গরু চুরির একটি মামলায় নিম্ন আদালতে সাজা হওয়া এক ব্যক্তিকে ৩০ বছর পর খালাস দিয়ে দেওয়া হাইকোর্টের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ করা হয়েছে।
শনিবার সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে ১২ পৃষ্ঠার রায় প্রকাশ করা হয়। রায়ের পর্যবেক্ষণে বিচারিক আদালতের রায় বিচারকসুলভ হয়নি বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
মামলার নথি থেকে জানা যায়, ১৯৯৩ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি পাঁচটি গরু চুরির অভিযোগে তোফাজ্জল হোসেন ও সাইফুল ইসলাম নামে দুইজনকে আসামি করে নীলফামারীর ডোমার থানায় মামলা করা হয়।
সাক্ষ্য গ্রহণ ও শুনানি নিয়ে ১৯৯৬ সালের ২৩ জুন নীলফামারীর প্রথম শ্রেণির ম্যাজিস্ট্রেট আদালত জয়পুরহাটের তোফাজ্জল হোসেনকে দুই বছরের সশ্রম কারাদণ্ড ও ২০০ টাকা অর্থদণ্ড, অনাদায়ে আরও এক মাসের কারাদণ্ডাদেশ দেয়।
অপর আসামি সাইফুল ইসলামের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় তাকে অব্যাহতি দেয় আদালত।
এরপর জেলা দায়রা জজ আদালত হয়ে মামালাটি হাইকোর্টে আসে। গরু চুরির এই মামলার শুনানি শেষে গত বছরের ২৩ ফেব্রুয়ারি বিচারপতি মো. আশরাফুল কামালের একক হাইকোর্ট বেঞ্চ রায় দেয়। রায়ে তোফাজ্জলকে অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দিয়ে বেকসুর খালাস দেওয়া হয়।
প্রকাশিত রায় থেকে জানা যায়, হাইকোর্টে এ মামলায় আসামিপক্ষে কোনও আইনজীবী ছিলেন না। তবে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল অ্যাডভোকেট মো. আশেক মোমিন, সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল অ্যাডভোকেট লাকী বেগম ও ফেরদৌসী আক্তার।
মামলার রায় প্রকাশ নিয়ে কথা হয় সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল অ্যাডভোকেট লাকী বেগমের সঙ্গে। তিনি বলেন, “গত বছর মামলাটির রায় দিয়েছেন আদালত। অনেক দিন আগের কথা, অনেক তথ্যই মনে নেই। রায় পড়ে বলতে হবে।”
রায়ের পর্যবেক্ষণে যা আছে
রায়ের পর্যবেক্ষণে বলা হয়েছে, ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের আদেশে মামলার প্রাথমিক তথ্য বিবরণীতে আসামিদের গ্রেপ্তার বিষয়ে কোনও বক্তব্য নেই। ২৮ ফেব্রুয়ারির আদেশে (ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের) দেখা যায়, আসামিদের ২৭ ফেব্রুয়ারি ৫৪ ধারায় (ফৌজদারি কার্যবিধি) গ্রেপ্তারপূর্বক আটক করা হলে এই মামলায় পুনঃগ্রেপ্তার দেখানোর আবেদন করা হয়।
হাইকোর্টের পর্যবেক্ষণে প্রশ্ন তোলা হয়, “২৫ ফেব্রুয়ারি আসামিকে গরুসহ থানায় হাজির করে গ্রেপ্তার দেখানো হলো। সে আসামি ২৭ ফেব্রুয়ারি ডোমার থানায় কীভাবে ৫৪ ধারায় গ্রেপ্তার হয়।”
পর্যবেক্ষণে আরও বলা হয়, “এটি স্পষ্ট যে, প্রকৃতপক্ষে এজাহারটি একটি মিথ্যা এজাহার। আসামিকে ফাঁসানোর জন্য মিথ্যা মামলা দায়ের করা হয়। এই মামলায় এজাহার দাখিল, গ্রহণ এবং তদন্তে ব্যাপক অবহেলা, অনিয়ম ও অন্যায় হয়েছে প্রতীয়মান। অপরদিকে বিজ্ঞ বিচারিক ও আপিল আদালতও গতানুগতিকভাবে রায় প্রদান করেছে। সাক্ষ্য ও নথি পর্যালোচনা ও বিশ্লেষণে উভয় আদালত চরম অবহেলা ও অনিয়ম করেছেন, যা বিচারকসুলভ নয়।”
হাইকোর্ট এই রায়ের অনুলিপি অধস্তন সকল বিচারক, প্রতিটি থানার এজাহার গ্রহণকারী ও তদন্তকারী কর্মকর্তার কাছে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছে।