টেস্ট অভিষেকটা ছিল দুঃস্বপ্নের। ২০২১ সালে পাকিস্তানের বিপক্ষে মিরপুরে প্রথম ইনিংসে আউট ০ রানে। পরের ইনিংসে করেন ৬।
এমন নড়বড়ে শুরুর পর টিকে থাকা কঠিন। তবে মাহমুদুল হাসান জয়ের ওপর আস্থা ছিল নির্বাচকদের। ২০২০ অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ জয়ে যে গুরুত্বপূর্ণ অবদান ছিল স্টাইলিশ এই ব্যাটারের। সেমিফাইনালে করেছিলেন ম্যাচ জেতানো সেঞ্চুরি।
মাহমুদুল হাসান জয় এরপর সুযোগ পান ২০২২ সালের নিউজিল্যান্ড সফরে। মাউন্ট মঙ্গানুইয়ে ঐতিহাসিক জয়ের টেস্টে খেলেছিলেন ৭৮ রানের গুরুত্বপূর্ণ ইনিংস। চাঁদপুরের যে ছেলেটাকে পাড়ার ক্রিকেটে বড় ভাইরা শুধু ফিল্ডিং করাতেন, তার এমন কীর্তিতে গর্ব করেছে গোটা দেশ।
ডারবানে ঠিক পরের টেস্টে আরেক ইতিহাস। প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে মাহমুদুল হাসান জয় করেন সেঞ্চুরি।
দক্ষিণ আফ্রিকার ৩৬৭ রানের জবাবে বাংলাদেশ থামে ২৯৮-এ। ওপেনিংয়ে নেমে জয় ৪৪২ মিনিট ক্রিজ আঁকড়ে করেন ১৩৭। টেস্টে এটাই তার প্রথম সেঞ্চুরি। আর তিন অঙ্কে পা রাখার দিনটা ছিল ২ এপ্রিল।
২০২২ সালে ডারবানের পর আজ (মঙ্গলবার) আরেকটি ২ এপ্রিলে চট্টগ্রামে হতাশায় ডোবালেন জয়। দুই বছরের ব্যবধানে দেখা মিলল দুই রকম জয়ের। ডারবানের কঠিন পিচে কেশব মহারাজ, সায়মন হারমার, লিজার্ড উইলিয়ামস, দুয়ানে ওলিভারদের সামলেছিলেন অবলীলায়।
সেখানে চট্টগ্রামের ব্যাটিং উদ্যানে টেস্টের টেম্পারমেন্টটাই নেই জয়ের। দ্বিতীয় ইনিংসটা খেললেন ওয়ানডে স্টাইলে! ৩২ বলে ৩ বাউন্ডারিতে তার রান ২৪। প্রবাথ জয়াসুরিয়ার ওভারের দ্বিতীয় বলে ডাউন দ্য ট্র্যাকে এসে মেরেছেন বাউন্ডারি! সেই ওভারে গুড লেংথে পড়া পঞ্চম বলটা করেছিলেন কাট। কিন্তু এতই ধীরগতিতে যে, কিছু বুঝে ওঠার আগে নেই মিডলস্টাম্প।
২০২২ সালের ২ এপ্রিল থেকে ২০২৪ সালের ২ এপ্রিল পর্যন্ত পরিসংখ্যান দেখা যাক। এই সময়ে জয় টেস্ট খেলেছেন ১০টি। সেঞ্চুরি পাননি আর একটিও। ফিফটি আছে তিনটি। গত বছর নভেম্বরে সিলেটে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ৮৬ রানের ইনিংসটি এই সময়ে তার সেরা।
সেই ইনিংসটার পর ফর্ম একেবারে যাচ্ছেতাই। এরপর খেলা ৬ ইনিংসে রান ৮, ১৪, ২, ১২, ০, ২১, ২৪। অথচ টেস্ট সিরিজের আগে ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে হেসেছে তার ব্যাট। আবাহনীর হয়ে তিন ম্যাচে জয়ের স্কোর ৩৪, ৭৩ ও ৫১*। প্রিমিয়ার লিগের ঠিক আগে খুলনা টাইগার্সের হয়ে খেলেছেন বিপিএল।
বিপিএল আর প্রিমিয়ার লিগ ছাড়া টেস্টের প্রস্তুতিতে তিন বা চার দিনের কোন ম্যাচ খেলানো হয়নি জয়সহ পুরো বাংলাদেশ দলকেই। এরই বাজে প্রভাব পড়েছে শট নির্বাচনে। এজন্যই মাউন্ট মঙ্গানুই, ডারবানে দারুণ খেললেও সিলেট, চট্টগ্রামে হাস্যকর সব কাণ্ড করছেন বাংলাদেশি খেলোয়াড়রা। দুই বছরের ব্যবধানে দেখা যাচ্ছে দুই রকম ছবি। এর দায়টা আসলে কার?