ঢাকায় পুলিশের তালিকায় শীর্ষসন্ত্রাসী হিসাবে এক সময় নাম ছিল মিলনের। তার বাবা এক সময় হাতিরপুলে মুরগির ব্যবসা করতেন বলে তাকে ডাক হত ‘মুরগি মিলন’ নামে। ২০০০ সালে পুরান ঢাকার আদালতপাড়ায় তাকে গুলি করে হত্যা করে প্রতিপক্ষ। বলা হয়, সেই হত্যাকাণ্ডে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন আরেক শীর্ষসন্ত্রাসী ‘টোকাই সাগর’।
‘মুরগি মিলন’ জীবদ্দশায় বহু মানুষের কাছে ছিল আতঙ্কের নাম। দুই যুগ বাদে সেই নাম যখন বিস্মৃত, তখন মোরগের ডাক উপদ্রব হয়ে উঠল সাবেক অতিরিক্ত সচিব মাহবুব কবীর মিলনের কাছে।
চাকরিকালে বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের সদস্য হিসাবে মিলন বাংলাদেশের মানুষের কাছে পরিচিত হয়ে ওঠেন ভেজালবিরোধী অভিযানে তার তৎপরতার জন্য। রেলপথ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিবের দায়িত্ব পালনের সময় রেলের অনিয়ম-দুর্নীতি ঠেকাতে তার অবস্থানও ছিল আলোচিত।
অবসর নিয়ে তিনি থাকেন ঢাকার মোহাম্মদপুরে একটি আবাসিক এলাকায়। সেখানে মোরগের উৎপাত নিয়ে কথা বলে আবার আলোচনায়। তিনি প্রতিবেশীদের মোরগ পালন বন্ধ করে দিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
বিষয়টি নিয়ে মিলন ফেইসবুকে পোস্ট দিয়েছেন। তাতে তিনি এভাবে শব্দ দূষণের শিকার হলে থানায় যাওয়ার হুমকি দিয়ে মোরগ পালন বন্ধের কথাও জানিয়েছেন।
কেন এই পদক্ষেপ- মিলন লিখেছেন, ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় পাশের কয়েকটি বাসায় মোরগ পালনের জন্য তার ঘুমের ব্যাঘাত হচ্ছিল।
“এই শব্দ দূষণে ফজর নামাজের পর আর ঘুমানো যায় না। সাথের ৩/৪ টি বিল্ডিং এ নিশুতি রাতে একসাথে কয়েকটি মোরগ ডাকলে পরিবেশে শব্দ দুষণের কী ভয়াবহ রূপ হতে পারে, তা সহজেই অনুমেয়।”
মুরগি ডাকে না বলে তা নিয়ে আপত্তি নেই মিলনের। তবে আপত্তি মোরগ নিয়ে। তাই প্রতিবেশীদের মোরগ পালন বন্ধ রাখতে লোক পাঠান তিনি।
“সব বাসায় লোক পাঠিয়ে অনুরোধ জানিয়েছিলাম মোরগ না পালার জন্য। এক বাসায় আপত্তি জানালে, বলেছি তাহলে থানায় জিডি করা ছাড়া আমার কোনও উপায় থাকবে না।”
এই হুমকির পর নিজের বিরক্তির অবসান ঘটেছে মিলনের। লিখেছেন, “এরপর সব বাসায় মোরগ সরিয়ে ফেলেছে। এখন কোনও সমস্যা নেই … শব্দ দূষণ রোধে এভাবেই প্রতিবাদ করা উচিত সবার।”
সোশাল মিডিয়ায় বেশ সক্রিয় মিলনের এই পোস্ট নিয়েও নানা আলোচনা চলছে। নিজের ফেইসবুকে মন্তব্য সীমিত করে রেখেছেন মিলন, তবে পক্ষে-বিপক্ষে নানা পোস্ট আসছে।
