Beta
শনিবার, ১৭ মে, ২০২৫
Beta
শনিবার, ১৭ মে, ২০২৫

যুক্তরাষ্ট্রে অনেক শিক্ষার্থী ভিসা বাতিল: টার্গেট কারা

Arrestes
[publishpress_authors_box]

ডোনাল্ড ট্রাম্প গত ২০ জানুয়ারি  দ্বিতীয়বার যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। এরপর থেকে শত শত শিক্ষার্থী ও সদ্য স্নাতকপ্রাপ্তদের ভিসা বাতিল করেছে দেশটির ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষ। এদের মধ্যে অনেককে আটকও করা হয়েছে।

ভিসা বাতিল ও আটকের শিকার হওয়া শিক্ষার্থীদের অধিকাংশই গাজায় ইসরায়েলের নৃশংস হামলার প্রতিবাদে ২০২৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে সংঘটিত ফিলিস্তিনপন্থী আন্দোলনে অংশ নিয়েছিলেন। অনেকে সরাসরি আন্দোলনে অংশ না নিলেও ফিলিস্তিনের প্রতি সমর্থন জানিয়ে সোশাল মিডিয়ায় মত প্রকাশ করেছিলেন।

ট্রাম্প প্রশাসনের দাবি, এসব শিক্ষার্থী ক্যাম্পাসে ইহুদিবিদ্বেষ ও হামাসপন্থী মতাদর্শ ছড়াচ্ছেন। তবে শিক্ষার্থী, আইনজীবী এবং অধিকারকর্মীরা এই অভিযোগ নাকচ করেছেন। যুক্তরাষ্ট্রে গাজা যুদ্ধবিরোধী আন্দোলনের অগ্রভাগে অনেক ইহুদি অধিকারকর্মী ও সংগঠনও রয়েছে।

এছাড়াও কেউ কেউ অল্পমাত্রার আইনি অপরাধ – যেমন ট্রাফিক আইন লঙ্ঘনের মতো কারণে ভিসা বাতিলের শিকার হয়েছেন।

এই ভিসা বাতিলের ঘটনা কত সংখ্যক শিক্ষার্থী ও বিশ্ববিদ্যালয়কে ঘিরে ঘটেছে এবং যারা লক্ষ্যবস্তু হয়েছেন তাদের সম্পর্কে কী জানা গেছে, সে বিষয়েও তথ্য পাওয়া যাচ্ছে।

মার্চের শেষদিকে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও জানান, প্রশাসন আনুমানিক ৩০০ শিক্ষার্থীর ছাত্র ভিসা বাতিল করেছে। তবে বাস্তব সংখ্যা অনেক বেশি।

এই সংখ্যা নিয়ে বিভিন্ন সূত্রে ভিন্ন ভিন্ন তথ্য পাওয়া গেছে। আমেরিকান ইমিগ্রেশন ল’ইয়ার্স অ্যাসোসিয়েশনের তথ্য অনুযায়ী, ৪ হাজার ৭০০–এর বেশি শিক্ষার্থীর নাম স্টুডেন্ট অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ ভিজিটর ইনফরমেশন সিস্টেমস (এসইভিআইএস) থেকে মুছে ফেলা হয়েছে। এই তথ্য অনুযায়ী, ভিসা বাতিলের সংখ্যা অনেক বেশি।

অন্যদিকে ভিন্ন কয়েকটি পরিসংখ্যানে বলা হয়েছে, অন্তত ১ হাজার শিক্ষার্থীর ভিসা বাতিল হয়েছে।

ন্যাশনাল ফরেন স্টুডেন্টস অ্যাডভাইজারি সংস্থা নাফসার হিসাব অনুযায়ী, ১৭ এপ্রিল পর্যন্ত প্রায় ১ হাজার ৪০০ শিক্ষার্থীকে যুক্তরাষ্ট্র থেকে বহিষ্কারের মুখোমুখি হতে হয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক উচ্চশিক্ষাবিষয়ক প্রকাশনা ইনসাইড হায়ার এড এর তথ্য অনুযায়ী, ১৭ এপ্রিল পর্যন্ত ১ হাজার ৪৮৯ জন শিক্ষার্থীর ভিসা বাতিল করা হয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে ২৪০টিরও বেশি বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজে শিক্ষার্থীদের ভিসা বাতিলের ঘটনা ঘটেছে বলে জানিয়েছে ইনসাইড হায়ার এড।

