কুড়িগ্রামে ধারের টাকা পরিশোধ করতে না পারায় দলবদ্ধ ধর্ষণের শিকার গৃহবধূর আত্মহত্যার ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠনের নির্দেশ দিয়েছে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন। সেইসঙ্গে দায়ীদের আইনের আওতায় আনারও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
রবিবার জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ কথা জানানো হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, এ বিষয়ে একটি দৈনিক সংবাদপত্রে প্রকাশিত প্রতিবেদন জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের নজরে এসেছে। এরপর কমিশন স্বপ্রণোদিত অভিযোগ (সুয়োমটো) গ্রহণ করেছে।
প্রকাশিত খবর থেকে জানা যায়, কুড়িগ্রামের রাজীবপুর উপজেলায় ধারের ২০ হাজার টাকা সময়মতো পরিশোধ করতে না পারায় এক গৃহবধূকে দুই মাস দলবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হতে হয়। এরপর বিচার চাইলেও পুলিশের বাধায় মামলা হয়নি।
বিচার না পেয়ে সেই ভুক্তভোগী গৃহবধূ ও তার স্বামী বিষপানে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন। এতে মৃত্যু হয় ওই গৃহবধূর, প্রাণে বেঁচে যান স্বামী। তাদের একটি তিন বছরের সন্তান রয়েছে। ওই গৃহবধূর মৃত্যুর পর তার চিকিৎসার জন্য ১ লাখ টাকা খরচ হয়েছে দাবি করে ফাঁকা স্ট্যাম্পে পরিবারের স্বাক্ষর নেন স্থানীয় ইউপি সদস্য।
ধর্ষণসহ এখানে উল্লেখ করা সব অভিযোগকে অত্যন্ত মর্মান্তিক ও মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন বলে উল্লেখ করেছে মানবাধিকার কমিশন। এ ঘটনায় জড়িতদের আইনের আওতায় আনার নির্দেশ দিয়েছেন জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান কামাল উদ্দিন আহমেদ।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে মানবাধিকার কমিশন জানিয়েছে, এর সর্বশেষ অবস্থা জানাতে কমিশন থেকে কুড়িগ্রাম জেলার রাজীবপুর থানার অফিসার ইনচার্জকে (ওসি) ফোন করা হযেছে। ওসি জানিয়েছেন, নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন, ২০০০–এর আওতায় নিয়মিত মামলা হয়েছে। মামলায় প্রধান আসামি জয়নালসহ দুজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
কমিশন জানিয়েছে, ধার নেওয়া ২০ হাজার টাকা সময়মতো পরিশোধ করতে না পারায় এক গৃহবধূকে দুই মাস ধরে দলবদ্ধ ধর্ষণ, পরবর্তীতে পুলিশের বাধার কারণে থানায় মামলা করতে না পারার অভিযোগগুলো অত্যন্ত মর্মান্তিক ও মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন। এই ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনা সমীচীন মনে করে কমিশন।
কমিশন সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আরও জানিয়েছে, মামলা করতে না পারা এবং চিকিৎসার খরচের জন্য এক লাখ টাকা দাবি করে ফাঁকা স্ট্যাম্পে সই নেওয়া সংক্রান্ত অভিযোগগুলো তদন্তে একজন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসকের নেতৃত্বে কমিটি গঠন করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
সেই কমিটির পুঙ্খানুপুঙ্খ তদন্ত প্রতিবেদন মানবাধিকার কমিশনে পাঠাতে কুড়িগ্রামের জেলা প্রশাসককে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া এই ঘটনায় দায়ের করা মামলার তদন্ত নিবিড় পর্যবেক্ষণ করে জরুরি ভিত্তিতে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনকে জানাতে কুড়িগ্রামের পুলিশ সুপারকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আগামী ১৬ জুলাই প্রতিবেদন দাখিলের দিন ধার্য করা হয়েছে।