রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর বিএনপির শীর্ষ নেতাসহ অন্যরা যখন কারাগার থেকে বেরিয়ে আসছেন, তখন দেশে ফিরে কারাগারে গেলেন আমার দেশ সম্পাদক মাহমুদুর রহমান।
ছয় বছর নির্বাসিত জীবন কাটিয়ে দেশে ফেরার দুদিন পর রবিবার তিনি ঢাকার আদালতে আত্মসমর্পণ করে দণ্ডের বিরুদ্ধে আপিল করার শর্তে জামিন চেয়েছিলেন।
তবে ঢাকার অতিরিক্ত মুখ্য মহানগর হাকিম মাহবুবুল হক সেই আবেদন নাকচ করে তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন বলে মাহমুদুর রহমানের আইনজীবী সৈয়দ জয়নুল আবেদীন মেজবাহ জানিয়েছেন।
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়কে যুক্তরাষ্ট্রে অপহরণ করে হত্যার ষড়যন্ত্রের মামলায় দণ্ডিত মাহমুদুর।
গত ২৭ সেপ্টেম্বর তুরস্ক থেকে দেশে ফিরে তিনি বিমানবন্দরে সাংবাদিকদের বলেছিলেন, “এই আমলে আমার ৫ মাস কারাগারে থাকতে আপত্তি নেই। আমার বয়স হয়েছে, আমি বুড়ো হয়ে গেছি, কিন্তু জেলে থাকার মতো মানসিক এবং শারীরিক শক্তি এখনও আমার আছে।
“কাজেই আইনকে তার রাস্তায় যেতে দিন। আমাকে আমার মতো করে লড়াই করতে দিন। গত ১৬ বছর ধরে ফ্যাসিবাদী সরকারের বিরুদ্ধে আমি আমার মতো করে ব্যক্তিগত পর্যায় থেকে লড়াই করে গেছি।”
দেড় দশকের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আন্দোলনের মুখে পদত্যাগ করে গত ৫ আগস্ট দেশ ছাড়েন। এরপর অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পরপরই মুক্তি পান দুর্নীতির মামলায় দণ্ডিত খালেদা জিয়া। বিভিন্ন মামলায় বন্দি বিএনপির অন্য নেতারাও কারাগার থেকে ছাড়া পান।
প্রকৌশলী মাহমুদুর রহমান ২০০১-০৬ সাল পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার জ্বালানি বিষয়ক উপদেষ্টা ছিলেন। পরে তিনি আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক হয়ে আওয়ামী লীগের বিরোধিতায় সরব হন।
যুদ্ধাপরাধের বিচারে আওয়ামী লীগ সরকার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের কার্যক্রম শুরুর পর সেই বিচারের প্রক্রিয়া নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন মাহমুদুর। আদালত অবমাননার জন্য তখন তাকে শাস্তিও পেতে হয়েছিল।
আরও অনেক মামলার মুখে এক পর্যায়ে দেশ ছাড়েন মাহমুদুর। এরমধ্যেই তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছেলে জয়কে হত্যার ষড়যন্ত্রের অভিযোগে তার বিরুদ্ধে মামলা হয়।
সেই মামলায় গত বছরের ১৭ আগস্ট ঢাকার আদালত মাহমুদুর রহমানসহ পাঁচজনকে সাত বছরের কারাদণ্ড দেয়। দণ্ডিতদের মধ্যে যায়যায়দিনের সাবেক সম্পাদক শফিক রেহমানও ছিলেন। আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর সম্প্রতি তিনিও দেশে ফেরেন।
এই মামলায় দণ্ডিত অন্যরা হলেন- জাতীয়তাবাদী সামাজিক সাংস্কৃতিক সংস্থার (জাসাস) সহ-সভাপতি মোহাম্মদ উল্লাহ মামুন, তার ছেলে রিজভী আহাম্মেদ সিজার এবং যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী ব্যবসায়ী মিজানুর রহমান ভূঁইয়া।
এদের মধ্যে শফিক রেহমান ও মিজানুর রহমান ভূঁইয়ার সাজা এক বছরের জন্য স্থগিত করা হয়েছে।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগ থেকে জারি করা এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, সাজা স্থগিতের বিষয়ে তাদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আইন মন্ত্রণালয়ের মতামতের আলোকে আদালতে আত্মসমর্পণ করে আপিল করার শর্তে তাদের সাজা এক বছরের জন্য স্থগিত করা হলো।
গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) পরিদর্শক ফজলুর রহমান ২০১৫ সালের ৩ আগস্ট পল্টন মডেল থানায় মামলাটি করেন। ২০১৮ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি তাদের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দেওয়া হয়েছিল।
এই মামলা ছাড়াও শতাধিক মামলার আসামি মাহমুদুর রহমানকে ২০১০ সালে এবং ২০১৩ সালে দুই দফায় গ্রেপ্তার করা হয়েছিল।
তখন তার সম্পাদিত আমার দেশ পত্রিকাও বন্ধ করে দেয় আওয়ামী লীগ সরকার।
বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সাবেক সদস্য, সাবেক সংসদ সদস্য মোসাদ্দেক আলী ফালুর মালিকানায় ২০০৪ সালে আমার দেশ প্রকাশ শুরু হয়েছিল।
বিএনপি সরকারের বিদায়ের পর ২০০৭-০৮ সালে জরুরি অবস্থার সময় আমার দেশের মালিকানা নেন মাহমুদুর।