সময় ২০০৬ সালের ১৮ মে। এদিন দ্বিতীয় দফায় পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন সিপিএম নেতা বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য।
তার শপথগ্রহণের দিনই টাটা গ্রুপের তৎকালীন চেয়ারম্যান রতন টাটা ঘোষণা দিলেন, কলকাতা থেকে ৪০ কিলোমিটার দূরে পশ্চিমবঙ্গের হুগলি জেলার সিঙ্গুর শহরে তাদের ন্যানো গাড়ির কারখানা বসবে।
ঘোষণার আগেই সিঙ্গুরের ৯৯৭ একর কৃষিজমি কিনে নিয়ে তা ন্যানো গাড়ির কারখানা নির্মাণের জন্য টাটা গ্রুপকে দেয় পশ্চিমবঙ্গের তৎকালীন বামফ্রন্ট সরকার।
এতে তীব্র প্রতিবাদ জানায় স্থানীয় কৃষকরা। তাদের অভিযোগ, তাদের জমি জোর করে অধিগ্রহণ করা হয়েছে।
সেই মাসের শেষ সপ্তাহে আন্দোলন শুরু করে কৃষকরা। তাদের আন্দোলনের প্রতি সংহতি জানিয়ে এবং জোরপূর্বক জমি অধিগ্রহণের প্রতিবাদে টাটার প্রকল্প এলাকার কাছে ধানের বীজ বোনেন তৃণমূল কংগ্রেসের প্রধান মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
২০০৬ সালের শেষে উত্তাল হয়ে ওঠে সিঙ্গুর। মমতা শুরু করেন আমরণ অনশন। ভারতের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট এ পি জে আবদুল কালাম ও প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের অনুরোধে অনশন ভাঙেন তিনি।
আমরণ অনশন থেকে সরে এলেও মমতার নেতৃত্বে আন্দোলন চলতে থাকে। একপর্যায়ে ২০০৮ সালের আগস্টে টাটা গ্রুপ জানায়, ন্যানো গাড়ির কারখানা সিঙ্গুর থেকে সরিয়ে তারা গুজরাটের সানন্দ শহরে নিয়ে যাবে।
সেসময় এক সংবাদ সম্মেলনে রতন টাটা বলেছিলেন, “পশ্চিমবঙ্গ থেকে ন্যানো গাড়ির প্রকল্প আমরা সরিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। পুলিশি পাহারায় কেউ কারখানা চালাতে পারে না। ভাঙা দেয়াল নিয়ে কেউ কারখানা চালাতে পারে না। বোমা মারা হলে সেক্ষেত্রে কারখানা পরিচালনা করা সম্ভব হয় না।”
সিঙ্গুর আন্দোলনের প্রভাব পড়েছিল পশ্চিমবঙ্গের ২০১১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে। সেবার রাজ্যে তিন দশক ধরে ক্ষমতাসীন বামফ্রন্টকে পরাজিত করে মমতার তৃণমূল।
সিঙ্গুর আন্দোলন যে মমতার রাজনৈতিক জীবনে টার্নিং পয়েন্ট ছিল, সে বিষয়ে কোনও সন্দেহ নেই। আন্দোলনের সময় ভারতের প্রভাবশালী শিল্পপতি রতন টাটাকে তিনি চ্যালেঞ্জ জানিয়েছিলেন। মমতার প্রতিপক্ষরা আজও প্রায়ই অভিযোগ করে বলেন, ২০০৮ সালে রতন টাটা পশ্চিমবঙ্গ থেকে হাত গুটাতে বাধ্য হওয়ার জেরে রাজ্যে শিল্প বিকাশের পথ রুদ্ধ হয়ে যায়।
রতন টাটার বিরুদ্ধে একসময় পশ্চিমবঙ্গে ব্যাপক আন্দোলন গড়ে তুললেও তার মৃত্যুতে শোক জানাতে ভোলেননি মমতা। সমবেদনা জানিয়েছেন তার পরিবারের সদস্য ও সহকর্মীদের।
মুম্বাই শহরে বুধবার রাতে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান রতন টাটা।
তার প্রয়াণের খবর শুনে সোশাল মিডিয়ায় পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “টাটা সন্সের ইমেরিটাস চেয়ারম্যানের মৃত্যুতে আমি শোকাহত। টাটা গ্রুপের সাবেক চেয়ারম্যান ভারতীয় শিল্পের প্রথম সারির নেতা ছিলেন।
“জনসেবায় নিয়োজিত এই ব্যক্তির প্রয়াণ ভারতের ব্যবসায়িক জগৎ ও সমাজের জন্য অপূরণীয় ক্ষতি। তার পরিবারের সদস্য ও সহকর্মীদের প্রতি সমবেদনা জানাই।”
তথ্যসূত্র: বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড, ইকোনমিক অ্যান্ড পলিটিক্যাল উইকলি, এনডিটিভি