দেশ থেকে পাচার করা লক্ষ কোটি টাকা অর্থ দিয়ে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সন্তানরা বিদেশে বিলাসী জীবন যাপন করেন বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।
তিনি বলেন, “শেখ হাসিনার পরিবারের সদস্যরা বিদেশ থাকেন। তারা সেখানে কী করেন? কোথায় চাকরি করেন? তাদের টাকার উৎস কী? এসব কাউকে জানানো হয়নি।
“দেশের টাকা লুট করে তারা বিলাসিতা করছেন। হাজার হাজার কোটি টাকা দিয়ে বিজনেস করছেন। কোথায় পেয়েছেন সে টাকা?”
সোমবার দুপুরে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে জাতীয়তাবাদী প্রচার দল আয়োজিত ত্রাণ বিরতণ কর্মসূচিতে সাবেক প্রধানমন্ত্রীর পরিবারের সদস্যদের জীবনযাপন প্রসঙ্গে এসব কথা বলেন তিনি।
আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা ও প্রয়াত পরমাণু বিজ্ঞানী ওয়াজেদ মিয়ার দুই সন্তান। এই দম্পতির বড় সন্তান সায়মা ওয়াজেদ পুতুল বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার আঞ্চলিক পরিচালক হিসেবে কর্মরত। এর প্রধান কার্যালয় ভারতের দিল্লিতে। কাজের সূত্রে পুতুলও বেশিরভাগ সময় দিল্লিতেই থাকেন।
ছোট ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় বাস করেন যুক্তরাষ্ট্রের ভার্জিনিয়ায়। দেশটির ইউনিভার্সিটি অব টেক্সাস অ্যাট আর্লিংটন থেকে কম্পিউটার বিজ্ঞানে স্নাতক শেষ করে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে লোকপ্রশাসনে স্নাতকোত্তর করেন জয়।
ব্যবসার পাশাপাশি আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অবৈতনিক তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি উপদেষ্টা হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন তিনি।
আওয়ামী লীগ সরকার মেগা প্রজেক্টের নামে বিদেশে লক্ষ কোটি পাচার করেছে এই অভিযোগ করে রিজভী বলেন, “এটি আমার কথা নয়। সালমান এফ রহমানও জানিয়েছেন কীভাবে শেখ হাসিনা লক্ষ কোটি পাচার করেছেন।
“নিজেদের পার্সেন্টেজ নিশ্চিত করতে নির্দিষ্ট ব্যবসায়ীকে সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হয়েছিল। গণমাধ্যমকে জোর করে নিজেদের করে নেওয়া হয়েছিল। সত্যিকারের মালিককে জেলে ঢুকিয়ে আওয়ামী লীগের লোককে বসানো হয়েছিল।”
ক্ষমতায় টিকে থাকতে শেখ হাসিনা হাজার ছাত্র-জনতাকে হত্যার অনুমতি দিয়েছিলেন বলেও দাবি রিজভীর। তিনি বলেন, “আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে হাসিনা বলেছিলেন তোমরা তোমাদের কাজ চালিয়ে যাও, গুলি করো। আমি তোমাদের প্রোটেকশন দেব। তাই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীও নির্দ্বিধায় হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে। গণহত্যা চালিয়েছে।”
এসময় ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সময় নিহত আবু সাঈদ, মুগ্ধসহ অন্যদের কথা স্মরণ করেন। এত মানুষকে হত্যার পরও শেখ হাসিনাকে সমর্থন দেওয়ায় ভারতের সমালোচনা করেন।
ভারতের উদ্দেশে বিএনপির এই নেতা বলেন, “আপনারা তো গণতান্ত্রিক দেশ। যে শেখ হাসিনা দেশের শিশু-কিশোরদের হত্যা করেছে, তারপরও সেই হাসিনাকে আপনারা সমর্থন দিয়ে গেলেন! যে হাসিনা দেশ থেকে লক্ষ কোটি টাকা বিদেশে পাচার করেছে তারপরও তাকে আপনারা সমর্থন দিয়ে গেলেন?
“দেশের বিচার বিভাগসহ রাষ্ট্রের সকল স্তম্ভ ধ্বংস করেছে, জনগণের বাকস্বাধীনতা কেড়ে নিয়েছে। দেশে একদলীয় শাসন ব্যবস্থা কায়েম করেছে, এমন একটি ব্যক্তিকে আপনারা আশ্রয় দিলেন? আপনারা গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হয়েও বাংলাদেশের জনগণের জন্য আপনাদের একটুও মায়া হলো না? আপনাদের মানবতার অধিকার জাগ্রত হলো না।”
শেখ হাসিনাকে ব্যবহার করে ভারত ফায়দা লুটত, এমন অভিযোগও করেন রুহুল কবির রিজভী।
শত অত্যাচারের পরেও ভয়ের কাছে আত্মসমর্পণ করেননি দাবি করে রিজভী বলেন, “শেখ হাসিনা আমাদেরকে কারাগারে প্রেরণ করেছে। আমরা কারাগার থেকে বের হয়ে আবার এই অত্যাচারের বিরুদ্ধে আমাদের কন্ঠকে মুক্ত করেছি। আন্দোলন থেকে আমরা পিছপা হইনি।”
প্রচার দলের সাধারণ সম্পাদক আকবর হোসেনের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন সংগঠনের সভাপতি মাহফুজ কবির মুক্তা, বিএনপির স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক সরাফত আলী সফু, যুবদলের সাংগঠনিক সম্পাদক কামরুজ্জামান জুয়েল, ডিইউজের সহ-সভাপতি রাশেদুল হক, প্রচার দলের যুগ্ন সাধারণ সম্পাদক ওয়াকিদুজ্জমান ডাবলু, সাহিত্য ও প্রকাশনা সম্পাদক রুহুল আমিনসহ অন্যরা।