জালিয়াতির মাধ্যমে দুটি কাগুজে প্রতিষ্ঠানের নামে ঋণ নিয়ে প্রায় ৭৭০ কোটি আত্মসাতের অভিযোগে দেশ টেলিভিশন লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও হাসান টেলিকম লিমিটেডের চেয়ারম্যান আরিফ হাসানসহ ১৯ জনের বিরুদ্ধে দুটি মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
বৃহস্পতিবার কমিশনের সমন্বিত জেলা কার্যালয় ঢাকা-১ এ দুদকের পক্ষে এসব মামলা করা হয়েছে বলে সংস্থাটির মহাপরিচালক (প্রতিরোধ) মো. আক্তার হোসেন সাংবাদিকদের জানিয়েছেন।
মামলার অন্যান্য আসামিরা হলেন, ব্রডওয়ে রিয়েল এস্টেট লিমিটেডের চেয়ারম্যান মো. ইসমাইল, ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মোহাম্মদ শরীফ উজ্জামান খান, দুই পরিচালক মোহাম্মদ ফজলে রাব্বি ও তওসিফ সাইফুল্লাহ।
এছাড়া ন্যাশনাল ব্যাংকের সাবেক শাখা ব্যবস্থাপক ও ডেপুটি ম্যানেজিং ডিরেক্টর সৈয়দ রইস উদ্দিন, সাবেক অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এএমডি) ও কোম্পানি সেক্রেটারি এ এস এম বুলবুল, সাবেক অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম এ ওয়াদুদ, সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক চৌধুরী মোসতাক আহমেদ।
এছাড়া ব্যাংকের সাবেক পরিচালক ও সিকদার গ্রুপের সদস্য মনোয়ারা সিকদার, পারভীন হক সিকদার, রন হক সিকদার, খলিলুর রহমান, মাবরুর হোসেন, বর্তমান পরিচালক মোয়াজ্জেম হোসেন ও মোহাম্মদপুরের সাবেক সাব-রেজিস্ট্রার মো. রজব আলীকে আসামি করা হয়েছে।
অন্যদিকে, ঋণ নেওয়া আরেকটি কাগুজে প্রতিষ্ঠান প্রকৃতি এ্যাসোসিয়েটসের সত্ত্বাধিকারী মো. শরীফ-উজ্জামান খান, ন্যাশনাল ব্যাংকের নির্বাহী ভাইস প্রেসিডেন্ট মো. জহিরুল ইসলাম ও সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট আবু রাশেদ নোয়াবকে আসামি করা হয়েছে।
এক মামলার এজাহার বলা হয়, ব্রডওয়ে রিয়েল এস্টেট লিমিটেড। সিকদার পরিবার ও দেশ টেলিভিশন লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আরিফ হাসান পরস্পর যোগসাজশে টেলিভিশনটির কতিপয় কর্মচারীর নাম ব্যবহার করে ব্রডওয়ে রিয়েল এস্টেট লিমিটেড নামে একটি কাগুজে খুলেন। ১৬তলা বাণিজ্যিক ভবন নির্মাণের জন্য ন্যাশনাল ব্যাংকের মহাখালী শাখায় ব্রডওয়ে রিয়েল এস্টেটের নামে ৪৯০ কোটি টাকা ঋণ নেয়।
কিন্তু এ প্রকল্পের জমি অপরের হওয়া সত্ত্বেও নিজস্ব জমি দেখিয়ে এ ঋণ নেওয়া হয়। হাসান টেলিকমের নামে সম্পত্তির মর্টগেজ সম্পর্কিত তথ্য গোপন করে তা ব্যাংকিং নীতিমালা সম্পূর্ণরূপে উপেক্ষা করে ক্ষমতার অপব্যবহার করা ৪৯০ টাকা ঋণ মঞ্জুর ও তা উত্তোলন করে আত্মসাৎ করেন আসামিরা।
গত ৩০ নভেম্বরে পর্যন্ত অনাদায়ে সুদ ১৭৮ কোটি ৮৯ লাখ ১১ হাজার ৪১২ টাকাসহ ৬৬৮ কোটি ৮৯ লাখ ১১ হাজার টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে বলে মামলায় অভিযোগ আনা হয়।
