Beta
শনিবার, ২৪ মে, ২০২৫
Beta
শনিবার, ২৪ মে, ২০২৫
আইইইএফএর গবেষণা প্রতিবেদন

জ্বালানি দক্ষতা বাড়ালে বছরে বাঁচতে পারে ৪৬ কোটি ডলার

WhatsApp Image 2024-05-13 at 17.32.16
[publishpress_authors_box]

দেশের অভ্যন্তরীণ চাহিদা মেটাতে আরও বেশি তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) আমদানির পরিবর্তে জ্বালানি দক্ষতা বাড়ানোর দিকে গুরুত্ব দিতে হবে। তাতে বছরে ৪৬ কোটি ডলার সাশ্রয় হতে পরে বাংলাদেশের। এ পদক্ষেপ দেশের ব্যয়বহুল আমদানি নির্ভরতা কমানোর ক্ষেত্রেও ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে।

সম্প্রতি এক গবেষণা প্রতিবেদনে এসব তথ্য তুলে ধরেছে ইন্সটিটিউট ফর এনার্জি ইকোনমিকস অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল অ্যানালাইসিস (আইইইএফএ)।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গ্যাসভিত্তিক ক্যাপটিভ বিদ্যুৎ উৎপাদনে দক্ষতা বৃদ্ধি এবং জেনারেটর থেকে নির্গত তাপের উৎপাদনশীল ব্যবহার নিশ্চিত করা গেলে এলএনজি আমদানি ৫০ দশমিক ১৮ বিলিয়ন ঘনফুট হ্রাস করা সম্ভব এবং এতে বছরে ৪৬ কোটি মার্কিন ডলার সাশ্রয় হতে পারে।

আইইইএফএর গবেষণায় দেখা যায়, শিল্প খাতে গ্যাসচালিত ক্যাপটিভ বিদ্যুৎ উৎপাদনের গড় দক্ষতা ৩৫ দশমিক ৩৮ শতাংশ এবং উচ্চদক্ষতার জেনারেটর ব্যবহারে এটি ৪৫ দশমিক ২ শতাংশে উন্নীত করা সম্ভব।

গ্যাসের উপর অতিমাত্রায় নির্ভরশীলতার কারণে আমদানি খরচ বাড়ছে, যার জন্য ভোক্তাদের অতিরিক্ত ব্যয় করতে হচ্ছে। তাই জ্বালানি কৌশল পুনর্মূল্যায়ন করে এবং গ্যাসের ক্রমবর্ধমান চাহিদা নিয়ন্ত্রণে জ্বালানি দক্ষতা বাড়াতে বাংলাদেশের গুরুত্ব দেওয়া প্রয়োজন।

৫১টি শিল্প কারখানার প্রায় ২৫০ মেগাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতাসম্পন্ন মোট ১২৪টি গ্যাসচালিত ক্যাপটিভ জেনারেটরের ওপর এ জরিপ পরিচালনা করা হয়েছে।

আইইইএফএর প্রধান বিশ্লেষক এবং গবেষণা প্রতিবেদনের লেখক শফিকুল আলম বলেন, “গ্যাসের ক্রমবর্ধমান চাহিদায় অস্থিতিশীল জ্বালানি এলএনজির ওপর নির্ভরশীলতা মাত্রাতিরিক্ত বাড়লে বাংলাদেশের অর্থনীতি আরও ঝুঁকিতে পড়বে।”

শফিকুল আলম বলেন, “দেশের উন্নয়নের জন্য পর্যাপ্ত জ্বালানি আমদানির পরিকল্পনা করা হলেও আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানির মাত্রাতিরিক্ত অস্থিতিশীলতা, স্থানীয় মুদ্রার দরপতন এবং তার আর্থিক অভিঘাত মোকাবেলার বিষয় বিবেচনায় রাখা হয়নি।”

বিভিন্ন খাতে গ্যাসের ক্রমবর্ধমান চাহিদার জন্য এলএনজি আমদানি করতে হচ্ছে। যেমন, গ্রিড বিদ্যুতের নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহের অভাবে শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলি তাদের পণ্য উৎপাদন অব্যাহত রাখার জন্য এবং ক্যাপটিভ বিদ্যুৎ উৎপাদনের খাতিরে গ্যাসের উপর নির্ভর করতে হয়। আর এখানেই রয়েছে সমাধানের পথ।

এই গবেষকের মতে, “গ্যাসভিত্তিক ক্যাপটিভ বিদ্যুৎ উৎপাদনে জ্বালানির অদক্ষ ব্যবহারের ফলে বছরে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ গ্যাস খরচ হয়। গত দশকে ক্যাপটিভ জেনারেশনের গড় দক্ষতা ৩০ শতাংশ থেকে বেড়ে ৩৫ দশমিক ৩৮ শতাংশে উন্নীত হলেও এ খাতে আরও জ্বালানি দক্ষতা বৃদ্ধির সুযোগ রয়েছে।”

শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলোর একটি উল্লেখযোগ্য অংশই এই জেনারেটর থেকে নির্গত তাপ কোনও উৎপাদনশীল কাজে ব্যবহারও করে না।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ পুরাতন ও অদক্ষ তথা ব্যয়বহুল জেনারেটরের বদলে জ্বালানি দক্ষ জেনারেটর লাগিয়ে এবং জেনারেটর থেকে নির্গত তাপকে কাজে লাগিয়ে আমদানি করা এলএনজির চাহিদা বছরে ৫০ দশমিক ১৮ বিলিয়ন ঘনফুট বা ২১ শতাংশ কমাতে পারে, যা বছরে ৪৬০ মিলিয়ন ডলার সাশ্রয় করবে।

গবেষণায় দেখা গেছে, জেনারেটর প্রতিস্থাপনের জন্য উল্লেখযোগ্য অগ্রিম বিনিয়োগের প্রয়োজন হলেও এই মূলধন ব্যয় উঠে আসতে দেড় থেকে পাঁচ বছর সময় লাগবে। আর জেনারেটর থেকে নির্গত তাপ উৎপাদনশীল কাজে ব্যবহারের জন্য করা বিনিয়োগ মাত্র এক বছরেই তুলে আনা সম্ভব হবে।

তা না করলে, জ্বালানির চাহিদা মেটাতে নতুন অবকাঠামোতে অনেক বেশি বিনিয়োগ করতে হবে, তাও এমন এক সময়ে যখন পরিবেশবান্ধব পণ্য উৎপাদনের লক্ষ্যে বিশ্বব্যাপী নীতিমালা কঠোর হচ্ছে।

আইইইএফএর প্রধান বিশ্লেষক মনে করেন, সাশ্রয়ী জ্বালানির যুগ শেষ হতে চলেছে। কারণ সরকার অদূর ভবিষ্যতে আরও প্রতিযোগিতামূলক দামে জ্বালানি সরবরাহ করবে। ফলে জ্বালানি দক্ষতা বৃদ্ধিতে বিনিয়োগ শিল্প কারখানাগুলোকে অর্থ সাশ্রয়ের দিক থেকে বেশি লাভবান করবে। জ্বালানি সাশ্রয়ে পদক্ষেপ গ্রহণে দেরি করলে রপ্তানিমুখী শিল্প কারখানাগুলো আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে যেতে পারে।

শফিকুল আলম বলেন, “পুরোপুরি নিজস্ব জ্বালানির উপর নির্ভরতা আমাদের জন্য অনেকটাই অসম্ভব। তবে নীতিমালা প্রণয়ন করে অবশ্যই আমদানি নির্ভরতায় লাগাম টেনে ধরার উপায় খুঁজে বের করতে হবে।

“এলএনজি আমদানি নির্ভরতা কমাতে বাংলাদেশের সময় লাগবে। তবে নীতিনির্ধারকদের এখনই পরিকল্পনা ও তৎপরতা শুরু করতে হবে, যেন বাংলাদেশ পরবর্তী বৈশ্বিক ধাক্কা সামাল দিতে পারে।”

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত