সংবাদ সম্মেলন শেষে অনুশীলনে যাওয়ার তাড়া অস্ট্রেলিয়া কোচ গ্রাহাম আরনল্ডের। বসুন্ধরা কিংস অ্যারিনার সম্মেলন কক্ষ থেকে মিনিট দুয়েক দূরত্বের ট্রেনিং সেন্টারে ততক্ষণে পৌঁছে গেছে সকারুজরা। ভেতরে তখন অধিনায়ক জামাল ভূঁইয়াকে পাশে বসিয়ে অস্ট্রেলিয়াকে সামলানোর পরিকল্পনার কথা বলছেন বাংলাদেশ কোচ হাভিয়ের কাবরেরা।
বিশ্বকাপ বাছাইয়ের ফিরতি লেগের ম্যাচ খেলতে মঙ্গলবার ঢাকায় এসেছে অস্ট্রেলিয়া। বৃহস্পতিবার বসুন্ধরা কিংস অ্যারিনায় বাংলাদেশ মুখোমুখি হবে অস্ট্রেলিয়ার। ম্যাচ শুরু হবে বিকেল ৪টা ৪৫ মিনিটে।
ফিফা র্যাঙ্কিংয়ে অস্ট্রেলিয়ার অবস্থান ২৪। যেখানে বাংলাদেশের অবস্থান ১৮৪। র্যাঙ্কিংয়ে ১৬০ ধাপ পেছানো দলের সঙ্গে লড়াইটা কেমন হতে পারে সেটা এর আগেও হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছিল বাংলাদেশ।
গত বছর ১৬ নভেম্বর মেলবোর্নে বাংলাদেশ প্রথম লেগে হেরেছিল ৭-০ গোলের ব্যবধানে।
যদিও সেই ঘটনাকে ‘অতীত’ বলেই সংবাদ সম্মেলনে উল্লেখ করেছেন অসি কোচ আরনল্ড। পুরো পেশাদার মোড়কের কথায় তিনি প্রতিপক্ষকে সমীহ করে বলেন, “এটা একেবারে নতুন একটা ম্যাচ। আগের কথা আমরা ভুলে গেছি।”
অস্ট্রেলিয়ার জন্য ম্যাচটা অনেক দিক দিয়েই নতুন হতে পারে। বাংলাদেশের ম্যাচে অনেক পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালাতে পারেন তরুণদের নিয়ে। যেমন বাংলাদেশের বিপক্ষে অভিষেক হতে পারে এক ঝাক নতুন ফুটবলারের। তেমনই একটা আভাস দিয়ে রাখলেন তিনি।
বিশেষ করে বায়ার্ন মিউনিখে খেলা তরুণ উইঙ্গার নেসতরি ইরাকুন্ডার বাংলাদেশের বিপক্ষে ম্যাচ দিয়ে অভিষেক হতে যাচ্ছে, এটা মোটামুটি নিশ্চিত। সেই দৌড়ে আরও রয়েছেন পোর্টসমাউথের ফরোয়ার্ড কুসিনি ইয়েনগি, ইতালিয়ান সিরি ‘আ’তে খেলা ডিফেন্ডার আলেসান্দ্রো সিরকাতি ও অস্ট্রেলিয়ান লিগের দল সেন্ট্রাল কোস্ট মেরিনার্সের মিডফিল্ডার জস নিসবেত।
যদিও এই অস্ট্রেলিয়া দলের সঙ্গে নেই জেমি ম্যাকলারেন। যিনি মেলবোর্নে হ্যাটট্রিক করে একাই ধসিয়ে দিয়েছিলেন বাংলাদেশকে। অবশ্য দলে আছেন জোড়া গোল করা মিচেল ডিউক। আছেন অ্যাস্টন ভিলার গোলরক্ষক জো গাউচি।
এ পর্যন্ত গ্রুপের ৪ ম্যাচে সব কটিতে জিতে ১২ পয়েন্ট নিয়ে তালিকায় সবার ওপরে অস্ট্রেলিয়া। সবচেয়ে বড় কথা এখন পর্যন্ত প্রতিপক্ষের জালে অস্ট্রেলিয়া ১৫টি গোল দিলেও একটিও হজম করেনি। বাংলাদেশের বিপক্ষে ম্যাচটি জিতলেই ২০২৬ বিশ্বকাপের চূড়ান্ত পর্ব নিশ্চিত হবে অস্ট্রেলিয়ার।