ভিসা বাতিল হওয়া শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে রয়েছে হার্ভার্ড ও স্ট্যানফোর্ডের মতো খ্যাতনামা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, ওহাইও স্টেট ইউনিভার্সিটি এবং ইউনিভার্সিটি অব মেরিল্যান্ডের মতো বড় সরকারি প্রতিষ্ঠান, এমনকি ছোট লিবারেল আর্টস কলেজও।

ভিসা বাতিলের কারণ ও শিক্ষার্থীদের করণীয়

ট্রাম্প প্রশাসনের দাবি, তারা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে সক্রিয় আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের নিয়ন্ত্রণে আনতে এই পদক্ষেপ নিচ্ছে।

গত ২৮ মার্চ পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও বলেন, “আমরা যুক্তরাষ্ট্রে আন্দোলনকারী আমদানি করছি না। তারা এখানে পড়াশোনার জন্য এসেছে, আন্দোলন চালানোর জন্য নয়।”

তবে বাস্তবে অনেক শিক্ষার্থী জানিয়েছেন, তাদের কোনো ধরনের পূর্ব সতর্কতা ছাড়া হঠাৎ করেই বৈধ অভিবাসন মর্যাদা বাতিল করা হয়েছে।

উদাহরণ হিসেবে মাহমুদ খালিল, মহসেন মাহদাওয়ি ও মোমোদু তায়ালের মতো শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে ফিলিস্তিনপন্থী আন্দোলনে সোশাল মিডিয়ায় সক্রিয় ছিলেন। তাদের অনেকেই ভিসা বাতিলের শিকার হয়েছেন।

ওয়াশিংটন ডিসিতে একটি অভিবাসন আইন বিষয়ক দলের প্রধান মোহাম্মদ আলী সৈয়দ জানান, কিছু শিক্ষার্থীর ক্ষেত্রে ট্রাফিক আইন লঙ্ঘনের মতো পুরনো ছোটখাটো অপরাধের কারণে ভিসা বাতিল হয়েছে। আবার কারও কারও ভিসা বাতিল হয়েছে কোনো পরিষ্কার ব্যাখ্যা ছাড়াই।

তিনি বলেন, “এই ব্যাপক ভিসা বাতিলের ঘটনায় আইনি চ্যালেঞ্জ উঠেছে এবং ন্যায়বিচার লঙ্ঘন ও যুক্তরাষ্ট্রে উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ওপর এর প্রভাব নিয়ে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে।”

আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, তাদের উচিত দ্রুত অভিবাসন আইনজীবীর সঙ্গে যোগাযোগ করে আইনি পদক্ষেপের বিষয়ে পরামর্শ নেওয়া।

শিক্ষার্থীরা চাইলে ফেডারেল কোর্টে মামলা করতে পারে। এসব মামলায় তারা নিজেদের সাংবিধানিক অধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলে ধরে বৈধ মর্যাদা পুনরুদ্ধারের আবেদন করতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, মিশিগানের কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা হোমল্যান্ড সিকিউরিটি বিভাগকে মামলায় যুক্ত করে বলেছে, যথাযথ নোটিশ বা ব্যাখ্যা ছাড়া তাদের এফ-১ স্ট্যাটাস বাতিল করা হয়েছে।

জরুরি অবস্থায় শিক্ষার্থীরা সাময়িক নিষেধাজ্ঞা (টিআরও) চাইতে পারেন, যাতে তাদের বহিষ্কার ঠেকিয়ে আইনি প্রক্রিয়া চলাকালীন বৈধতা বজায় থাকে। মন্টানাসহ কয়েকটি অঙ্গরাজ্যের ফেডারেল বিচারক এমন আদেশ দিয়েছেন বলেও জানিয়েছেন মোহাম্মদ আলী সৈয়দ।

তিনি আরও বলেন, “অনেক বিশ্ববিদ্যালয় ক্ষতিগ্রস্ত শিক্ষার্থীদের আইনি সহায়তা, ফেডারেল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ ও একাডেমিক সুবিধা দেওয়ার মাধ্যমে পাশে দাঁড়াচ্ছে। জর্জ ম্যাসন ইউনিভার্সিটি ভিসা বাতিলের পেছনের কারণ জানতে ফেডারেল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করছে এবং শিক্ষার্থীদের সহায়তায় আইনি পথ অনুসন্ধান করছে।”

ক্যাম্পাসে ভিসা বাতিলের প্রভাব

পেনসিলভেনিয়ার লাফায়েত কলেজের লিবারেল আর্টসের সহযোগী অধ্যাপক হাফসা কানজওয়াল বলেন, ভিসা বাতিলের কারণে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থী ও শিক্ষক উভয়ের মধ্যেই ব্যাপক আতঙ্ক ও অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। অনেকেই এখন বিদেশ ভ্রমণ নিয়ে দ্বিধায় পড়েছেন।

তিনি আল জাজিরাকে বলেন, “কিছু শিক্ষার্থী ও শিক্ষকের এমন কোনো দেশ নেই যেখানে তারা ফিরে যেতে পারেন। কারণ তাদের নিজ নিজ দেশে রাজনৈতিক অস্থিরতা চলছে।”

কিছু বিশ্ববিদ্যালয় সক্রিয়ভাবে শিক্ষার্থীদের পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করলেও এমন উদ্যোগ খুব সীমিত। অধিকাংশ বিশ্ববিদ্যালয়ই আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের আশ্বস্ত করার মতো কোনো সুস্পষ্ট ব্যবস্থা নেয়নি। বিশেষ করে নতুন পরিস্থিতির আলোকে কী ধরনের একাডেমিক বা প্রশাসনিক সহায়তা দেওয়া হবে, সে বিষয়ে পরিষ্কার কিছু জানানো হয়নি।

নিরাপত্তার কারণে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্টেট কলেজের একজন শিক্ষক বলেন, আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীরা চরম আতঙ্কে রয়েছে।

তার মতে, অনেক শিক্ষার্থী—যারা প্রকাশ্যে কোনো রাজনৈতিক অবস্থান নেয়নি—তারা তাদের সোশাল মিডিয়া প্রোফাইল মুছে দিচ্ছে। কারণ তারা ভয় পাচ্ছে, কোনো সামান্য ভুল, পূর্বে বলা বা পোস্ট করা কিছু ব্যবহার করে তাদের ধরে নিয়ে যাওয়া হতে পারে। আর এমনটা হলে তাদের শিক্ষা ও ভবিষ্যৎ ধ্বংস হয়ে যেতে পারে।

তিনি স্মরণ করে বলেন, “গ্রিন কার্ডধারী অবস্থায় আমি যখন রাজনীতিতে অংশ নিতাম, তখন জানতাম যে আইন মেনে চললে মত প্রকাশ ও রাজনৈতিক অংশগ্রহণের অধিকার রয়েছে।”

তিনি আরও বলেন, “আমি আফগানিস্তান ও ইরাক যুদ্ধের বিরুদ্ধে আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশ নিয়েছি এবং ‘ওয়ার অন টেরর’-এর মতো নীতির সমালোচনা করেছি। কিন্তু এখন ট্রাম্প প্রশাসন মূলত অভিবাসী ও আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের বার্তা দিচ্ছে যে, যুক্তরাষ্ট্রে তাদের অধিকার আসলে বিশেষ সুবিধা, যা শুধু শর্ত মেনে চললে দেওয়া হবে। একইসঙ্গে তারা অভিবাসনের পথ বন্ধ করে দিতে চায় এবং গ্রিন কার্ডধারীদের টার্গেট করছে।”

তার মতে, প্রশাসন মনে করে বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজগুলো উদারপন্থী ও বামধারার চিন্তার কেন্দ্রবিন্দু। তাই ফিলিস্তিন ইস্যুকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে তারা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে নিয়ন্ত্রণে আনতে এবং শ্রেণিকক্ষে উদার ও বামধারার বিষয়বস্তু দমন করতে চায়।

ক্ষতিগ্রস্ত কয়েকজন

ডোনাল্ড ট্রাম্প গত ২৯ জানুয়ারি ‘অ্যান্টি-সেমিটিজম মোকাবেলায় অতিরিক্ত ব্যবস্থা‘ শীর্ষক একটি নির্বাহী আদেশে স্বাক্ষর করেন।

