Beta
শনিবার, ২১ সেপ্টেম্বর, ২০২৪
Beta
শনিবার, ২১ সেপ্টেম্বর, ২০২৪

কিরণের হাতেই নারী ফুটবলের সর্বনাশ

বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের নারী কমিটির চেয়ারম্যান মাহফুজা আক্তার কিরণ। ছবি: সংগৃহীত।
বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের নারী কমিটির চেয়ারম্যান মাহফুজা আক্তার কিরণ। ছবি: সংগৃহীত।
Picture of বদিউজ্জামান মিলন

বদিউজ্জামান মিলন

সাফ ফুটবলে মহা আলোড়নের পর মেয়েদের ফুটবল ফুলে-ফলে প্রস্ফুটিত হওয়ার কথা ছিল। এই কথা কেউ রাখেনি। নারী ফুটবল যেখানে ছিল সেখানেই আছে। এখন সেই মেয়ে ফুটবলকে নিয়েই ভোটের খেলায় মেতেছে বাফুফে। ফেডারেশনের বড় কর্তাদের নির্বাচনী গুটিতে পরিণত হয়েছে মহিলা ফুটবল।

‍মহিলা ফুটবল ঘিরে ভোট বাণিজ্য

যে লিগের কোনও অবকাঠামোই দাঁড়ায়নি সেই লিগের দলগুলোকে ভোটার বানাতে মরিয়া ছিলেন বাফুফে সভাপতি কাজী সালাউদ্দিন- নারী কমিটির চেয়ারম্যান মাহফুজা আক্তার কিরণ। তাদের উদ্দেশ্য আসলে খেলা নয়, আগামী অক্টোবরে বাফুফে নির্বাচনে পাস করার উপায় বের করা। এই জুটিতেই যেহেতু মহিলা ফুটবল চলে, তাই তারা মেয়েদের লিগের সব দলগুলোকে ভোটার বানাতে উদ্যত হয়েছিলেন। এই প্রস্তাব উঠলে নির্বাহী কমিটির সভায় শেষমেষ লিগের শীর্ষ চার দলকে বাফুফে নির্বাচনে ভোটার করার সিদ্ধান্ত হয়। ২৯ জুন সাধারণ সভা ডেকে সেটা তড়িঘড়ি করে অনুমোদন করিয়ে নিয়েছেন তারা। অথচ আগে বাফুফে সভাপতি কাজী সালাউদ্দিনই বলেছিলেন, “ফিফা চিঠি পাঠিয়েছে বাফুফে নির্বাচনে কাউন্সিলর সংখ্যা কমাতে।”

বাফুফে সভাপতি কাজী সালাউদ্দিন ও মাহফুজা আক্তার কিরণ। ছবি: সংগৃহীত।

মেয়েরা অরক্ষিত, নিরাপদে কর্তারা

মেয়েদের নিয়ে সর্বশেষ যেটি ঘটেছে সেটা বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের কর্মকর্তাদের চরম উদাসীনতা ও স্বার্থপরতামূলক আচরণ। শেখ হাসিনার পদত্যাগের পর চলমান অস্থিরতার মধ্যে চরম নিরাপত্তাহীনতায় বাফুফে ভবনের চতুর্থতলায় অবস্থানরত নারী ফুটবলাররা। সোমবার বাফুফের প্রশাসনিক কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বাফুফে ভবন বন্ধ রেখে নিজেরা ছিলেন নিরাপদে। কিন্তু অরক্ষিত ছিল বাফুফে ভবনের মেয়েরা। ভবনের বাইরের ফটক তালা দিয়ে বন্ধ থাকলেও কোনো নিরাপত্তারক্ষীর দেখা মেলেনি।

এর মধ্যেই বাফুফে ভবনের সামনে হাজির হয়েছিলেন একঝাঁক ফুটবল সমর্থক। বাংলাদেশি “ফুটবল আলট্রাস” নামে এই সমর্থকগোষ্ঠী সেখানে জড়ো হয়ে মানববন্ধন করে বাফুফের চার মেয়াদের সভাপতি কাজী সালাউদ্দিনের পদত্যাগের দাবি জানান। সে সময় সমর্থকরা ছাড়াও এলাকার অনেক মানুষকে সেখানে জড়ো হতে দেখা যায়।

বাংলাদেশ জাতীয় নারী ফুটবল দলের মেয়েরা অনেকে খেলা ছেড়ে অবসরে যাচ্ছেন। ছবি: সংগৃহীত।

