সাম্প্রতিক বন্যার ধকল কাটিয়ে ওঠার আগেই ফেনী ও নোয়াখালীসহ দেশের আট জেলার নিম্নাঞ্চল নতুন করে প্লাবিত হতে পারে বলে আভাস দিয়েছে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র।
ভারি বৃষ্টির কারণে চট্টগ্রাম বিভাগের নদ-নদীগুলোতে পানি বেড়ে এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে বলে শনিবার সকালে বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের নিয়মিত বুলেটিনে আভাস দেওয়া হয়।
অতিবৃষ্টি এবং উজান থেকে নেমে আসা ঢলের কারণে সম্প্রতি ফেনী, কুমিল্লা, চট্টগ্রাম, খাগড়াছড়ি, নোয়াখালী, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়ীয়া, সিলেট, লক্ষ্মীপুর ও কক্সবাজার জেলা বন্যার কবলে পড়ে। আকস্মিক এই বন্যায় ভেসে যায় বহু ঘরবাড়ি, গাছপালা, গবাদিবশু। সহায়-সম্বলহীন হয়ে পড়ে লাখো মানুষ।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সবশেষ তথ্য অনুযায়ী, এই বন্যায় দেশের ১১ জেলায় ৭১ জনের মৃত্যু হয়েছে, যার মধ্যে পুরুষ ৪৫, নারী ৭ ও শিশু ১৯ জন। বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৫০ লাখের বেশি মানুষ।
দেশের সকল প্রধান নদ-নদীর পানি সমতল বিপদসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে জানিয়ে শনিবার বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র জানায়, চট্টগ্রাম বিভাগের মুহুরী, ফেনী ও মাতামুহুরী নদীর পানি সমতল হ্রাস পাচ্ছে ও গোমতী নদীর পানি সমতল স্থিতিশীল আছে। তবে হালদা ও সাঙ্গু নদীর পানি সমতল বৃদ্ধি পাচ্ছে।
আবহাওয়া সংস্থাসমূহের পূর্বাভাসের বরাত দিয়ে বুলেটিনে বলা হয়, দেশে এবং উজানে ভারী বৃষ্টিপাতের (২৪ ঘণ্টায় ৪৪ থেকে ৮৮ মিলিমিটার) প্রবণতার প্রেক্ষিতে আগামী ২৪ ঘণ্টায় চট্টগ্রাম বিভাগের নদীসমূহের পানি সমতল বৃদ্ধি পেতে পারে এবং চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, বান্দরবান, খাগড়াছড়ি, ফেনী, কুমিল্লা, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর জেলার কতিপয় নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হতে পারে।
ঢাকা, বরিশাল ও খুলনা বিভাগের নদীসমূহের পানি সমতল স্থিতিশীল আছে বলেও উল্লেখ করা হয় বুলেটিনে।
আবহাওয়া সংস্থাসমূহের তথ্যের বরাত দিয়ে এতে আরও বলা হয়, যশোর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় একটি গভীর স্থল নিম্নচাপ অবস্থান করছে এবং আগামী দুই দিন উপকূলীয় ও দেশের মধ্যাঞ্চলে অতি ভারি বৃষ্টিপাতের (২৪ ঘণ্টায় ৮৯ মিলিমিটার বা তার বেশি) পূর্বাভাস রয়েছে। এর ফলে এই সময় ঢাকা, বরিশাল ও খুলনা বিভাগের নদ-নদীর পানি সমতল বাড়তে পারে।
দেশের উত্তরাঞ্চল, উত্তর-পূর্বাঞ্চল ও দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে মৌসুমি ভারি বৃষ্টিপাতজনিত কারণে সেপ্টেম্বরে দেশের কতিপয় স্থানে স্বল্প মেয়াদি বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে বলে এর আগে মাসের শুরুতে আভাস দিয়েছিল আবহাওয়া অধিদপ্তর।
শনিবার বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের বুলেটিনে আরও জানানো হয়, ব্রহ্মপুত্র নদের পানি সমতল স্থিতিশীল আছে, যমুনা নদীর পানি সমতল কমছে। আগামী পাঁচ দিন পর্যন্ত ব্রহ্মপুত্র-যমুনা নদ-নদীর পানি সমতল ধীর গতিতে কমতে পারে এবং বিপদসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হতে পারে।
গঙ্গা নদীর পানি সমতল স্থিতিশীল আছে এবং পদ্মা নদীর পানি সমতল কমছে জানিয়ে বুলেটিনে বলা হয়, আগামী তিন দিন পর্যন্ত গঙ্গা-পদ্মা নদীর পানি সমতল স্থিতিশীল থাকতে পারে এবং পরবর্তী দুই দিন পানি সমতল কমতে পারে এবং বিপদসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হতে পারে।
রংপুর বিভাগের তিস্তা, ধরলা ও দুধকুমার নদীর পানি সমতলও স্থিতিশীল রয়েছে বলে জানিয়েছে বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র। আগামী তিন দিন পর্যন্ত এসব নদীর পানি সমতল ধীর গতিতে কমতে পারে এবং বিপদসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হতে পারে বলে জানানো হয়েছে।
সিলেট বিভাগের সুরমা ও কুশিয়ারা, মনু, সারিগোয়াইন, ধলাই নদীর পানি সমতল কমছে এবং খোয়াই নদীর পানি সমতল স্থিতিশীল আছে জানিয়ে বুলেটিনে বলা হয়েছে, আগামী তিন দিন এসব নদীর পানি সমতল আরও কমতে পারে এবং বিপদসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হতে পারে।