দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের রেশ কাটতে না কাটতেই সিটি করপোরেশন, জেলা পরিষদ, পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদের সাধারণ ও বিভিন্ন শূন্য পদে উপ-নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। আগামী ৯ মার্চ স্থানীয় সরকারের ২৩৩ জনপ্রতিনিধি নির্বাচনে ভোট হবে। এর মধ্যে সিটি করপোরেশন, পৌরসভা, জেলা পরিষদের সাধারণ নির্বাচনের ভোট হবে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম), বাকিগুলোতে ভোট হবে ব্যালটে।
বুধবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে ইসি সচিব জাহাংগীর আলম এসব তথ্য জানান।
তিনি বলেন, “নির্বাচন কমিশনের সিদ্ধান্তের আলোকে আগামী ৯ মার্চ সাধারণ ও উপ-নির্বাচন মিলিয়ে ২২৩টি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। যার মধ্যে সিটি করপোরেশন একটি, সিটি করপোরেশন শূন্য পদে চারটি, পৌরসভার সাধারণ পদে তিনটি, পৌরসভার শূন্য পদে উপ-নির্বাচন ১৫টি, ইউনিয়ন পরিষদের সাধারণ নির্বাচন ১৩টি, শূন্য পদে উপ-নির্বাচন বিভিন্ন পদে ১৯০টি, জেলা পরিষদে শূন্য পদে নির্বাচন সাতটি– সব মিলিয়ে ২৩৩টি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।”
দেশের দ্বাদশ সিটি করপোরেশন হিসেবে গেজেট প্রকাশের পর ২০১৯ সালের ৫ মে ময়মনসিংহে প্রথম নির্বাচন হয়। নিয়ম অনুযায়ী এই সিটি ভোটের ক্ষণ গণনা শুরু হয়েছে গত বছরের ২০ ডিসেম্বর। চলতি বছর ১৯ জুনের মধ্যে নির্বাচন শেষ করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে।
অন্যদিকে, ২০২২ সালের ১৫ জুন কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের নির্বাচনে মেয়র নির্বাচিত হন মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আরফানুল হক রিফাত। গত ১৩ ডিসেম্বর তার মৃত্যু হওয়ায় মেয়র পদে এই সিটিতে উপনির্বাচন করতে হচ্ছে নির্বাচন কমিশনকে।
তফসিল ঘোষণা করে ইসি সচিব জানান, মনোনয়ন জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ১৩ ফেব্রুয়ারি। বাছাইয়ের তারিখ ১৫ ফেব্রুয়ারি। বাছাইয়ে বাতিল হওয়া প্রার্থীদের আপিল ১৬ থেকে ১৮ ফেব্রুয়ারি। আপিল নিষ্পত্তি ১৯ থেকে ২০ ফেব্রুয়ারি। প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ তারিখ ২২ ফেব্রুয়ারি। প্রতীক বরাদ্দ ২৩ ফেব্রুয়ারি। ভোটগ্রহণ ৯ মার্চ।
৯ মার্চ সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪ টা পর্যন্ত একটানা বিরতিহীনভাবে ভোট চলবে জানিয়ে ইসি সচিব বলেন, “জেলা পরিষদের নির্বাচনটা একটু ভিন্ন হবে। যারা স্থানীয় সরকারের নির্বাচিত প্রতিনিধি তারাই ভোট দেবেন। সেক্ষেত্রে সময়সূচি ভিন্ন হবে। সিটি করপোরেশন, পৌরসভা জেলা পরিষদের সাধারণ নির্বাচন ও উপ-নির্বাচনে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ব্যবহার হবে। বাকি নির্বাচনগুলো স্বচ্ছ ব্যালট বাক্স এবং ব্যালট পেপারের মাধ্যমে অনুষ্ঠিত হবে।”
জাহাংগীর আলম বলেন, “ময়মনসিংহ সিটির করপোরেশন নির্বাচনে সংশ্লিষ্ট আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা রিটার্নিং কর্মকর্তার দায়িত্ব পালন করবেন। সাতজন সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা তাকে সহায়তা করবেন। কুমিল্লার মেয়র পদে উপ-নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা থাকবেন কুমিল্লার আঞ্চলিক জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা।”
পটুয়াখালী পৌরসভা, জামালপুরের বকশীগঞ্জ পৌরসভা ও বরগুনার আমতলী পৌরসভায় সাধারণ নির্বাচন হবে। এছাড়া পাঁচটি পৌরসভার শূন্য পদে উপ-নির্বাচন হবে।
এর আগে মঙ্গলবার স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের এক চিঠিতে বলা হয়, কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের সীমানা নির্ধারণ চলমান আছে। এই কার্যক্রম চূড়ান্ত হওয়ার পর মেয়রের শূন্য পদে উপ-নির্বাচন আয়োজনের ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেওয়া হয় চিঠিতে।
এতে কুমিল্লা সিটি নির্বাচন নিয়ে কোনও জটিলতা আছে কি না জানতে চাইলে ইসি সচিব বলেন, “কুমিল্লা নিয়ে জটিলতা আছে কি না সেটা আসলে আইন বলতে পারবে। স্থানীয় সরকার বিভাগ থেকে একটি পত্র পেয়েছি। কমিশনে সেটা উত্থাপন করা হবে। কমিশনের সিদ্ধান্তের বিষয়ে যদি কিছু হয় পরবর্তী সময়ে জানানো হবে।”
দলীয় প্রতীক ছাড়া উপজেলা ভোটের বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে ইসি সচিব বলেন, “এটা রাজনৈতিক দলগুলোর সিদ্ধান্তের বিষয়। স্থানীয় সরকারের নির্বাচনে সত্যিকার অর্থে সবাই অংশগ্রহণ করে। প্রতীক না থাকলে আরও বেশি পার্টিসিপেটরি (অংশগ্রহণমূলক) হবে বলে আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি।”
৯ মার্চ যেসব পদে নির্বাচন
ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশনে সাধারণ, কুমিল্লা সিটি করপোরেশনে মেয়র পদে উপনির্বাচন, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ১১ নম্বর সাধারণ ওয়ার্ড কাউন্সিলর, বরিশাল সিটি করপোরেশনের ৮ ও ২২ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর, তিনটি পৌরসভায় (পটুয়াখালী, বকশীগঞ্জ ও আমতলী) সাধারণ নির্বাচন, পাঁচটি পৌরসভায় (ত্রিশাল, মুন্সিগঞ্জ, শিবগঞ্জ, কাটাখালী ও তাহেরপুর) মেয়র পদে উপনির্বাচন, ১০টি পৌরসভার সাধারণ কাউন্সিলর পদে উপনির্বাচন, ১৩টি ইউনিয়ন পরিষদে সাধারণ নির্বাচন, ২১টি ইউনিয়ন পরিষদে চেয়ারম্যান পদে উপনির্বাচন, ১৪৬টি ইউনিয়ন পরিষদের সাধারণ সদস্য পদে উপনির্বাচন, ২৩টি ইউনিয়নের সংরক্ষিত সদস্য পদে উপনির্বাচন এবং ছয়টি জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদে ও একটি সদস্য পদে উপনির্বাচন।
