হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে ১৭ বছর আগে ভক্তকূলকে কাঁদিয়ে মৃত্যুর দেশে পাড়ি জমিয়েছিলেন বাংলাদেশের ব্যবসাসফল চিত্রনায়ক এস এম আসলাম তালুকদার মান্না। পরিবার তখন অভিযোগ করেছিল, চিকিৎসায় অবহেলার কারণেই মৃত্যু হয়েছে তার।
সেই অভিযোগের ভিত্তিতে হয়েছিল বিচার বিভাগীয় তদন্ত। তাতে ইউনাইটেড হাসপাতালের ৬ জন চিকিৎসকের বিরুদ্ধে প্রতিবেদন দাখিল করা হয়।
এরপর আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দিলেও উচ্চ আদালতে মামলাটির কার্যক্রম স্থগিত হয়ে যায়। এরপর ঝুলেই রয়েছে মামলাটি।
বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন সংস্থা-এফডিসির আয়োজন ‘নতুন মুখের সন্ধানে’র মাধ্যমে ১৯৮৪ সালে রুপালি জগতে পা রাখা মান্না ৪৩ বছর বয়সে ২০০৮ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি যখন মারা যান, তখন তিনি ঢাকাই চলচ্চিত্রের শীর্ষ নায়ক।
সেদিন বুকে ব্যথা অনুভব করায় ভোরে তাকে নেওয়া হয়েছিল ঢাকার ইউনাইটেড হাসপাতালে। মান্নার স্ত্রী শেলি কাদের তখনই অভিযোগ তোলেন, চিকিৎসকরা দেরিতে চিকিৎসা শুরু করায় মান্নাকে বাঁচানো যায়নি।
ওই বছরের ১৭ সেপ্টেম্বর মান্নার শ্যালক রেজা কাদের ইউনাইটেড হাসপাতালের ছয় চিকিৎসকের বিরুদ্ধে মামলা করেন। ২০১৯ সালের ২৮ জানুয়ারি এই মামলার বিচার বিভাগীয় তদন্তে অবহেলার প্রমাণ পাওয়ার পর ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালত ছয় চিকিৎসকের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে। তবে ওই চিকিৎসকরা আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিন নেন।
এরপর ২০০৯ সালের ১৮ অক্টোবর ওই ছয় চিকিৎসকের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন হয় ঢাকার বিশেষ দায়রা জজ আদালত। এরপর আসামি পক্ষ অভিযোগ গঠনের বিরুদ্ধে হাই কোর্টে রিট আবেদন করে।
বর্তমানে মামলাটি ঢাকার এক নম্বর বিশেষ জজ মো. আবুল কাশেমের আদালতে বিচারাধীন। তবে উচ্চ আদালত থেকে কার্যক্রমে স্থগিতাদেশ থাকায় সাক্ষ্য গ্রহণ সম্ভবপর হচ্ছে না।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর পাবলিক প্রসিকিউটর ওমর ফারুক ফারুকী সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, “আসামিদের করা উচ্চ আদালতের স্থগিতাদেশ আদেশ প্রত্যাহার না পর্যন্ত আমাদের কিছুই করার নেই।”
সেক্ষেত্রে মামলা সচল করতে করণীয় কী- জানতে চাইলে তিনি বলেন, “যেহেতু মামলাটি সেনসেটিভ। তাই বাদীপক্ষের উচিৎ অ্যাটর্নি জেনারেলের কাছে গিয়ে স্থগিতাদেশ প্রত্যাহারের বিষয়ে কথা বলা।”
সংশ্লিষ্ট আদালতে দায়িত্বরত পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) মো. মাহফুজুর রহমান পাটওয়ারী বলেন, “উচ্চ আদালতের স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার হলে দ্রুত সময়ে এ মামলার বিচার কাজ শেষ করা হবে, ইনশাআল্লাহ।”
এদিকে বাদীপক্ষের আইনজীবী খন্দকার মুহাম্মদ মুশফিকুল হুদা জানিয়েছেন, মামলাকারী এখন মামলাটি চালাতে অনাগ্রহী।
তিনি সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, “মামলাটি নিয়ে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়েছি৷ বাদী (রেজা কাদের) মামলা চালাতে চাচ্ছেন না৷ তবে শেলী মান্না আমাকে মামলা পরিচালনা করতে বলছেন।”
এ বিষয়ে কথা বলতে মান্নার স্ত্রী শেলী কাদেরের মোবাইল ফোনে কয়েকদফা কল করা হলেও তিনি সাড়া দেননি। রেজা কাদেরের কোনও বক্তব্যও পাওয়া যায়নি।
এই মামলায় যে ছয়জন চিকিৎসকের বিরুদ্ধে দায়িত্বে অবহেলার প্রমাণ পাওয়ার কথা বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটি পেয়েছে, তারা হলেন- ডা. মো. এনায়েত হোসেন শেখ, ডা. জহির উদ্দিন মাহমুদ ইলিয়াস, ডা. মোমেনুজ্জামান, ডা. ফাতেমা, ডা. মাইনুল ইসলাম মজুমদার ও ডা. খন্দকার মাহবুব হোসাইন।
মান্নার জন্ম ১৯৬৪ সালের ১৪ এপ্রিল টাঙ্গাইলের কালিহাতী উপজেলার এলেঙ্গায়। তিনি ঢাকা কলেজে স্নাতকে পড়াশোনার সময় চলচ্চিত্র অঙ্গনে আসেন।
মূলত সহ অভিনেতা হিসাবে চলচ্চিত্র অঙ্গনে যাত্রা শুরু করলেও দীর্ঘ সংগ্রাম চালিয়ে এক সময় বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের শীর্ষ অভিনেতার আসন নেন মান্না।
তার প্রথম অভিনীত সিনেমার নাম ‘তওবা’, তবে ১৯৮৫ সালে কাজী হায়াৎ পরিচালিত ‘পাগলী’ তার প্রথম মুক্তিপ্রাপ্ত সিনেমা। মূলত কাজী হায়াৎই মান্নাকে ‘এংরি হিরো’র আসনে প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন। তার নির্মিত দাঙ্গা, ত্রাস, চাঁদাবাজ, দেশদ্রোহী, সিপাহী, আম্মাজান সিনেমায় মান্নার অভিনয় তাকে জনপ্রিয় করে তোলে।
মান্না ১৯৯৭ সালে কাজী হায়াৎ পরিচালিত লুটতরাজ চলচ্চিত্রটি প্রযোজনাও করেন। তার প্রযোজনা সংস্থা কৃতাঞ্জলী চলচ্চিত্র স্বামী স্ত্রীর যুদ্ধ, দুই বধু এক স্বামী, আমি জেল থেকে বলছি, পিতা মাতার আমানতসহ মোট আটটি চলচ্চিত্র প্রযোজনা করে।
২০০৩ সালে দেলোয়ার জাহান ঝন্টু পরিচালিত বীর সৈনিক সিনেমায় অভিনয় করে প্রথম জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার জেতেন মান্না।
মান্নার স্ত্রী শেলি স্বামীর জীবন নিয়ে একটি সিনেমা বানানোর পরিকল্পনা করছেন। তাদের একমাত্র ছেলের নাম সিয়াম ইলতিমাস মান্না।