কোপা আমেরিকার সেমিফাইনালে উঠল আর্জেন্টিনা, কিন্তু একটি জায়গা অপূর্ণই থেকে গেল। লিওনেল মেসি গোল পাননি। অবশেষে শেষ চারের লড়াইয়ে আর্জেন্টাইন অধিনায়ক পেলেন গোলের দেখা। তার সঙ্গে হুলিয়ান আলভারেসের লক্ষ্যভেদে সহজ জয়ে ফাইনালে পৌঁছে গেছে বর্তমান বিশ্ব চ্যাম্পিয়নরা।
বুধবার (১০ জুলাই) কোপা আমেরিকার সেমিফাইনালে কানাডাকে ২-০ গোলে হারিয়েছে আর্জেন্টিনা। মেটলাইফ স্টেডিয়ামের এই জয়ে টানা দ্বিতীয়বার লাতিন আমেরিকার প্রতিযোগিতাটির ফাইনালে নাম লেখাল মেসিরা।
সব মিলিয়ে টানা তিনটি মেজর টুর্নামেন্টের ফাইনালে উঠল আর্জেন্টিনা। ২০২১ সালের কোপা আমেরিকার পর ২০২২ সালের বিশ্বকাপেও ফাইনাল খেলেছে লিওনেল স্কলানির দল। দুটোতেই হয়েছে চ্যাম্পিয়ন। এবার কোপা আমেরিকা জিতে ‘হ্যাটট্রিক’ শিরোপার স্বাদ পায় কিনা, সেটিই দেখার। ফাইনালে আর্জেন্টিনা খেলবে উরুগুয়ে-কলম্বিয়ার দ্বিতীয় সেমিফাইনাল জয়ীর বিপক্ষে।
শক্তি, সামর্থ্য, সাফল্য, তারকার ভার- সবকিছুতে কানাডা পিছিয়ে। তাদের বিপক্ষে আর্জেন্টিনা অনায়াসে জিতবে, সেটাই ছিল লাতিন দেশটির সমর্থকদের প্রত্যাশা। তাছাড়া গ্রুপ পর্বে দুই দলের মুখোমুখি লড়াইও সাক্ষী দিচ্ছিল আর্জেন্টিনার ফাইনালে ওঠা সময়ের অপেক্ষা। মাঠের লড়াইয়েও সেটি দেখা গেল। তুলনামূলক কম শক্তির কানাডাকে সহজে হারিয়ে কোপা আমেরিকার ফাইনালে মেসির আর্জেন্টিনা।
গোলহীন থেকে ইউরো শেষ করেছেন ক্রিস্তিয়ানো রোনালদো। এদিকে কোপা আমেরিকাতে গোল পাচ্ছিলেন না মেসি। তাহলে কি জাতীয় দলে তার সময়ও ফুরিয়ে এসেছে? সাতবারের ব্যালন ডি’অর জয়ী বুঝি সব রসদ জমিয়ে রেখেছিলেন সেমিফাইনালের জন্য। দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতে পেয়েছেন এবারের কোপা আমেরিকার প্রথম গোল।
অবশ্য প্রথমার্ধেই গোল পেতে পারতেন ইন্টার মায়ামি ফরোয়ার্ড। আর্জেন্টিনার প্রথম সুযোগটা তৈরি করেছিলেন তিনিই। ম্যাচ ঘড়ির ১২তম মিনিটে বক্সের বাইরে থেকে নেওয়া তার শট একটুর জন্য জালে জড়ায়নি। বিরতিতে যাওয়ার আগমুহূর্তেও গোলের সম্ভাবনা জাগিয়েছিলেন। কিন্তু ডান পায়ে নেওয়া তার শট যায় পোস্টের বাইরে দিয়ে।
কোয়ার্টার ফাইনালে নিষ্প্রভ মেসি সেমিফাইনালে জ্বলে উঠেছিলেন। ছন্দময় ফুটবলে বিরতি থেকে ঘুরে এসে গোলের দেখাও পেয়ে যান। এনজো পেরেসের নেওয়ার শট ছোটবক্সের সামনে থেকে মেসির পা ছুঁয়ে জড়িয়ে যায় জালে। জাতীয় দলের জার্সিতে এটি মেসির ১০৯তম গোল। তাতে আন্তর্জাতিক ফুটবলে সর্বোচ্চ গোলদাতার তালিকায় ইরানের কিংবদন্তি আলি দাইয়িকে পেছনে ফেলে দ্বিতীয় স্থানে বসলেন মেসি। তার সামনে আছেন কেবল ১৩০ গোল করা ক্রিস্তিয়ানো রোনালদো।
মেসির গোলের আগেই অবশ্য লিড নিয়েছিল আর্জেন্টিনা। ২২ মিনিটে আলবিসেলেস্তেদের এগিয়ে নিয়েছিলেন আলভারেস। কোয়ার্টার ফাইনালে লাউতারো মার্তিনেসের বাজে পারফরম্যান্সে আবার একাদশে ফেরেন ম্যানচেস্টার সিটি ফরোয়ার্ড। সুযোগটা তিনি দারুণভাবে কাজে লাগিয়েছেন। মাঝমাঠ থেকে রোদ্রিগো দে পলের বাড়ানো পাস চমৎকারভাবে নিয়ন্ত্রণ নেন আলভারেস। এরপর গায়ের সঙ্গে সেঁটে থাকা কানাডার এক ডিফেন্ডারকে ফাঁকি দিয়ে গোলকিপারের দুই পায়ের মাঝখান দিয়ে বল জালে জড়ান তিনি।
এরপর দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতে মেসির গোলে জয় দেখতে থাকে আর্জেন্টিনা। কানাডা বেশ কয়েকটি ভালো সুযোগ তৈরি করলেও খেলায় ফিরতে পারেনি। শেষ বাঁশি বাজার আগেই যেমন দুটো দারুণ সম্ভাবনা নষ্ট করেছেন তানি ওলুওয়াসিয়েই। প্রথমবার তাকে হতাশ করেছেন এমিলিয়ানো মার্তিনেস। পা দিয়ে এই গোলকিপার নিশ্চিত গোল বাঁচিয়েছেন। খানিকপর তার হেড পোস্টে বাতাস লাগিয়ে চলে যায় বাইরে।
শেষ পর্যন্ত ২-০ গোলের ব্যবধান রেখে টানা দ্বিতীয়বার কোপা আমেরিকার ফাইনালে পৌঁছে গেছে মেসির আর্জেন্টিনা।
