মালয়শিয়ার ১৭তম রাজা হলেন দেশটির ধনকুবের বাইকার সুলতান ইব্রাহিম সুলতান ইস্কান্দার। বুধবার দেশটির রাজধানী কুয়ালালামপুরের জাতীয় প্রাসাদে শপথ নেন তিনি।
৬৫ বছর বয়সী নতুন এই রাজা বিলাসবহুল গাড়ি ও মোটরবাইক সংগ্রহের জন্য বেশ পরিচিত। এই ধনকুবেরের রিয়েল এস্টেট ব্যবসা থেকে শুরু করে খনির ব্যবসা রয়েছে। এছাড়া দেশটির দক্ষিণাঞ্চলীয় রাজ্য জোহরের একটি উন্নয়ন প্রকল্পে তার অংশীদারত্ব রয়েছে। এই উন্নয়ন প্রকল্পে চীন ১০০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করেছে।
দেশটিতে রাজ্য আছে ১৩টি। রাজ্যগুলোতে রাজ পরিবার আছে নয়টি, যার মধ্যে কয়েকটির শিকড় প্রাচীন মালয় রাজ্যে সংযুক্ত।
এই পরিবারগুলোর প্রধানরা পর্যায়ক্রমে পাঁচ বছর পরপর রাজ্য পরিচালনা করেন। একজন রাজা পাঁচ বছর ক্ষমতায় থাকেন। একে বলা হয় ঘূর্ণায়মান রাজতন্ত্র। বহু বছর ধরেই মালয়শিয়ায় রাজতন্ত্রের এই অভিনব ব্যবস্থা চলে আসছে।
ব্রিটিশরা ঔপনিবেশিকতা শুরুর আগে মালয় রাজ্যগুলোর প্রতিটি স্বাধীনভাবে পরিচালিত হতো। ১৯৫৭ সালে ব্রিটেন থেকে স্বাধীন হওয়ার পর জাতিগত মালয় রাজ্যের নয়জন শাসক পর্যায়ক্রমে রাজা হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছে। এই শাসন ব্যবস্থা বিশ্বে কেবল মালয়েশিয়াতেই প্রচলিত।
সুলতান ইস্কান্দারের আগে দেশটির রাজা ছিলেন আল সুলতান আবদুল্লাহ, যিনি ২০১৮ সালে সিংহাসনে বসেন। তিনি নিজ রাজ্য পাহাংয়ের প্রধান হিসেবে ফিরে গেছেন।
পর্যায়ক্রমে সব পরিবার থেকে রাজা নির্বাচন হলেও দেশটিতে রাজতন্ত্রের ভূমিকা অনেকটাই আনুষ্ঠানিকতা মাত্র। সাংবিধানিকভাবে রাজার মেয়াদ ৫ বছর হলেও, তার ক্ষমতা বেশ সীমিত।
প্রধানমন্ত্রী নিয়োগ, পার্লামেন্টের মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়ার পর তা ভেঙে দেওয়া, প্রধানমন্ত্রী ও মন্ত্রিপরিষদকে শাসন সংক্রান্ত পরামর্শ দেওয়া, সর্বোচ্চ আদালতে দোষী অপরাধীকে ক্ষমা করা—এসব কাজের মধ্যেই রাজার দায়িত্ব সীমাবদ্ধ ।
তবে ২০২০ সালের পর থেকে মালয়েশিয়ায় পার্লামেন্ট ও রাজনীতিতে অস্থিতিশীলতা দেখা গেলে বিভিন্ন ইস্যুতে তৎপর ছিলেন তৎকালীন রাজা আল সুলতান আবদুল্লাহ।
মালয়েশিয়ায় রাজারা মূলত প্রধানমন্ত্রী ও মন্ত্রিসভার পরামর্শ মতোই চলে, তবে ফেডারেল সংবিধান অনুযায়ী রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে রাজার কিছু বিবেচনামূলক ক্ষমতা আছে।
পার্লামেন্টের সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশের নেতা বলে যাকে তিনি বিবেচনা করবেন, তাকেই প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ করতে পারবেন রাজা। আর এই ক্ষমতাবলে সদ্যবিদায়ী রাজা তার পাঁচ বছর মেয়াদকালে ৩ জন প্রধানমন্ত্রী নিয়োগ দিয়েছিলেন।
আর ইব্রাহিম সুলতান ইস্কান্দার এমনই এক সময় সিংহাসনে বসলেন যখন দেশটির রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা মোকাবেলায় রাজকীয় হস্তক্ষেপ দরকার।
মালয়েশিয়ার রাজতন্ত্রকে মূলত রাজনীতির ঊর্ধ্বে বিবেচনা করা হয়, কিন্তু নতুন রাজাকে দেশের রাজনৈতিক ইস্যু নিয়ে প্রায়ই কথা বলতে দেখা যায়।
দ্য গার্ডিয়ান ও আল জাজিরা