পেনাল্টি শুট আউটের প্রথম শটটিই মিস করে বসলেন লিওনেল মেসি! তারপরও আর্জেন্টাইন অধিনায়ককে এতটুকু দুশ্চিন্তায় ফেলেননি এমি মার্তিনেজ। গত কয়েক বছর ধরেই যিনি বিশ্বস্ততার সঙ্গে সামলে চলেছেন আর্জেন্টিনার গোলপোস্ট।
টেক্সাসের এনআরজি স্টেডিয়ামে পারফরম্যান্সের ধারাবাহিকতা শুক্রবারও ধরে রাখল মার্তিনেজের গ্লাভস। কোপা আমেরিকার কোয়ার্টার ফাইনালে ৯০ মিনিট পর্যন্ত যখন ১-০ গোলে এগিয়ে আর্জেন্টিনা, প্রস্তুতি নিচ্ছিল উৎসবের তখন যোগ হওয়া সময়ে গোল করলেন ইকুয়েডরের কেভিন রদ্রিগেজ। নতুন নিয়মে এরপর খেলা গড়ায় টাইব্রেকারে।
শেষ পর্যন্ত টাইব্রেকারে ৪-২ গোলে ইকুয়েডরকে হারিয়ে কোপা আমেরিকার সেমিফাইনালে উঠেছে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন আর্জেন্টিনা।
আগামী ৯ জুলাই সেমিফাইনালে আর্জেন্টিনা মুখোমুখি হবে ভেনেজুয়েলা ও কানাডা ম্যাচে জয়ী দলের সঙ্গে। নিউ জার্সির মেটলাইফ স্টেডিয়ামে হবে ম্যাচটি।
২০২১ সালের কোপা আমেরিকা থেকেই পেনাল্টিতে আর্জেন্টিনার ভরসা হয়ে ছিলেন এমি মার্তিনেজ। কলম্বিয়ার বিপক্ষে ঠেকিয়েছিলেন ৩টি পেনাল্টি। এরপর বিশ্বকাপে নেদারল্যান্ডস আর ফ্রান্সের বিপক্ষে জয় ধরা দেয় এমি মার্তিনেজের বিশ্বস্ত হাত ধরেই।
২০২৪ সালের কোপা আমেরিকাতেও বদলায়নি সেই দৃশ্য। ইকুয়েডরের বিপক্ষে ম্যাচে শেষ সময়ে গোল হজম করে বিপাকেই পড়েছিল টিম আর্জেন্টিনা। লিওনেল মেসির শট মিস হলে তাতে সংশয় বেড়ে যায় আরও। কিন্তু অ্যাস্টন ভিলার গোলরক্ষক এমি মার্তিনেজ ঠেকালেন আনহেল মেনা আর অ্যালান মিন্দার শট। আর্জেন্টিনার হয়ে পরের চার শটেই গোল করেছেন আলভারেজ, অ্যালেক্সিস ম্যাক অ্যালিস্টার, মনতিয়েল ও নিকোলাস ওতামেন্দি।
এর আগে ৩৫ মিনিটে দলের প্রথম গোল করেন লিসান্দ্রো মার্তিনেজ। রক্ষণ সামলানোয় যার প্রথম কাজ। কিন্তু আর্জেন্টিনা কর্ণার পেলেই প্রতিপক্ষের বক্সে গিয়ে দাঁড়ান। আর্জেন্টিনার জার্সিতে ২০ ম্যাচ খেলে অবশেষে ক্যারিয়ারের প্রথম গোল পেলেন লিসান্দ্রো মার্তিনেজ।
কোপা আমেরিকার গুরুত্বপূর্ণ কোয়ার্টার ফাইনালে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড সেন্টার ব্যাকের দেওয়া একমাত্র গোলে ইকুয়েডরকে হারিয়েছে আর্জেন্টিনা। গোল শোধের দারুণ সুযোগ পেয়েছিল ইকুয়েডর। কিন্তু তাদের অধিনায়ক ইনার ভ্যালেন্সিয়া পেনাল্টি থেকেও গোল করতে পারেনি।