এত এত পরিসংখ্যান দেখার সময় নেই রাকিব হোসেন, জামাল ভূঁইয়াদের। সত্যি বলতে বাংলাদেশের হারানোর কিছু নেই এই ম্যাচে। যতটা সম্ভব কম গোল খাওয়ার মানসিকতা নিয়ে মাঠে নামবেন ফুটবলাররা।
বিশ্বকাপ বাছাইয়ের জন্য মাত্র ৪ দিন অনুশীলনের সুযোগ পেয়েছেন কাবরেরা। তারপরও এই ম্যাচ নিয়ে নতুন করে রোমাঞ্চিত তিনি, “অবশ্য খুবই অল্প ট্রেনিং হয়েছে আমাদের। তারপরও আমরা খুব রোমাঞ্চিত যে আবারও আমাদের সামনে যে এশিয়ার সেরা দলের বিপক্ষে খেলার এটা একটা বড় সুযোগ। আমরা খেলতে প্রস্তুত।”
মেলবোর্নে প্রথমার্ধেই ৪ গোল হজম করে বাংলাদেশ। ম্যাচ তখনই শেষ। তবে সেটা ভুলে সামনে তাকাতে চান কোচ, “মেলবোর্নের সঙ্গে তুলনা করলে বলব অবশ্যই অমাদের যে আরও উন্নতি হয়েছে, সেটা দেখাতে হবে। আবারও কি করতে হবে জানি। আবারও আমাদের সামর্থ্য দেখাতে চাই। সবাই জানে কি চ্যালেঞ্জ আমাদের। আমরা প্রতিপক্ষের জন্য ম্যাচটা কঠিন করতে চাই।”
বিশ্বনাথ ঘোষ ও মজিবুর রহমান জনি কার্ড নিষেধাজ্ঞায় খেলতে পারবেন না অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে। এটা মেনে নিয়েই খেলার পরিকল্পনা কোচের।
অবশ্য মেলবোর্নের মতো এই ম্যাচে দ্রুত গোল না খাওয়ার পরিকল্পনা থাকবে বাংলাদেশের। এমনটাই বললেন তিনি, “আমরা এবার দ্রুত গোল খেতে চাই না। আমরা এ বিষয়ে সচেতন আছি। পুরো সময় লড়াই করব আমরা। অবশ্যই আবারও যেন সেরকম পরিস্থিতি না হয় সেটাই চাইব। আমাদের তাই মানসিকভাবে শক্ত থাকতে হবে। যেন গোল না খাই।”
বাংলাদেশের জন্য সুসংবাদ এই ম্যাচ দিয়ে মাঠে ফিরতে পারেন শেখ মোরসালিন ও তারেক কাজী।
বসুন্ধরা কিংস অ্যারিনায় বাংলাদেশের সাফল্যের হার সবচেয়ে ভালো। এবারও ভালো ফুটবল উপহার দেওয়ার আশা অধিনায়ক জামাল ভূঁইয়ার, “এখানে হোম মাঠে সমর্থক ও পরিবারের সদস্যরা আসবে। এটা আমাদের জন্য অনুপ্রেরণা। সবাই নিজেদের সামর্থ্য দেখাতে চাই এই ম্যাচে। আসলে ৭-০ গোলটা খাওয়াটা ছিল আমাদের ভুলে। মানুষকে বলব যেন সেটা ভুলে যায়। কাল বাংলাদেশের মানুষকে আমাদের সামর্থ্য দেখানোর ভালো সুযোগ আছে।”
জামাল যতই নিজেদের সামর্থ্যের ওপর ভরসা রাখুক, বাংলাদেশ ফুটবলের তুলনায় অস্ট্রেলিয়া গালিভার। ‘লিলিপুটের‘ দেশে সবসময় গালিভারই ফেবারিট থাকবে। তবে গোলটা কম হলে লিলিপুটের মান রক্ষা হয় আর কি।