এর পরিপ্রেক্ষিতেই অভিবাসন কর্তৃপক্ষ শিক্ষার্থী ও সদ্য স্নাতকপ্রাপ্তদের ভিসা বাতিল করছে। এর মধ্যে অনেকের ঘটনা কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থী মাহমুদ খালিলের গ্রেপ্তারের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বলে মনে করা হচ্ছে।

মাহমুদ খালিল

গত ৮ মার্চ কলাম্বিয়া ইউনিভার্সিটির স্নাতক ৩০ বছর বয়সী আলজেরিয়ান-ফিলিস্তিনি মাহমুদ খালিলকে গ্রেপ্তার করা হয়। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের গ্রিন কার্ডধারী (স্থায়ী বাসিন্দা)। গত মাসে অভিবাসন ও শুল্ক প্রয়োগ সংস্থা (আইসিই) মাহমুদ খালিলকে গ্রেপ্তার করে। 

তিনি কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের “কলাম্বিয়া ইউনিভার্সিটি অ্যাপার্টহেইড ডাইভেস্ট (সিইউএডি)” আন্দোলনের প্রধান আলোচক ছিলেন। গত বছর ফিলিস্তিনপন্থী ক্যাম্পাস আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছেন। তাকে নিউ ইয়র্ক শহরে বিশ্ববিদ্যালয় মালিকানাধীন একটি অ্যাপার্টমেন্ট থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। এ সময় তার স্ত্রী, যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক ও গর্ভবতী নূর আবদাল্লা তার মোবাইল ফোনে গ্রেপ্তারের দৃশ্য ধারণ করেন।

এই ঘটনা ছিল ট্রাম্প প্রশাসনের অধীনে এই ধরণের প্রথম প্রকাশ্যভাবে পরিচিত ছাত্র বহিষ্কারের প্রচেষ্টা।

হোমল্যান্ড সিকিউরিটি বিভাগের মুখপাত্র ট্রিসিয়া ম্যাকলাফলিন দাবি করেন, খালিল হামাসের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কার্যক্রমে নেতৃত্ব দিয়েছেন। হামাস যুক্তরাষ্ট্রে একটি সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে তালিকাভুক্ত। তবে তার বিরুদ্ধে এমন কোনো প্রমাণ জনসম্মুখে উপস্থাপন করা হয়নি। 

খালিলের স্ত্রী জানান, গ্রেপ্তারের সময় কোনো ওয়ারেন্ট দেখানো হয়নি।

গ্রেপ্তারের সময় খালিলের বৈধ গ্রিন কার্ড ছিল। যখন এজেন্টদের জানানো হয় তিনি গ্রিন কার্ডধারী, তখন তারা জানান, সেটি বাতিল করা হবে। তার বিরুদ্ধে এখনও পর্যন্ত কোনো অপরাধমূলক অভিযোগ আনা হয়নি।

তবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও খালিলের গ্রেপ্তারের একটি সংবাদের লিংক সোশাল মিডিয়ায় শেয়ার করে লেখেন, “আমরা যুক্তরাষ্ট্রে হামাস সমর্থকদের ভিসা/অথবা গ্রিন কার্ড বাতিল করব, যাতে তাদের বহিষ্কার করা যায়।”

এই ঘটনাটি ব্যাপক সমালোচনার জন্ম দিয়েছে। অধিকারকর্মীরা বলছেন, ট্রাম্প প্রশাসন “অ্যান্টি-সেমিটিজম মোকাবেলার” নামে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ও ফিলিস্তিনপন্থী আন্দোলনের ওপর দমননীতি চালাচ্ছে। 

খালিলকে বহিষ্কারের জন্য ট্রাম্প প্রশাসন একটি খুব কম ব্যবহৃত অভিবাসন আইনের ধারা প্রয়োগ করছে। এই ধারায় পররাষ্ট্র মন্ত্রী এমন কোনো বিদেশি নাগরিককে যুক্তরাষ্ট্র থেকে বহিষ্কারের ক্ষমতা রাখেন, যার অবস্থান যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রনীতির ওপর “প্রতিকূল প্রভাব” ফেলতে পারে বলে মনে করা হয়। 