আরেক মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, ভুয়া কাগজপত্রের মাধ্যমে প্রকৃতি এসোসিয়েটস নামে কাগুজে প্রতিষ্ঠান ন্যাশনাল ব্যাংক মহাখালী শাখা থেকে ৮০ কোটি টাকা ঋণ নিয়ে আত্মসাত করেন।
গত বছরের ১৭ নভেম্বর পর্যন্ত ২১ কোটি ২৪ লাখ ১৯৯ টাকাসহ আসামিদের বিরুদ্ধে ১০১ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ আনা হয়েছে।
আরও দুই প্রতিষ্ঠানের নামে ৬৪৪ কোটি টাকা আত্মসাতে দুই মামলা
জালিয়াতি ও প্রতারণার মাধ্যমে ন্যাশনাল ব্যাংক থেকে মরিয়ম কনস্ট্রাকশন লিমিটেড ও দি ভিউ হোটেল অ্যান্ড রিসোর্ট লিমিটেডের নামে ৬৪৪ কোটি ৩৪ লাখ টাকা ঋণের নামে আত্মসাতের অভিযোগে আরও দুটি মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
এর মধ্যে এ মামলায় ১৩ জন এবং অপর মামলায় ১১ জনকে আসামি করা হয়েছে বলে দুদকের মহাপরিচালক আক্তার হোসেন জানিয়েছেন।
এক মামলায় আসামিদের বিরুদ্ধে জালিয়াতি ও প্রতারণার মাধ্যমে মাধ্যমে ন্যাশনাল ব্যাংকের গুলশান শাখা অবৈধভাবে ৩০০ কোটি টাকা ঋণ নিয়ে পরবর্তীতে সুদআসলসহ ৫৮৩ কোটি ১৩ লাখ ৩ হাজার ৮৪৮ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ আনা হয়েছে।
এ মামলার আসামিরা হলেন, মরিয়ম কনস্ট্রাকশন লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আলম আহমেদ, পরিচালক বাবু হরিদাস বর্মন, পরিচালক, ন্যাশনাল ব্যাংকের সাবেক ডিএমডি ও সাবেক ব্যবস্থাপক আরীফ মো. শহীদুল হক, সাবেক অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ এস এম বুলবুল, এম এ ওয়াদুদ, সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক চৌধুরী মোসতাক আহমেদ।
এছাড়া ব্যাংকটির সাবেক পরিচালক ও সিকদার পরিবারের সদস্য রন হক সিকদার ও রিক হক সিকদার, পরিচালক মোয়াজ্জেম হোসেন, সাবেক স্বতন্ত্র পরিচালক এ কে এম এনামুল হক শামীম, সাবেক পরিচালক খলিলুর রহমান, সাবেক পরিচালক জাকারিয়া তাহের ও সাবেক পরিচালক মাবরুর হোসেনকে আসামি করা হয়েছে।
এদিকে, দি ভিউ হোটেল অ্যান্ড রিসোর্ট লিমিটেডের নামে জালিয়াতি ও প্রতারণার মাধ্যমে ন্যাশনাল ব্যাংকের কুয়াকাটা শাখা ৪০ কোটি টাকা ঋণ নিয়ে সুদাসলে ৬১ কোটি ২১ লাখ ২০ হাজার ২৭৯ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে ১১ জনের বিরুদ্ধে আরেকটি মামলা করা হয়েছে।
এ মামলায় দি ভিউ হোটেল অ্যান্ড রিসোর্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক নাহিদ সারওয়ার, পরিচালক মোস্তফা মঈন সারওয়ার, ন্যাশনাল ব্যাংকের এমডি চৌধুরী মোসতাক আহমেদ, প্রিন্সিপাল অফিসার ও কুয়াকাটা শাখা ব্যবস্থাপক (চাকুরিচ্যুত) রুমি ইমরোজ রশিদ, ব্যাংকের উপব্যবস্থাপনা পরিচালক শাহ্ সৈয়দ আব্দুল বারী, সাবেক পরিচালক মনোয়ারা সিকদার, খলিলুর রহমান, মোয়াজ্জেম হোসেন, রিক হক সিকদার, মাবরুর হোসেন, এবং সাবেক স্বতন্ত্র পরিচালক নাঈমুজ্জামান ভূইয়া।