্রশাসক, থানার ওসি, ইউএনওসহ যারা সরকারের স্থানীয় পর্যায়ে দায়িত্ব পালন করেন তারা যেন জবাবদিহির মধ্যে আসে।”

আশুলিয়ায় পোশাক শ্রমিকদের আন্দোলন আরও বিস্তৃত হতে পারে এমন আশঙ্কা করে তিনি বলেন, “এটা যেন না হয় সেজন্য সরকারকে পদক্ষেপ নিতে হবে, প্রয়োজনে শ্রমিকদের আশ্বস্ক করতে হবে, ঋণ দিতে হবে।”

সংস্কার রাজনৈতিক দলগুলোর বিষয় জানিয়ে মান্না বলেন, এক্ষেত্রে সরকারকে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা করবেন তারা।

ভালো নির্বাচনের ওপর প্রধান উপদেষ্টাসহ উপদেষ্টা পরিষদের সম্মান নির্ভর করছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, “মানুষের যদি মনে হয় আপনাদের লিপ্সা আছে, যদি মনে হয় অতীতের মতো ন্যায়-অন্যায় বাছবেন না, অর্থের ধান্দা করবেন, দুর্নীতি বেড়ে যায়, তাহলে সেই দায় আপনাদের ওপর বর্তাবে। আপনারা যদি বলেন যে বুঝতে পারেননি, তাহলে চলবে না। প্রয়োজনে আমাদের সঙ্গে কথা বলেন। আমরা সমাজের একেবারে নিম্নস্তর পর্যন্ত কাজ করি।”

সম্মিলিত প্রচেষ্টায় এই পুরো সংকট কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হবে বলেও আশা প্রকাশ করেন তিনি।

রাজনৈতিক বন্দোবস্তের সংস্কার ও নতুন নির্বাচন একে অন্যের পরিপূরক

গণতান্ত্রিক নির্বাচন নিয়ে রাজনৈতিক দল, শিক্ষার্থী, বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের  সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করা দরকার বলে মনে করেন গণসংহতি আন্দোলনের  প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি।

তিনি বলেন, “আমরা মনে করি একটা কাঠামো তৈরি করা দরকার। জাতীয় রাজনৈতিক কাউন্সিল হতে পারে। যেখানে অংশীজনেরা বসবেন। সরকার যেহেতু অংশীজনের সমর্থনে দাঁড়িয়ে আছে, তাই তাদের সঙ্গে রাজনৈতিক প্রক্রিয়ার উত্তরণ ঘটবে।”

সাম্প্রদায়িক হামলা, মাজারে হামলা, নারীর ওপর হামলার প্রসঙ্গেও কথা বলেছেন বলে জানান তিনি।

জোনায়েদ সাকি বলেন, “আমরা মনে করি গণতান্ত্রিক নির্বাচন, দেশে নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত, প্রতিষ্ঠান, আইন সংস্কার; এগুলো গুরুত্বপূর্ণ অংশ। সংস্কার ছাড়া নির্বাচনকে প্রতিপক্ষ হিসেবে দাঁড় করানোর কিছুই নেই। এই দেশে নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্তের সংস্কার ও নতুন নির্বাচন একে অন্যের পরিপূরক। গণতান্ত্রিক উত্তরণের জন্য তা জরুরি।”

গণঅধিকার পরিষদের ১২ দাবি

প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সংলাপে ১২টি দাবি তুলে ধরেছেন বলে জানান গণঅধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খান।

তিনি বলেন, “আমরা বলেছি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের রোডম্যাপ প্রকাশ করতে হবে।”

গণহত্যার সঙ্গে জড়িতদের দ্রুত সময়ের মধ্যে গ্রেপ্তারের দাবি জানিয়ে রাশেদ বলেন, “আমরা দেখতে পাচ্ছি আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির এখনো উন্নতি হয়নি। শেখ হাসিনাকে ভারত থেকে ফিরিয়ে আনতে কোন উদ্যোগও এখনো দেখছি না, সে বিষয়ে আমরা জানিয়েছি।

“আমরা বলেছি, উপদেষ্টা পরিষদে যারা আছেন তারা যোগ্য এবং দক্ষ। কিন্তু রাষ্ট্র পরিচালনা ও রাজনীতির ক্ষেত্রে কিছুটা যোগ্যতাসম্পন্ন লোক দরকার। আমরা দেখেছি দুই মাসেও রাষ্ট্রের পরিস্থিতির উন্নতি হয়নি, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি হয়নি। যেহেতু যথাযথভাবে সংস্কারগুলো করতে হবে সে কারণে আমরা উপদেষ্টা পরিষদের পরিধি বাড়ানোর কথা বলেছি।”

এছাড়া দ্বি-কক্ষ বিশিষ্ট সংসদ গঠন করে সেই সংসদের মেয়াদ চার বছর করার দাবিও জানিয়েছে গণধিকার পরিষদ।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

ad

সর্বাধিক পঠিত