এ ব্যাপারে বাফুফের সাধারণ সম্পাদক ইমরান হোসেন তুষার বলেন, “আসলে ঘটনাগুলো এত দ্রুত ঘটে গেছে আমরা কোনও ব্যবস্থাই নিতে পারিনি। তাছাড়া ওরা (আল্ট্রাস) যে কর্মসূচী করবে সেটা আমাদের জানিয়ে আসেনি।” যারা বাফুফে সভাপতির পদত্যাগের দাবি জানাবে, তাদের সাধারণ সম্পাদককে জানিয়ে আসতে হবে, কি হাস্যকর কথা !

অবশ্য বুধবার বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে মেয়েদের নিরাপত্তার ইস্যুটি জানানো হয়েছে বলে দাবি করেছেন ইমরান।

মেয়েদের নেই সিদ্ধান্ত নেওয়ার স্বাধীনতা

বাফুফে ভবনের চার তলা যেন “উত্তর কোরিয়া”। যেখানে সবাই একেক জন “বন্দী”। চাইলেই কেউ স্বাধীনভাবে মত প্রকাশ করতে পারেন না। তাদের কাজ শুধু অনুশীলন করা এবং মাঠে গিয়ে ফুটবল খেলা। নিজেরা কোনও বিষয়ে নিতে পারেন না নিজেদের সিদ্ধান্ত। অনেক মেয়ের কাছে এসেছে বিজ্ঞাপনের প্রস্তাব, সাড়া মেলেনি সেই বিজ্ঞাপনের মডেল হওয়ার।   

চাইনিজ তাইপের একটি ক্লাবে খেলার প্রস্তাব পেয়েও যেতে পারেননি সাবিনা খাতুন। বাংলাদেশ নারী ফুটবল দলের অধিনায়ক প্রস্তাবটি পান গত মার্চে। বাংলাদেশি অঙ্কে প্রায় ১২ লাখ টাকার চুক্তিতে ক্লাবটি নিতে চেয়েছিলেন সাবিনাকে। সঙ্গে যাওয়া-আসার বিমান টিকিট, আবাসন সুবিধাসহ আনুষঙ্গিক অন্য সব খরচই ক্লাব বহন করতে চেয়েছিল। কিন্তু সাবিনা তখন খেলতে যেতে পারেননি চাইনিজ তাইপেতে।

সাফ চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর ছাদখোলা বাসে দেওয়া হয় সংবর্ধনা। ছবি: সংগৃহীত।

এর আগে ডেনমার্কের একটি ক্লাব থেকেও সাবিনাসহ চার ফুটবলারকে সে দেশে খেলার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। ভুটানের রয়েল থিম্পু কলেজ ক্লাব থেকে প্রথম দফায় প্রস্তাব দেওয়ার পর সেটি নাকচ করে দেয় বাফুফে। এরপর শেষ পর্যন্ত ১ আগস্ট সাবিনাসহ ৪ ফুটবলার ভুটানে খেলার অনুমতি পান।    

২০২২ সালের সেপ্টেম্বরে সাফ জিতে দক্ষিণ এশিয়ায় মেয়েদের শ্রেষ্ঠত্ব দেখানোর পর থেকেই বাংলাদেশের নারী ফুটবলকে নিয়ে প্রচুর আগ্রহ শুরু হয় এশিয়া, ইউরোপের ক্লাবগুলোয়। কিন্তু কিরণের অনুমতি মেলে না। মেয়েরা বাইরে খেললে যে বাংলাদেশের নারী ফুটবল আরো সুরভিত হতো, বাফুফের সুনাম ছড়াতো সেটা তার বোধ-বুদ্ধিতেই কুলোয় না। তিনি এতটাই হীনমন্য যে কাউকে আন্তর্জাতিক তারকা হওয়ারও সুযোগ দেবেন না।   

সাফজয়ী কোচ ছোটনকে সরতে হয়েছে

বাংলাদেশের নারী ফুটবলে যতো সাফল্য এর সবই এসেছে জাতীয় দলের সাবেক কোচ গোলাম রব্বানী ছোটনের হাত ধরে। অথচ গত বছর জুন মাসে এক রকম হতাশ হয়েই বাফুফের চাকরি ছাড়েন ছোটন।