আর্জেন্টিনার ডিফেন্ডাররা ভুলে যেতে চাইবেন ইকুয়েডরের বিপক্ষে প্রথমার্ধের সময়টা। আরও পরিস্কার করে বললে প্রথমার্ধের ১০ থেকে ১৯ মিনিট। মইসেস কেইসেডো এবং এনার ভ্যালেন্সিয়া রীতিমতো নাভিশ্বাস তুলেছিলেন আর্জেন্টাইন রাইটব্যাক মলিনার। তবে সেখান থেকে ফিরে আসতে আর্জেন্টিনা মোটেও সময় নেয়নি।
চাপের সেই মুহূর্ত ভুলে আর্জেন্টিনা ভালোভাবেই ম্যাচে ফিরেছে। সময় নিয়ে আধিপত্য ফিরিয়ে এনেছে নিজেদের। আর তাতে ফলও এসেছে। চোট কাটিয়ে দলে ফেরা লিওনেল মেসির কর্নার থেকে হেডে বল পেছনে পাঠিয়েছিলেন ম্যাক অ্যালিস্টার। দূরের পোস্টে আনমার্কড ছিলেন লিসান্দ্রো মার্টিনেজ। বল সেখান থেকেই জড়ালেন জালে।
প্রথমার্ধে এগিয়ে থাকলেও আর্জেন্টিনাকে মাঠের খেলায় খুঁজে পেতে এদিন সময় লেগেছিল অনেকখানি। আনহেল দি মারিয়াকে কোচ লিওনেল স্কালোনি এদিন একাদশেই রাখেননি। আগের ৩ ম্যাচে ৪ গোল করা লাউতারো মার্তিনেজ সেভাবে বক্সে আতঙ্ক ছড়াতে পারেননি। চোট কাটিয়ে ফেরা মেসিকেও খুব বেশি পোস্টে বল রাখতে দেখা যায়নি।
বরং এনার ভ্যালেন্সিয়া, কেইসোডো এবং ১৭ বছরের তরুণ কেন্ড্রি পায়েজ ইকুয়েডরকে এগিয়ে রাখেন ম্যাচে। ২৯ মিনিটের আগ পর্যন্ত ইকুয়েডরের ৩টি বড় সুযোগ আসে। ১৬ মিনিটে ইকুয়েডরের জেরেমি সারমিয়েন্তোর শট ঠেকিয়ে দেন দিবু মার্তিনেজ। যদিও ২৫ মিনিটে এনজো ফার্নান্দেজের হেড অল্পের জন্য বাইরে গেল।
এরপর ৩৫ মিনিটে লিসেন্দারো মার্তিনেজের গোল। কর্ণার থেকে উড়ে আসা বল প্রথমে ম্যাক অ্যালিস্টারের কাছে যায়। এরপর অ্যালিস্টারের বাড়িয়ে দেওয়া বলে হেড জালে জড়ান মার্টিনেজ। ইকুয়েডোরের গোলরক্ষক আলেক্সান্ডার ডোমিনগুয়েজ নেটের ভেতর থেকে বল ফেরান।
৬০ মিনিটে গোল শোধের দারুণ সুযোগ আসে ইকুয়েডরের। কিন্তু পেনাল্টি পেয়েও গোল করতে পারেননি ভ্যালেন্সিয়া। বল সাইড পোস্টে লেগে বাইরে যায়। পুরো ম্যাচে বলার মতো মেসির একটাই শট ছিল ৬৭ মিনিটে। যদিও সেটা ঠেকিয়ে দেন ইকুয়েডর গোলরক্ষক আলেক্সান্ডার ডোমিনগেজ।
ম্যাচে যেখানে ইকুয়েডর ৯টি শট নিয়েছে পোস্টে, সেখানে ৮টি শট নেয় আর্জেন্টিনা। তবে ২টি শটস অন টার্গেটে ১টি গোল আসে আর্জেন্টিনার। বল দখলেও বলতে গেলে সমান সমানই ছিল দুই দল। ৫১ ভাগ দখলে আর্জেন্টিনা, ৪৯ ভাগ ইকুয়েডর।