নারায়ণগঞ্জের সাংবাদিক ইলিয়াস হোসেন হত্যা মামলার প্রধান আসামি জেলার কেন্দ্রীয় কারাগারের একটি কক্ষে আত্মহত্যা করেছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
মঙ্গলবার কারাগারের কর্ণফুলী ভবনের ছয় তলার পাঁচ নম্বর কক্ষে এ ঘটনা ঘটে বলে বুধবার জানিয়েছেন কারা প্রধান মোকাম্মেল হোসেন। নিহত আসামির নাম মো. তুষার।
কারা প্রধান জানান, তিন বছর ধরে কারাগারের যমুনা ভবনের দ্বিতীয় তলার তিন নম্বর কক্ষে থাকতেন ২৮ বছর বয়সী তুষার। দিনের অন্যান্য কাজ শেষে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় যথারীতি কয়েদি ও হাজতিদের নিজ নিজ কক্ষে চলে যেতে বলা হয়। এরপর শুরু হয় গণনা।
সে সময় যমুনার একটি ওয়ার্ডে একজন হাজতির সংখ্যা কম পাওয়া গেলে খোঁজ শুরু হয়। মাইকিং করে নিখোঁজ ব্যক্তিকে পাওয়া না যাওয়ায় প্রতিটি ভবনে তল্লাশি চলে।
মোকাম্মেল হোসেন বলেন, “তল্লাশির একপর্যায়ে যমুনার পাশে কর্ণফুলী ভবনের একটি খালি কক্ষের আড়ার সঙ্গে তুষারের ঝুলন্ত দেহ দেখতে পাওয়া যায়। তাকে দ্রুত উদ্ধার করে নারায়ণগঞ্জ সদর জেনারেল হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।”
যে কক্ষে আত্মহত্যার ঘটনা ঘটে, সেখানে তুষার একা ছিলেন জানিয়ে কারা প্রধান বলেন, সাধারণত ওই ভবনের চার তলা পর্যন্ত কয়েদিরা বাস করেন। ছয় তলা প্রায় খালিই থাকে।
কারা প্রধান মোকাম্মেল হোসেন বলেন, “গত কিছুদিন ধরে কারাগারের মসজিদে নিয়মিত নামাজ পড়তেন তুষার। প্রায় সময় হাজতিদের কাছ থেকে দোয়া চাইতেন। তিন দিন আগে তুষার তার মায়ের সঙ্গে কথা বলে দোয়া চেয়েছেন বলেও জানা গেছে।”
কারাগারের নিরাপত্তার বিষয়ে জানতে চাইলে কারা প্রধান বলেন, “প্রতিটি তলায় কারারক্ষী আছেন। কেউ যদি পরিকল্পিতভাবে আত্মহত্যা করেন, সেটি রোধ করা কঠিন। তবে এ বিষয়ে নজরদারি আরও বাড়ানো হবে।”
২০২০ সালের ১১ অক্টোবর সাংবাদিক ইলিয়াস হোসেনকে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় তুষারসহ আটজনকে আসামি করে বন্দর থানায় মামলা করেন ইলিয়াসের স্ত্রী।
পরের দিন ১২ অক্টোবর এলাকাবাসী তুষারকে আটক করে পুলিশের কাছে সোপর্দ করে। তিন দিনের রিমান্ড শেষে একপর্যায়ে আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন তুষার।
উল্লেখ্য, নারায়ণগঞ্জের বন্দর উপজেলায় ২০১৮ সালে অবৈধ গ্যাস সংযোগের সঙ্গে যুক্ত থাকায় তুষারকে নিয়ে স্থানীয় পত্রিকায় প্রতিবেদন লিখেছিলেন সাংবাদিক ইলিয়াস।
আদালত পুলিশের পরিদর্শক আসাদুজ্জামান জানিয়েছে, সাংবাদিক ইলিয়াস হোসেন হত্যার মামলার বিচারকাজ শেষের দিকে। সাক্ষ্য গ্রহণ চলছে। এ মামলার অন্য আসামিরাও গ্রেপ্তারের পর কারাগারে আছেন।
তুষারের মরদেহ ময়নাতদন্ত শেষে বুঝে নিতে বুধবার দুপুর ২টার দিকে নারায়ণগঞ্জ সদর জেনারেল হাসপাতালে যান তার মা ফাতেমা বেগমসহ কয়েকজন।
সোমবার তুষারের সঙ্গে শেষবার কথা হয়েছে বলে জানান ফাতেমা বেগম। তিনি সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, “তুষারের একটা ছেলে আছে। তার স্ত্রী গার্মেন্টসে কাজ করে সংসার চালায়। তুষারের একটু ভুলে সব শেষ হয়ে গেল।”
