পূজা মানে নাড়ু বানানো আর খাওয়া হবেই। তাই বলে পূজা শেষেও নাড়ুর আবেদন ফুরিয়ে যায় না। মোট কথা সারা বছরই বিকালের নাস্তায়, চায়ের আড্ডায় নাড়ু চলতেই পারে।
এদিকে শীত আসি আসি করছে। এ সময় গুড় মেশানো নাড়ু বানানো ও খাওয়ার আনন্দই আলাদা।
নারকেলের নাড়ু
নারকেল মিহি করে কোড়াতে হবে; নইলে নাড়ু মসৃণ করে গোল হবে না। যদি কোড়ানো মোটা করে হয়ে যায়, তাহলে একবার গ্রাইন্ডার দিয়ে মিহি করে নিতে পারেন।
ঘি দিয়ে নাড়ু বানালে ভালো স্বাদ হয়। ঘি হাতের কাছে না থাকলে তেল বা বাটার দিয়েও নাড়ু বানাতে পারেন।
দুই টুকরা তেজপাতা, এক টুকরা দারুচিনি, দুইটি এলাচ দিতে হবে। সুগন্ধ ছড়ানো পর্যন্ত ঘিয়ে মশলা নেড়ে নিতে হবে।
এবার চার কাপ কোড়ানো নারকেল দিন। মাঝারি আঁচে নারকেল ও মশলা নেড়ে নেড়ে মেশাতে থাকুন এক মিনিটের মতো। খেজুরের গুড় এক কাপের একটু বেশি লাগবে। খেজুর গুড়ের বদলে আখের গুড়ও দেয়া যায়।
কোড়ানো নারকেলের সঙ্গে গুড় দিয়ে ভালো ভাবে নেড়ে মেশাতে হবে।
চুলার আঁচ কম থাকবে। সময় নিয়ে ধীরে ধীরে নাড়তে থাকুন; যেন গুড় ও নারকেলের বাড়তি পানি টেনে যায়।
এবার আধা কাপ পরিমাণ গুঁড়া দুধ মেশাতে হবে। যদি গুঁড়া দুধ না থাকে সেক্ষেত্রে না মেশালেও হবে। তবে নারকেলের নাড়ু বানাতে এই পর্যায়ে গুঁড়া দুধ মেশালে স্বাদ বেড়ে যাবে।
নারকেলের মিশ্রণ নেড়ে দেখতে হবে তা শুকিয়ে মাখো মাখে আঠালো হওয়া পর্যন্ত; যেন হাতে নিয়ে নাড়ুর মতো গোল করা যায়। মিশ্রণ বেশি ঝরঝরে হলে তাতে নাড়ুর আকার থাকবে না।
চুলা থেকে নারকেলের মিশ্রণ নামিয়ে হাতে ধরার মতো হলেই নাড়ুর আকার করে বানাতে হবে। চট করে বানাতে হবে; কারণ মিশ্রণ ঠান্ডা হয়ে গেলে নাড়ুর আকার দেয়া যাবে না।
এই নাড়ু কাঁচের বয়ামে ভরে কয়েকদিন রাখা যাবে।
ধবধবে সাদা নারকেলের নাড়ু
দেড় কাপ নারকেলে আধা কাপের চেয়ে একটু বেশি চিনি মেশাতে হবে। দুটি এলাচ হামানদিস্তায় থেঁতো করে নিয়ে অথবা এলাচা গুঁড়া নারকেলের সঙ্গে মেশাতে হবে। হাত দিয়ে উপকরণ ভালো মতো মেশিয়ে নিন।
এভাবে নারকেল কোরানো আর চিনি ভালোভাবে হাত দিয়ে মেখে নিলে চুলায় রান্না করতে বেশি সময় লাগবে না।
কড়াইতে এই মিশ্রণ ঢেলে দিন। অল্প আঁচে এই মিশ্রণ দুই মিনিট ধরে নাড়তে থাকুন। যদি আঠালো ভাব এরমধ্যে না আসে তাহলে স্বাদ চেখে দেখে আরও দুই-তিন টেবিল চামচ চিনি মেশানো যেতে পারে। চেপে চেপে নেড়ে দেখতে হবে আঠালো ভাব এসেছে কিনা।
কড়াই থেকে মসৃণ ভাবে উঠে এলে আর একটু স্বচ্ছ দেখালে বুঝতে হবে মিশ্রণ নাড়ুর উপযোগী হয়েছে।
এবার চুলা থেকে নামিয়ে নিয়ে গরম থাকতে থাকতেই নাড়ু বানাতে হবে। হাতে একটু ঘি মেখে নিলে নাড়ু বানাতে সুবিধা হবে।
চিনি নিয়ে নারকেলের নাড়ুও এভাবে বানিয়ে টানা কয়েকদিন সংরক্ষণ করা যাবে।
তিলের নাড়ু
গুড় দিয়ে তিলের নাড়ু বানাতে বেশি সময় লাগে না। এক কাপ বা আড়াইশ গ্রাম তিল চুলায় গরম কড়াইতে দিন। অল্প আঁচে তিল ভেজে নিতে হবে হালকা লাল করে। ভাজা হলে একটা থালায় তিল বিছিয়ে ঠান্ডা করে নিন; তাহলে তিল আরও মচমচে হবে।
এবার চুলায় কড়াই চাপিয়ে ২০০ গ্রাম গুড় দিন। এক চামচের চার ভাগের এক ভাগ এলাচ গুঁড়া মিশিয়ে দিন।
খেয়াল রাখতে হবে, গুড়ে কোনো পানি দেয়া যাবে না।
একটা ছোট বাটিতে পানি নিয়ে এতে এক-আধা চামচ গুড় ঢেলে দিন। যদি বাটিতে গুড় জমে যায়, তাহলে বুঝতে হবে এবার নাড়ু বানানো যাবে।
এখন ভাজা তিল মিশিয়ে দিতে হবে গুড়ে। তিল দিয়েই চুলার আগুন বন্ধ করে দিন। কড়াইতে তিল ও গুড় নেড়ে নেড়ে মেশাতে থাকুন।
স্বাদ বাড়াতে এবার আধা কাপ শুকনো নারকেলের গুঁড়ো মিশিয়ে দিন। প্যাকেটের শুকনো নারকেল দিতে পারেন। অথবা বাড়িতে নারকেল কুড়িয়ে তা ভেজে শুকনো করে নিয়েও দেয়া যায়।
তিল, গুড়, শুকনা নারকেল গুঁড়া ভালো ভাবে মিশিয়ে এবার ঘি মাখা একটি থালায় এই মিশ্রণ ঢেলে নিন।
মিশ্রণ গরম থাকতে থাকতেই ছোট ছোট গোল আকারের নাড়ু বানিয়ে নিন।
চিড়ার নাড়ু
চিড়ার নাড়ুকে চিড়ার মোয়াও বলে।
কড়াই গরম হলে দুই কাপ চিড়া দিয়ে অল্প আঁচে মচমচে করে ভেজে নিতে হবে। আরেকটি পাতিলে পৌনে এক কাপ গুড় দিন।এরসঙ্গে কাপের চারভাগের এক ভাগ পানি দিন। গুড় গলিয়ে এক তার বা দুই তারের সিরা করে নিতে হবে।
গুড় ফুটে উঠলে দুই আঙ্গুলে মাখিয়ে আঙ্গুল ছড়িয়ে নিলে যদি চিকন তারের মতো গুড় ছড়িয়ে যায়, তাহলে বুঝতে হবে নাড়ু বানানো উপযোগী সিরা হয়ে গেছে।
এবার ভাজা চিড়া দিয়ে দিন গুড়ে। কম আঁচ রেখেই চিড়া ও গুড় মিশিয়ে নিতে হবে।
এবার চুলার আঁচ বন্ধ করে দিন। বাটিতে ঠান্ডা পানি নিয়ে তাতে হাত ভিজিয়ে নিন। এবার একটু একটু করে গরম মিশ্রণ তুলে ছোট নাড়ুর আকার দিন।
ছাতুর নাড়ু
আধা কেজি চাল ভেজে গুঁড়া করে নিন। এবার আধা কেজি চিড়া ভেজে গুঁড়া করে রাখুন। এরপর মুড়ি গুঁড়া করে নিন। সব একটি বড় পাতিলে নিয়ে মিশিয়ে রাখুন।
এবার এক কেজি গুড়ের সিরা করতে হবে। একটি নারকেল কুড়িয়ে নিন।
চারটি শুকনা মরিচ তেলছাড়া ভেজে নিন। এক টেবিলচামচ ধনিয়া, এক টেবিলচামচ জিরা, চার-পাঁচটি তেজপাতা তেল ছাড়া টেলে ভালো মতো গুঁড়া করে নিন।
ছাতুর মিশ্রণে লবণ দিন দুই টেবিলচামচ বা স্বাদমত। নারকেল কুড়ানো মিশিয়ে দিন। গুড়ের সিরা ঢেলে ভালো মতো নেড়ে মিশিয়ে নিন ছাতুর সঙ্গে।
এবার হাত দিয়ে চেপে চেপে নাড়ুর আকার দিন।
চাইলে মশলা এড়িয়ে গুড়, নারকেল কুড়ানো এবং ছাতু দিয়েও নাড়ু বানানো যাবে।
খইয়ের ছাতু করেও নাড়ু বানানো যায়।
মশলা দিয়ে খইয়ের ছাতুর নাড়ু করতে চাইলে শুকনা মরিচ, গোলমরিচ, তেজপাতা, মৌরি, এলাচ, দারুচিনি, লবঙ্গ টেলে গুঁড়া করে নিতে হবে।
এই মশলা মিশিয়ে দিতে হবে খইয়ের গুঁড়ার সঙ্গে। এরপর লবণ দিয়ে সব মেখে নিতে হবে। সামান্য ভাজা চালের গুঁড়াও মেশানো যায়।
এবার নরম গুড় ও জিরার গুঁড়া দিয়ে খইয়ের ছাতু আবারও মাখতে হবে।
ভালো ভাবে মাখা হলে চেপে চেপে নাড়ুর আকার দিতে হবে।