রাজউকের প্লট বরাদ্দ নিয়ে অভিনেতা আরেফিন শুভকে নিয়ে এক ব্যাঙ্গাত্মক পোস্ট কিছুদিন আগে দিয়েছিলেন মাহবুব কবির। তার সেই পোস্ট নিয়ে তাকে ধরেছিলেন সোশাল মিডিয়ায় আরেক আরেক পরিচিত মুখ অমি রহমান পিয়াল। তিনি দেখিয়েছিলেন, রাজউকের বরাদ্দ করা একটি প্লটের মালিকানায় মিলনও রয়েছেন।
মিলনের মোরগের ডাক নিয়েও অমি রহমান পিয়াল আলোচনা তুলেছেন। নিজের ওয়ালে তিনি লিখেছেন, “আদ্যিকালে মানুষের ঘুম ভাঙত মোরগের ডাকে … মোরগের ডাকে নাকি ঘুমাইতে পারে না।”
এদিকে মিলনের পোস্টে মন্তব্যের ঘরে এমডি জাফর আলম নামে একজন ‘বন্ধু’ সম্বোধন করে সুদীর্ঘকাল ধরে বাংলার ঘরে ঘরে মোরগ-মুরগি পালনের বিষয়টি তুলে ধরেছেন।
তিনি লিখেছেন, “আট হাজার বছর ধরে মানুষের পাশাপাশি থেকে মোরগগুলো ডেকেই যাচ্ছে। তাদের বিরুদ্ধে শব্দ দূষণের অভিযোগ ইতিপূর্বে উঠেছে কি না সন্দেহ। বিশ্বের অনেক নগরীতে মোরগের ডাক শুনতে পাওয়া যায়।
“ভালোই লাগে মোরগের ডাক ভোর বেলায়। আমাদের দেশে নগর এলাকায় কেউ কেউ মোরগ-মুরগি পালন করেন। সংখ্যায় দুই-চারটি মোরগ মুরগি পালন কিন্তু অপরাধের পর্যায়ে পড়ে না।”
“৮ হাজার বছরের মানুষের পাশাপাশি থাকা মোরগের এই মধুর ডাকে অভ্যস্ত হয়ে পড়ো বন্ধু,” লিখেছেন তিনি।
বিষয়টি নিয়ে সকাল সন্ধ্যা যোগাযোগ করলে মাহবুব কবির মিলন বলেন, “যা বলার তা তো ফেইসবুক পোস্টেই বলেছি। এ নিয়ে সবাই যা শুরু করেছে….”
নিজের অবস্থান ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, “এটা তো গ্রাম না শহর, এক বাড়ির সঙ্গে অন্য বাড়ি লাগোয়া। সেখানে চারটা-পাঁচটা বাড়িতে প্রতিযোগিতা করে মোরগ পালা শুরু হয়েছে। সারাদিন, সারারাত মোরগের চিৎকারে চলতে থাকে।
“এটা তো একটা আবাসিক এলাকা। এ বিষয়ে আমি এলাকার অ্যাসোসিয়েশেনের মাধ্যমে তাদের জানিয়ে মোরগ পালা বন্ধ করার বিষয়ে কথা বলেছি, তাই নিয়ে এত বাড়াবাড়ি।”
এদিকে মোরগের ডাকের কারণে শব্দ দুষণের ক্ষেত্রে কোনও আইনি প্রতিকার পাওয়ার সুযোগ কি আছে- সকাল সন্ধ্যা জানতে চেয়েছিল পরিবেশ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক (মনিটরিং অ্যান্ড এনফোর্সমেন্ট) সৈয়দ আহম্মদ কবীরের কাছে।
তিনি বলেন, “শব্দ দূষণ নিয়ন্ত্রণ বিধিমালায় কোনও যন্ত্র বা ডিভাইস দ্বারা উৎপাদিত শব্দের লক্ষ্যমাত্রা অতিক্রম করলে সে বিষয়ে আইনি পদক্ষেপ নেওয়ার কথা বলা আছে। মোরগের ডাকের মাধ্যমে শব্দ দূষণের বিষয়ে কিছু বলা নেই।”