জাতীয় দলের বেশ কয়েকজন ফুটবলার তখন ভারতের নারী লিগে খেলার সুযোগ পেয়েছিলেন। কিন্তু তাদেরকে সোজা না করে দেন কিরণ। ওই সময় দেশে আয়োজন করতে চেয়েছিলেন ফ্র্যাঞ্চাইজি নারী ফুটবল লিগ। বাফুফের সাংগঠনিক ব্যর্থতায় সেটাও মুখ থুবড়ে পড়ে। এসব হতাশায় সিরাত জাহান স্বপ্না, আঁখি খাতুনেরা অবসর নিয়ে ফেলেন। অন্য ফুটবলারদের মধ্যেও শুরু হয় হতাশা।

সাফ চ্যাম্পিয়ন বাংলাদেশ নারী ফুটবল দল। ছবি: সংগৃহীত।

নিজের হাতে গড়ে তোলা মেয়েদের হতাশা ওই সময় সহ্য করতে পারেননি ছোটন। এর সঙ্গে মেয়েদের ফুটবল এগিয়ে নিতে দীর্ঘ ১৪ বছর যে শ্রম-ঘাম দিয়েছেন, তার মূল্যায়নও হয়নি। সবকিছু মিলিয়ে ক্লান্তি-হতাশা পেয়ে বসেছিল তাকে। তাই তো বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের চাকরি ছাড়ার সিদ্ধান্ত নেন ছোটন।

বিদেশি কোচ রাখার নাম করে তখন পল স্মলির কাছ থেকে পার্সেন্টেজ নিয়েছেন কিরণ ও বাফুফে সভাপতি কাজী সালাউদ্দিন। গুঞ্জন আছে ছোটনকে বিদায় করার পেছনে এটাও ছিল বাফুফের অন্যতম কারণ।

অলিম্পিক বাছাইয়ে না পাঠিয়ে সাবিনাদের ‘শাস্তি’

গত বছর মার্চে মিয়ানমারে অলিম্পিক বাছাইয়ে যাওয়ার কথা ছিল বাংলাদেশ নারী দলের। কিন্তু ‘টাকা নেই’- এই অজুহাতে তাদের অলিম্পিক বাছাইয়ে খেলতে পাঠাননি মাহফুজা আক্তার কিরণ ও বাফুফে সভাপতি কাজী সালাউদ্দিন। কিন্তু এর পেছনের গল্পটা ছিল অন্য।

সাফ জেতার পর বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ঘোষিত অর্থ না পাওয়ায় সাবিনারা নীরব প্রতিবাদস্বরূপ দুদিন জাতীয় দলের ক্যাম্পে যাননি। ওই ঘটনার শাস্তি হিসাবে মিয়ানমারে পাঠানো হয়নি সাবিনাদের। ওই সময় নাকি মেয়েদের বাবা-মা তুলে গালিও দিয়েছিলেন কিরণ- এমনও গুঞ্জন রয়েছে।

ওমেন্স চ্যাম্পিয়নস লিগে পাঠায়নি চ্যাম্পিয়ন দলকে

যে দলের মাথায় দক্ষিণ এশিয় মহিলা ফুটবলের শ্রেষ্ঠত্বের মুকুট সেই বাংলাদেশের কোনও ক্লাব নেই এএফসি ওমেন্স চ্যাম্পিয়নস লিগে! আছে ভারত, নেপাল এমনকি ভুটানের চ্যাম্পিয়ন ক্লাবও। নেই শুধু দুর্ভাগা বাংলাদেশের ক্লাব।

২০২৩ সালের আগস্টে এএফসি সভায় প্রথমবারের মতো সিদ্ধান্ত হয় এএফসি উইমেন্স চ্যাম্পিয়নস লিগ আয়োজনের। এশিয়ার নারী ফুটবলকে আরও চাঙ্গা ও প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক করার জন্যই এই উদ্যোগ। এজন্য বড় অঙ্কের অর্থ বিনিয়োগের চিন্তা এএফসির। নারী ফুটবলকে উৎসাহিত করতেই তারা একেকটি দলকে ১ কোটি ১৭ লাখ টাকা (১ লাখ ইউএস ডলার) দিচ্ছে শুধুমাত্র টুর্নামেন্টে অংশগ্রহণের জন্য। পুরো বিষয়গুলো জেনেও বাংলাদেশের কোনও ক্লাবের নাম এএফসিতে পাঠাননি কিরণ। পাঠাতে হলে হ্যাটট্রিক চ্যাম্পিয়ন বসুন্ধরা কিংসের নাম পাঠাতে হতো। কিন্তু এই ক্লাবের ওপর নানা কারণে ক্ষুব্ধ। বিশেষ করে ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগ খেলতে কিংস সম্মত না হওয়ায় তিনি পরোক্ষ প্রতিশোধ নিয়েছেন ‘ওমেন্স ফুটবল লিগে’ বাংলাদেশ লিগ চ্যাম্পিয়নের নাম না পাঠিয়ে।

নারী ফুটবল লিগ শুরুর আগে সাবিনা খাতুনেরা। ছবি : সকাল সন্ধ্যা।

জাতীয় দলের সাবেক কোচ গোলাম রব্বানী ছোটন হতাশার সুরে বলছিলেন, “আমরা সাফে চ্যাম্পিয়ন, নারী লিগ করছি নিয়মিতই। তারপরও দুর্ভাগ্য যে আমাদের মেয়েরা বড় আন্তর্জাতিক মঞ্চে খেলতে পারছে না। ওখানে যারা খেলতে যেত তারা তো এ দেশের চ্যাম্পিয়ন দল হিসেবেই যেত। দেশের প্রতিনিধিত্ব করতো। কিন্তু ওরা সেই সুযোগ পেল না।” 

ফিফার অনুদানের নয় ছয়

নারী ফুটবল দলের জন্য ফিফা থেকে আসা অনুদান নয় ছয়েরও অভিযোগ আছে কিরণের বিরুদ্ধে। তার ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান মডিউলাস এবং বিভিন্ন কোম্পানির ভুয়া প্যাডে বিল ভাউচার বানিয়ে সেটা ফিফায় জমা দেওয়ার গুঞ্জন রয়েছে। যদিও এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে একাধিকবার কিরণকে ফোন করলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।

অথচ এরকম জালিয়াতি ও দুর্নীতির কারণে ফিফা দুই দফায় বাফুফে সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবু নাঈম সোহাগসহ বেশ কয়েকজন নির্বাহী কর্মকর্তাকে নিষিদ্ধ করে।     

সাফজয়ী মেয়েদের খেলতে না পারার আক্ষেপ

সাফ চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর এশিয়ার শক্ত প্রতিপক্ষের সঙ্গে সাবিনাদের অনেক ম্যাচ খেলানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন কিরণ। কিন্তু সেটা শুধু প্রতিশ্রুতির মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল। ২০২২ সালের সেপ্টেম্বরে সাফ চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর দীর্ঘদিন মাঠে নামতে পারেননি সানজিদা আক্তার, কৃষ্ণা রানী সরকাররা।

প্রায় এক বছর পর ২০২৩ সালের জুলাইয়ে নেপালের সঙ্গে দুটি ফিফা প্রীতি ম্যাচ খেলে বাংলাদেশ। এরপর গত বছর সেপ্টেম্বরে এশিয়ান গেমসে জাপান, ভিয়েতনাম ও নেপালের সঙ্গে যে ম্যাচগুলো খেলেছে তবে এতে বাফুফের কোনও কৃতিত্ব নেই। এশিয়ান গেমসে না গেলে হয়তো এই ম্যাচগুলোও খেলার সুযোগ পেতেন না মেয়েরা। এরপর একাধিক বার বিভিন্ন দেশের সঙ্গে প্রীতি ম্যাচ খেলানোর ফাঁকা বুলি আওড়েছেন কিরণ।

বাংলাদেশ জাতীয় নারী দল হেরেছে চাইনিজ তাইপের কাছে। ছবি: বাফুফে।

কিন্তু কোনও দলকেই রাজি করাতে পারেননি। শুধু গত বছর ডিসেম্বরে সিঙ্গাপুরের সঙ্গে দুটি প্রীতি ম্যাচ খেলার সুযোগ পায়। ৫ মাস পর গত ৩১ মে ও ৩ জুন চাইনিজ তাইপের সঙ্গে খেলে দুটি প্রীতি ম্যাচ। সর্বশেষ ভুটানের সঙ্গে দুটি ম্যাচ খেলেছে ২৪ ও ২৭ জুলাই। সব মিলিয়ে অক্টোবরে আরেকটি সাফের আগে বর্তমান চ্যাম্পিয়নরা খেলতে পেরেছে মাত্র ৯টি ম্যাচ!   

মেয়েদের অনেকেই ফুটবল ছাড়ছেন

এরই মধ্যে ফুটবল খেলা ছেড়ে দিয়েছেন অনেক মেয়ে। যাদের পায়ে খেলাটি গৌরবের ছোঁয়া পেয়েছে সেই সিরাত জাহান স্বপ্না, আঁখি খাতুন, আনুচিং মগিনি, সাজেদা খাতুন, উন্নতি খাতুনের মতো ফুটবলাররা খেলাটা ছেড়ে গেছেন। ফুটবলকে সঙ্গী করে তারা জীবন সাজানোর কথা ভাবলেও বাফুফে আসলে সেই পথে হাটছিল না। তারা খেলা ছাড়ার সময় নানা কারণ দেখিয়েছিলেন। 

স্বপ্না ভারতে লিগ খেলার প্রস্তাব পেয়েও যেতে পারেননি। পাশাপাশি দেশে মেয়েদের ফুটবল খেলা অনেক কমে যাচ্ছিল, একটা খেলার পর দীর্ঘদিন অপেক্ষা করতে হচ্ছিল। ঘরোয়া লিগ নিয়েও ছিল অনেক অনিশ্চয়তা। নারী ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগের ঘোষণা দেওয়ার পরও হয়নি। এর সঙ্গে আর্থিক বিষয়গুলো মিলিয়ে মেয়েরা ফুটবল ছাড়ছিল।

লিগে আর্থিক নিশ্চয়তা বাড়াতে পারেননি কিরণ

ফুটবলকে ঘিরে মেয়েদের জীবন-মান উন্নয়নের মডেল দাঁড় করাতে পারেনি কিরণ। ছেলেদের ফুটবলের সঙ্গে তুলনা করলে অনিশ্চয়তায় ঘেরা মেয়েদের জীবন। অথচ মেয়েরা সাফল্য এনে বিনিময়ে কিছু চাইলেই সেটা দিতে পারেনি বাফুফে। সর্বশেষ লিগে হ্যাটট্রিক চ্যাম্পিয়ন বসুন্ধরা কিংস অংশ নেয়নি। যে কারণে মেয়েদের লিগের অবস্থা হয়েছে আরও করুণ হয়েছে। কিরণ নিজের উদ্যোগে ভিন্ন ভিন্ন নামে দল নামিয়ে দিয়েছিল মাঠে। তারা ভিন্ন নামে খেলেছে, থেকেছে বাফুফে ভবনে। এমন লিগ স্বাভাবিকভাবেই প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হয়নি। এবং এই লিগের কাঠামোই হয়েছে প্রশ্নবিদ্ধ।

বাংলাদেশ নারী ফুটবল দলের উচ্ছ্বাস। ছবি: সংগৃহীত।

স্বেচ্ছাচারী সংগঠক কিরণে জিম্মি নারী ফুটবল

কিরণই মেয়েদের ফুটবলের সর্বেসর্বা। আর রহস্যময় কারণে তাকে প্রশ্রয় দিয়ে সবসময় মাথায় তুলে রাখেন কাজী সালাউদ্দিন। দুইয়ে মিলেই চালান মেয়েদের ফুটবল। এজন্য একটি আলাদা উপ-কমিটি থাকলেও তাদের কথায় কিছু যায় আসে না। কোনও গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তের জন্য ওই কমিটির সভাও হয় না। মহিলা ফুটবল যেন বাফুফের কিছু নয়, কিরণেরই সম্পত্তি। সেটা আগলে রেখে আর মেয়েদেরকে বাফুফের বন্দীশালায় রেখে ফুটবল শিক্ষার নতুন পাঠ খুলেছেন তিনি। এভাবে করে প্রাথমিক সাফল্য পেলেও বেশিদূর যাওয়া যায় না।  

শেষ কথা

সাফল্যের দিক দিয়ে ছেলেদের তুলনায় এগিয়ে বাংলাদেশের মেয়েরা। সাফ জেতার পর তাদের যে আরও সামনে এগোনোর কথা ছিল, সেটা হচ্ছে না। কারণ ওই কিরণের হাতেই বন্দী হয়ে আছে বাংলাদেশের নারী ফুটবল। তার স্বেচ্ছাচারিতায় একের পর এক বিতর্কিত হচ্ছে মেয়েদের ফুটবল।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

ad

সর্বাধিক পঠিত