খালিল বর্তমানে লুইজিয়ানার জেনা শহরের লা সাল ডিটেনশন সেন্টারে আটক রয়েছেন।

রুমাইসা ওজতুর্ক

যুক্তরাষ্ট্রের টাফটস ইউনিভার্সিটিতে শিক্ষার্থী ভিসায় পড়তেন ৩০ বছর বয়সী তুর্কি নাগরিক রুমাইয়া ওজতুর্ক। গত ২৬ মার্চ তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।

নিরাপত্তা ক্যামেরার ফুটেজে দেখা গেছে, মার্চের শেষ দিকে ম্যাসাচুসেটসের সামারভিলে তার বাসার কাছে ছয়জন সাধারণ পোশাকধারী ব্যক্তি রুমাইসাকে গ্রেপ্তার করে। এদের কয়েকজন মুখ আংশিকভাবে ঢেকে রেখেছিলেন। রুমাইসা তখন রমজানের ইফতার করতে একা বাইরে যাচ্ছিলেন। তার বিরুদ্ধে এখনো কোনো অপরাধমূলক অভিযোগ আনুষ্ঠানিকভাবে আনা হয়নি।

২০২৪ সালের ২৬ মার্চ রুমাইসা ওজতুর্ক টাফটস ডেইলিতে একটি মতামতমূলক নিবন্ধ লেখেন চারজন সহশিক্ষার্থীর সঙ্গে। এই লেখায় তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রেসিডেন্ট সুনীল কুমারকে সমালোচনা করেন। প্রেসিডেন্ট একটি ইমেইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদ গৃহীত প্রস্তাবগুলোকে অগ্রাহ্য করেছিলেন। প্রস্তাবগুলোতে বিশ্ববিদ্যালয়কে ইসরায়েল সংশ্লিষ্ট কোম্পানি থেকে বিনিয়োগ প্রত্যাহারের আহ্বান জানানো হয় এবং ফিলিস্তিনে গণহত্যার স্বীকৃতির দাবি করা হয়।

রুমাইসার আইনজীবী মাহসা খানবাবাই বোস্টনের ফেডারেল আদালতে একটি পিটিশন দাখিল করেন, যেখানে তিনি রুমাইসার গ্রেপ্তারকে বেআইনি বলে দাবি করেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে যুক্তরাষ্ট্র জেলা বিচারক ইন্দিরা তালওয়ানি নির্দেশ দেন যে, ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষ রুমাইসাকে ম্যাসাচুসেটস রাজ্যের বাইরে নিতে চাইলে কমপক্ষে ৪৮ ঘণ্টা আগে জানাতে হবে।

তবে আইনজীবীর অভিযোগ অনুযায়ী, এই নির্দেশনা উপেক্ষা করে রুমাইসাকে এক দিনের মধ্যেই লুইজিয়ানা রাজ্যে স্থানান্তর করা হয়।

যুক্তরাষ্ট্রের হোমল্যান্ড সিকিউরিটি বিভাগের মুখপাত্র ট্রিসিয়া ম্যাকলাফলিন ২৬ মার্চ এক্সে লেখেন, “ডিএইচএস ও আইসিইর তদন্তে জানা গেছে, ওজতুর্ক হামাসের পক্ষে কার্যক্রমে জড়িত ছিলেন—এমন একটি বিদেশি সন্ত্রাসী সংগঠন যা আমেরিকানদের হত্যা উপভোগ করে।” তবে এসব অভিযোগের সুনির্দিষ্ট তথ্য তিনি প্রকাশ করেননি।

গত ১৮ এপ্রিলের তথ্য অনুযায়ী, রুমাইসা ওজতুর্ক লুইজিয়ানার সাউথ লুইজিয়ানা আইসিই প্রসেসিং সেন্টারে আটক রয়েছেন।

উপরের দুই শিক্ষার্থীর মতো আটক হওয়া অন্য শিক্ষার্থীদের মধ্যে রয়েছে, বদর খান শুরি (ভারত), ইউসেও চুং (দক্ষিণ কোরিয়া), মোমোদু তায়াল (যুক্তরাজ্য ও গাম্বিয়া), আলিরেজা দোরোদি (ইরান), রঞ্জনি শ্রীনিবাসন (ভারত), লিকা করদিয়া (ফিলিস্তিন), শিয়াওতিয়ান লু (চীন), মহসেন মাহদাওয়ি (ফিলিস্তিন) সহ আরও অনেকে।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত