Beta
শুক্রবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৫
Beta
শুক্রবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৫

ভারতে ভোটে তারকাদের হারজিত   

ভারতে ভোটে তারকাদের হারজিত
[publishpress_authors_box]

এক্সিট পোলের জল্পনার অবসান ঘটিয়ে ভারতে ৪ জুন দিনভর ১৮তম লোকসভা ভোটের ফলাফল ঘোষণা হয়েছে।

পুরাদস্তুর রাজনীতিকদের পাশাপাশি তারকাদের মেলা বরাবরই ভারতীয় রাজনীতির গ্ল্যামার ধরে রেখেছে। ফলাফল ঘোষণা শুরু হতেই সবার চোখ তারকা প্রার্থীদের দিকেও তাই; কেমন করলেন তারা এবার?

মান্ডি জয়ী কঙ্গনা রানাউত

রাজনীতি ডাক আগে ফিরিয়ে দিলেও এবার বলিউড ‘কুইন’ কঙ্গনা রানাউত বিজেপির টিকেট লুফে নিয়েছেন। হিমাচল কন্যার জন্য মান্ডি আসন রেখেছিল মোদীর দল বিজেপি। সোশাল মিডিয়া হ্যান্ডেলে কঙ্গনাও বারবার জানিয়েছেন পাহাড় ডিঙ্গিয়ে ভোটের প্রচারণার কাজ করার কথা।

মান্ডি আসনে কঙ্গনার প্রতিপক্ষ কংগ্রেসের প্রার্থী সাবেক মুখ্যমন্ত্রী বীরভদ্র সিং ও বর্তমান এমপি প্রতিভা সিং যুগলের ছেলে বিক্রমাদিত্য সিং।

প্রথমবার ভোটের লড়াইয়ে নেমে কেমন করলেন কঙ্গনা?

সিনেমায় সফল ৩৭ বছর বয়সী কঙ্কনা রানাউত জীবনের প্রথম ভোটেও সফল হলেন; এখন তিনি নিজেকে ‘মান্ডির সংসদ’ বলতে শুরু করেছেন।

চারবার জাতীয় পুরস্কার পাওয়া এই অভিনেত্রী লোকসভা ভোটে মান্ডি আসনে পাঁচ লাখ ৩৭ হাজার ২২ ভোট পেয়েছেন। বিক্রমাদিত্য সিং পেয়েছেন চার লাখ ৬২ হাজার ২৬৭ ভোট।

অর্থ্যাৎ কঙ্গনা ৭৪ হাজার ৭৫৫ ভোটের ব্যবধানে জিতে গেছেন।

বিজেপিকে নর্থ ইস্ট দিল্লি দিচ্ছেন মনোজ তিওয়ারি  

একসময় ভোজপুরি সিনেমায় গান ও অভিনয় করতেন মনোজ তিওয়ারি। উপহার দিয়েছেন ব্যবসা সফল সিনেমা। এরপরও রাজনীতিতেই নিজেকে সঁপে দিয়েছেন বিজেপির এই ৫০ পেরোনো নেতা।

নর্থ ইস্ট দিল্লির মতো ওজনদার আসনে এই নিয়ে তিনবার দলের টিকিট পেয়েছেন তিনি; এই গরিমা বিজেপিতে একমাত্র মনোজ তিওয়ারিই করতে পারেন এখন পর্যন্ত।

দলকে এই আসন আবারও পাইয়ে দিয়েছেন মনোজ তিওয়ারি। ভোটে তার প্রতিপক্ষ ছিল কংগ্রেসের কানাইয়া কুমার; যাকে এক লাখ ৩৮ হাজার ভোটের ব্যবধানে হারিয়ে দিয়েছেন তিনি।

আসানসোল হাতে রাখলেন শত্রুঘ্ন সিনহা

শত্রুঘ্ন সিনহা রাজনীতিতে এসেছেন ১৯৮০ সালে; তখন বিজেপিতে যোগ দিয়েছিলেন তিনি। তবে প্রথম ভোটের লড়াই করেন ১৯৯২ সালে; প্রতিপক্ষ ছিলেন কংগ্রেস দলের রাজেশ খান্না। সেবার নায়ক রাজেশ খান্নার কাছে ২৫ হাজার ভোটের ব্যবধানে হেরেছিলেন তিনি।

রাজ্যসভায় ১৯৯৬ এবং ২০০২ সালে অর্থ্যাৎ দুই দফায় নির্বাচিত হয়েছিলেন শত্রুঘ্ন সিনহা। তিনি স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী ছিলেন ২০০২ থেকে ২০০৩ সালে; এরপর ২০০৩ থেকে ২০০৪ সালে অটল বিহানী বাজপাই আমলে শিপিং মন্ত্রী ছিলেন।

শত্রুঘ্ন সিনহা ২০০৯ সালে বিজেপির টিকেটে পাটনা সাহিব জিতে নেন; নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বে বিজেপির হয়ে ২০১৪ সালে কংগ্রেস প্রার্থী কুনাল সিংকে এক লাখে ভোটে হারিয়ে দেন।     

২০১৯ সালে প্রধানমন্ত্রী মোদীর সমালোচনার পর ওই বছর পাটনা সাহিব আসনে দলের মনোনয়ন হারান তিনি; বিজেপির সঙ্গে তিন দশকের সম্পর্কে তখনই চিড় ধরে। এরপর কংগ্রেসের হযে পাটনা সিহাব আসনে লড়লেও বিজেপির প্রার্থীর কাছে হেরে যান শত্রুঘ্ন সিনহা।

২০২২ সালে তৃণমূলে কংগ্রেসে যোগ দিয়ে আসানসোল আসন নিয়ে আবারও লোকসভার ভোটে জয়ের মুখ দেখেন তিনি; এবারও তৃণমূল কংগ্রেসের হয়ে এই আসন নিজের দখলেই রেখেছেন।

শত্রুঘ্ন সিনহা ছয় লাখের বেশি ভোট পেয়েছেন। অন্যদিকে বিজেপির প্রার্থী পেয়েছেন সাড়ে পাঁচ লাখ ছুঁই ছুঁই ভোট। অর্থ্যাৎ ৫৯ হাজার ৫৬৪ ভোটের ব্যবধানে এই আসনে দখল ধরে রেখেছে তৃণমূল কংগ্রেস।  

মথুরায় হেমা মালিনী

টানা তিনবার মথুরায় জয়ের মুখ দেখেছেন নিজেকে ‘কৃষ্ণের গোপী’ বলা হেমা মালিনী। মথুরায় ২৬ এপ্রিল লোকসভা ভোট হয়। কংগ্রেস সমর্থিত প্রার্থী মুকেশ ধানগর এবং বিএসপি দলের সুরেশ চন্দ্রার থেকে এই আসনে ২ লাখ ভোটের ব্যবধানে জিতেছেন বিজেপির হেমা মালিনী।

৭৫ বছর বয়সী এই বলিউড অভিনেত্রী হেমা মালিনী নির্বাচনী প্রচারণায় দাবি করে আসছিলেন, তিনি মথুরা, বৃন্দাবনের জন্য অনেক কাজ করেছে। জনগণও যে সেটাই মনে করে, তার প্রমাণ নির্বাচনে ৫ লাখেরও বেশি ভোট পাওয়া।

কারাকাট হারালেন স্বতন্ত্র পবন সিং

ভোজপুরি সিনেমা তারকা পবন সিং বিহারের কারাকাট আসনে লড়ছিলেন কমিউনিস্ট পার্টি অব ইন্ডিয়া দলের প্রার্থী রাজা রাম সিংয়ের বিরুদ্ধে। তবে স্বতন্ত্র প্রার্থী পবন সিং খুব একটা সুবিধা করতে পারেননি এই আসনে। রাজা রাম সিং তিন লাখ ৮০ হাজার ৫৮১ ভোট পেয়েছেন; আর পবন সিং পেয়েছেন দুই লাখ ৭৪ হাজার ৭২৩ ভোট। অর্থ্যাৎ পবন সিং হেরেছেন এক লাখ পাঁচ হাজার ৮৫৮ ভোটের ব্যবধানে।    

গোরখপুর হলো রবি কিষাণের

বিজেপির টিকিটে গোরাখপুরে ভোটের লড়াইতে নেমেছিলেন ভোজপুরি-বলিউড এবং টিভিমুখ রবি কিষাণ। এখানে তার প্রতিপক্ষ এসপি প্রার্থী কাজল নিষাদ এবং বিএসপি প্রার্থী জাভেদ আশরাফ কিষাণ।

২০১৯ সালের ভোটে রবি কিষাণ জিতেছিলেন এসপি প্রার্থী রামভুয়াল নিষাদকে হারিয়ে।   

সাত দফার লোকসভা নির্বাচনে এবার ১ জুন গোরখপুর আসনে ভোট হয়। এই আসনে রবি কিষানের প্রতিপক্ষ প্রার্থীও একজন অভিনেতা; সমাজবাদী পার্টি সমর্থিত কাজল নিষাদ। তাকে এক লাখ তিন হাজার ৫২৬ ভোটের ব্যবধানে হারিয়েছেন বিজেপির রবি কিষাণ।

রবি কিষাণ পেয়েছেন পাঁচ লাখ ৮৫ হাজার ৮৩৪ সংখ্যক ভোট।   

আজমগড়  হারালেন দিনেশ লাল যাদব   

অনেকের কাছে নিরাহুয়া নামে পরিচিত দিনেশ লাল যাদব। নিরুহুয়া এনটারটেইনমেন্ট প্রাইভেট লিমিটেড নামে একটি প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানও আছে তার। ২০১৫ সালে একাধারে পাঁচটি বক্স অফিস কাঁপানো সিনেমা উপহার দিয়েছিলেন ভোজপুরি অভিনেতা দিনেশ লাল যাদব।  

উত্তর প্রদেশের আজমপড় আসনে বিজেপির প্রার্থী হয়েছিলেন তিনি এবারের লোকসভা ভোটে। কিন্তু বিধি বাম। এই আসনে জয়ী হতে পারেননি তিনি। এসপি দলের প্রার্থী ধর্মেন্দ্র যাদব এই আসনে জয়ী হয়েছেন।  

২০১৯ সালেও এসপি দলের প্রধান অখিলেশ যাদবের কাছে হেরেছিলেন দিনেশ লাল যাদব।

পিঠাপুরম থাকলো পবন কল্যাণের

নায়ক চিরঞ্জীবীর ছোট ভাই এবং তেলুগু সিনেমার অভিনেতা জনসেনা দলের প্রধান পবন কল্যাণ অন্ধ্র প্রদেশের পিঠাপুরম আসনে ৭০ হাজার ভোটের ব্যবধানে জিতে গেছেন।

ভারতের নির্বাচন কমিশনের তথ্য অনুসারে, পবন কল্যাণ পেয়েছেন এক লাখ ৩৪ লাখ ৩৯৪; আর তার নিকটবর্তী প্রতিযোগী গীতা পেয়েছেন ৬৪ হাজার ১১৫ ভোট।  

ত্রিশুর জিতলেন সুরেশ গোপী

অভিনেতা থেকে নেতা বনে যাওয়া সুরেশ গোপী লোকসভার ভোটে বিজেপির হয়ে ইতিহাস লিখলেন। সুরেশ গোপীর হাত ধরে শেষ পর্যন্ত কেরালায় ঢুকতে পেরেছে বিজেপি।

বিজেপি নেতৃত্বাধীন এনডিএ জোটের হয়ে ত্রিশুরে চার লাখ ৯২৩৯ ভোট পেয়েছেন সুরেশ গোপী। নিকটবর্তী প্রতিদ্বন্দ্বী থেকে ৭৫ হাজারেরও বেশি ভোটে এগিয়ে আছেন তিনি।  

মিরাট পেলেন ‘ভগরাম রাম’ অরুণ গোভিল

টিভি সিরিজ ’রামায়ণ’ থেকে অরুণ গোভিল এখনও পর্যন্ত ভারতীয়দের কাছে রাম হয়ে আছেন। এই অভিনেতার জন্ম হয়েছে মিরাটে। বিজেপির হয়ে উত্তর প্রদেশের এই আসন বাগিয়ে নিছেন ‘ভগবান রাম’ অরুণ গোভিল। তিনি পেয়েছেন পাঁচ লাখ ৪৬ হাজার ৪৬৯ ভোট।

এই আসনে বিজেপি প্রার্থী অরুণ গোভিলের প্রতিপক্ষ এসপি সুনিতা ভার্মা পেয়েছেন পাঁচ লাখ ৩৫ হাজার ৮৮৪ ভোট। বহুজন সমাজ পার্টি প্রার্থী দেবব্রত কুমার তিয়াগি পেয়েছেন ৮৭ হাজার ২৫ ভোট।

আমেথি হারালেন বিজেপির স্মৃতি ইরানি

২০ মে আমেথি আসনে লোকসভা ভোট হয়েছিল। এখানে ভোটারের উপস্থিতি ছিল ৫৪ দশমিক ৪০ শতাংশ। এই আসনে বেশ শক্ত লড়াই চলেছে বিজেপি ও কংগ্রেস পার্টির মধ্যে। ফলাফলে হেরেছে বিজেপি।

২০১৯ সালে নারী ও শিশু উন্নয়ন মন্ত্রী এবং পরে মাইনরিটি অ্যাফেয়ার্স মন্ত্রী হওয়ার অভিজ্ঞতা আছে স্মৃতি টিভি অভিনেত্রী ইরানির। এরপরও শেষ রক্ষা হয়নি তার।

২০১৯ সালে রাহুল গান্ধীকে ভোটে হারিয়েছিলেন স্মৃতি ইরানি, এবার গান্ধী পরিবারের কাছে মানুষ কিশোরী লাল শর্মার কাছে হারতে হলো তাকে।

কিশোরী লাল শর্মা এই আসনে পেয়েছেন পাঁচ লাখ ৩৯ হাজার ২২৮ ভোট। অন্যদিকে স্মৃতি ইরানি পেয়েছেন তিন লাখ ৭২ হাজার ৩২ ভোট।

শতাব্দী রায় এখন পুরোদস্তুর রাজনীতিবিদই বটে

নায়িকা শতাব্দী রায় তৃণমূল কংগ্রেসের হয়ে চতুর্থবারের মতো নির্বাচন জিতেছেন। তৃণমূল কংগ্রেসের আগের তিনবারের এই সংসদ সদস্যের জন্য এবারের নির্বাচন অবশ্য কঠিন ছিল। কেননা, বীরভূমে দলের সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল এখন গরু পাচারের মামলায় তিহার জেলে রয়েছেন।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছিলেন, অনুব্রতহীন বীরভূমে শতাব্দী রায়ের জেতাটা কঠিনই হবে। তাদের সে আশঙ্কা উড়িয়ে দিয়ে নব্বই দশকের এ বাংলা সিনেমার নায়িকা জিতেছেন প্রায় দুই লাখ ভোটের ব্যবধানে।

দেব জিতেছেন নায়ক হিসেবেই

দুই বাংলাতেই নায়ক হিসেবে জনপ্রিয় দীপক অধিকারী, যাকে সবাই দেব নামেই চেনেন। এর আগে ২০১৪ এবং ২০১৯ সালে দুই বার ঘাটাল থেকে তৃণমূলের হয়ে জিতেছেন দেব। গতবার বিজেপির ভারতী ঘোষ হেরেছিলেন দেবের বিপরীতে। এ বার কৌশল হিসেবে বিজেপি। দেবের বিপরীতে আরেক অভিনেতা হিরণ চট্টোপাধ্যায়কে প্রার্থী করেছিল। তবে সে চেষ্টা সফল হয়নি। দেব জিতেছেন প্রায় পৌনে দুই লাখ ভোটের ব্যবধানে। পেয়েছেন প্রায় ৮ লাখ ৩৮ হাজার ভোট।

রচনা নিজেই এবার ‘দিদি নম্বর ওয়ান’

নারীদের জনপ্রিয় অনুষ্ঠান দিদি নম্বর ওয়ানের উপস্থাপিকা ও জনপ্রিয় অভিনেত্রী রচনা ব্যানার্জীকে জয় ছিনিয়ে আনতে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের মুখোমুখি হতে হয়েছে। তৃণমূল কংগ্রেসের হয়ে লোকসভা নির্বাচনে হুগলিতে রচনা ব্যানার্জীর মনোনয়ন পাওয়াই ছিল একটি চমক। তার বিপরীতে বিজেপির হয়ে দাঁড়িয়েছিলেন আরেক অভিনেত্রী লকেট চ্যাটার্জী।

তৃণমূলের রচনা ব্যানার্জী (বামে) এবং বিজেপির লকেট চ্যাটার্জী (ডানে)

বাস্তবে রচনা ব্যানার্জী ও লকেট চ্যাটার্জী দুই বন্ধু। তৃণমূল কংগ্রেসের হাত থেকে ২০১৯ সালের লোকসভা ভোটে হুগলি আসন ছিনিয়ে নেয় বিজেপির তারকা প্রার্থী লকেট চ্যাটার্জী। রাজনীতির পাশাপাশি ভোটে লড়ার অভিজ্ঞতাও লকেটের আগে থেকে ছিল। কাজেই বন্ধু রচনাকে হারানোর ব্যাপারে প্রত্যয়ী ছিলেন তিনি।

ইউসুফ পাঠানের চমক
বহরমপুর আসন থেকে তৃণমূল কংগ্রেসের হয়ে লড়াই করে জিতেছেন ক্রিকেট বিশ্বকাপজয়ী ভারতীয় দলের সদস্য অলরাউন্ডার ইউসুফ পাঠান। রাজনীতির মাঠে নেমেই তিনি কংগ্রেসের হেভিওয়েট প্রার্থী অধীর রঞ্জন চৌধুরীকে ছক্কা পেটালেন। অধীর বহরমপুরের ‘রবিনহুড’ নামে খ্যাত, জেলা কংগ্রেসের সভাপতি এবং ২৫ বছর ধরে লোকসভা নির্বাচনে এই আসন থেকে বিজয়ী প্রার্থী ছিলেন। তাকে ইউসুফ পাঠানের ৫০ হাজারেরও বেশি ভোটের ব্যবধানে হারানো তাই এক প্রকার বিস্ময়ই বলা চলে।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত