Beta
মঙ্গলবার, ১০ সেপ্টেম্বর, ২০২৪
Beta
মঙ্গলবার, ১০ সেপ্টেম্বর, ২০২৪

বিসিবির চেয়ারের দিকে অনেকের চোখ

Capture
Picture of শিহাব উদ্দিন

শিহাব উদ্দিন

টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ সিরিজের জন্য বাংলাদেশের পাকিস্তান যেতে ১০ দিন বাকি। অথচ তার অনুশীলনই শুরু হয়নি। বৃহস্পতিবার “এ” দলের সঙ্গে অনুশীলন করেছেন নাজমুল হাসান শান্ত, তাওহিদ হৃদয়, তাসকিন আহমেদরা। কিন্তু দল হয়ে আনুষ্ঠানিক অনুশীলনের কোনও খবর নেই।

দেশে চলমান অস্থিরতার মধ্যে জাতীয় দলের কোচিং স্টাফরাও মাঠে নামতে ভয় পাচ্ছেন। হেড কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহে, সহকারি কোচ নিক পোথাস, ব্যাটিং কোচ ডেভিড হেম্প, বোলিং কোচ আন্দ্রে অ্যাডামসরা ঢাকায় থাকলেও অনুশীলনে আসতে চাইছেন না নিরাপত্তার অভাবে।

ঠিক একই ভয়ে বিসিবি কার্যালয়েও দেখা নেই কোন পরিচালকের। আগে প্রতিদিনই কয়েকজনকে দেখা যেতো বোর্ডে। তবে ছাত্রদের আন্দোলন প্রকান্ড রূপ নেওয়ার পর থেকে বোর্ডে আসছেন না কোনও পরিচালক।

সাবেক ক্রীড়ামন্ত্রী ও বোর্ড প্রধান নাজমুল হাসান পাপনও নিখোঁজ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে দেশ ছাড়ার পর কেউ কেউ বিদেশে গেছেন। যারা দেশে আছেন তাদের মোবাইল কিংবা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও পাওয়া যাচ্ছে না।

বিসিবিতে ঢুকতে অনেকের দৌড়-ঝাঁপ

রাজনৈতিক পট পরিবর্তন ও পরিচালকদের অনুপস্থিতিতে অন্যরা সুযোগ নিতে চাইছেন। একদল ইতিমধ্যে ব্যানার নিয়ে পরিবর্তনের ডাক দিয়ে গেছে বিসিবিতে। তারা ভাবছেন, নাজমুল হাসান পাপন নেতৃত্বাধীন কমিটির সময় ফুরিয়ে গেছে।

এই সুযোগে কয়েকটি পক্ষ তৎপর হয়ে উঠেছে বিসিবিতে ঢুকতে। এদের মধ্যে অনেকেই ছিলেন বিসিবির সাবেক পরিচালক। আপাতভাবে তিনটি পক্ষ সক্রিয় আছে বাইরে।

একটি হলো বিসিবির সাবেক সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল হক ও সংগঠক তানভীর মাজহার তান্না। তিনি সম্পাদক তান্না ২০২৩ বিশ্বকাপের ব্যর্থতার পর বিসিবির কমিটিকে দায় নিয়ে পদত্যাগ করার দাবি তুলেছিলেন। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অধীনে তারা ক্রিকেটের হাল ধরার চেষ্টা করছেন। তান্না অন্তর্বর্তীকালীন সরকার প্রধানের ঘনিষ্ঠ প্রতিবেশী বলে জানা গেছে।

আরেকটি পক্ষ বিসিবির সাবেক পরিচালক খন্দকার জামিল উদ্দিন ও লিজেন্ডস অব রূপগঞ্জ ক্লাবের মালিক লুৎফর রহমান বাদল । দীর্ঘদিন জামিল কমিটির বাইরে থাকলেও ক্রিকেট তার নিয়মিত উপস্থিতি দেখা যায় টিভি টক শো-তে।

এছাড়া বিসিবির সাবেক দুই পরিচালক আলী আহসান বাবু ও পারটেক্স গ্রুপের অন্যতম মালিক আজিজ আল কায়সার টিটোর নেতৃত্বে একদলের তৎপরতার কথা জানা গেছে।

বিসিবির বর্তমান সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন

বিসিবি কী বলছে

বর্তমানে বিসিবির হয়ে সকল কার্যক্রম পরিচালনা করছেন প্রধান নির্বাহী নিজামউদ্দিন চৌধুরী। তার কাছে বিসিবির পরিচালনা পর্ষদের ভবিষ্যত নিয়ে জানতে চাওয়া হলে কোন মন্তব্য করতে চাননি তিনি। সকাল সন্ধ্যাকে নিজামউদ্দিন বলেছেন, “যেহেতু এখন একটা অস্থিতিশীল পরিস্থিতি এজন্য এই সংক্রান্ত কোন মন্তব্য করা আমার পক্ষে উচিত হবে না।”

তবে গত কয়েকদিনে বিসিবিতে কিছু ক্লাব সংগঠকদের আনাগোনা বেড়েছে। বৃহস্পতিবারও একদল যুবককে দেখা যায় মোটর সাইকেল নিয়ে বিসিবির সামনে। এ ব্যাপারে নিজামউদ্দিন বলেছেন “বর্তমানে বিসিবিতে যে পরিস্থিতি হচ্ছে আমরা মনে হয় সবাই একটু সুশৃঙ্খল থাকলে আমাদের সকলের জন্যই ভালো। ব্যাপারটা আসলেই একটু বিব্রতকর।”

বিসিবি সরকার দ্বারা পরিচালিত হয় না। নির্বাচনের মাধ্যমে এই সংস্থার পরিচালক নির্ধারণ হন। তবে সরকার বদলে যাওয়ায় নাজমুল হাসান পাপনের নেতৃত্বধীন কমিটি যে নড়বড়ে হয়ে গেছে, সেটা বলার অপেক্ষা রাখে না।

সেক্ষেত্রে বিসিবির পরিচালনা পর্ষদের ভবিষ্যৎ কি তা সুজন যোগ করেছেন, “বিসিবি একটা সুসংগঠিত স্বায়ত্বশাষিত সংস্থা। বিসিবির কাঠামো কিন্তু আগের মতো নেই, নানা নিয়ম-কানুনে বিসিবির কাঠামো এখন বেশ শক্ত। তবুও বলবো নতুন সরকার গঠিত হলে তখন পরিস্থিতি অনুযায়ী যেটা ভালো হবে সেরকম কিছু হতে পারে।”

আইসিসির নজরে থাকবে বিসিবি

বিসিবিতে পুরোনো কমিটির কার্যক্রম না হলেও নতুন কমিটি গঠন নির্বাচনের মাধ্যমে হতে হবে। সরকারি হস্তক্ষেপ বা বহিরাগত চাপ থাকলে কঠোর অবস্থানে যেতে পারে আইসিসি। কারণ এই সময়ে বিসিবি আইসিসির নজরে আছে। নিয়মের বাইরের কিছু হলে জিম্বাবুয়ে ও শ্রীলঙ্কার মতো বড় টুর্নামেন্টে খেলা ও আয়োজন করায় নিষেধাজ্ঞা আসতে পারে বিসিবির ওপর।

বিসিবির ওপর নজরদারির বড় কারণ হলো আগামী অক্টোবরেই বাংলাদেশে নারী টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ। আসরটি হওয়ার কথা আছে বাংলাদেশে। পরিস্থিতি নজরে রাখার জন্য আইসিসির একজন প্রতিনিধি বাংলাদেশে আছেন। এখানকার পরিস্থিতি আইসিসিকে নিয়মিত জানাচ্ছেন তিনি।

এ ব্যাপারে বিসিবির মিডিয়া ম্যানেজার রাবিদ ইমাম সকাল সন্ধ্যাকে বলেছেন, “আইসিসির সঙ্গে আমাদের যোগযোগ চলছে। ওরা নিয়মিত আমাদের কাছে জানতে চাইছে সবকিছু। কিন্তু গত কয়েকদিনে কোন সরকার বা প্রশাসন না থাকায় টুর্নামেন্টের বিষয়ে কোন কিছুই জানাতে পারছি না। আজ (বৃহস্পতিবার) একটা সরকার গঠিত হলে, প্রশাসন নির্দিষ্ট হলে আমরা দ্রুত টুর্নামেন্টের নিরাপত্তা, কার্যক্রমের ব্যাপারে জানাতে পারব।’

বিসিবির চলমান কমিটির সভায় সামনে দেখা যেতে পারে নতুন মুখ

ভারত সফর নিয়ে শঙ্কা

বিসিবির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে সামনের সিরিজগুলো নিয়ে শঙ্কা নেই। পাকিস্তান “এ” দলের বিপক্ষে, পাকিস্তানে টেস্ট সিরিজগুলো আইসিসির সূচী অনুযায়ী চলবে।

এই ক্ষেত্রে বিসিবি পরিচালকরা না থাকলেও সমস্যা নেই বলে জানিয়েছেন নিজামউদ্দিন, “বিসিবির সকল কার্যক্রম তো আসলে পরিচালকরা করেন না। সিরিজ বা এফটিপি সংক্রান্ত যে কাজগুলো সেগুলো ম্যানেজমেন্টের অধীনে হয়। সেদিক থেকে ওই কার্যক্রমগুলো ঠিক থাকবে এবং পাকিস্তান সিরিজে আমরা সেভাবেই এগোচ্ছি।”

তবে বুধবার ভারত বাংলাদেশে অবস্থিত তাদের ভিসা সেন্টার অনির্দিষ্ট কালের জন্য বন্ধ করে দেওয়ায় সেপ্টেম্বরে ভারত সফর নিয়ে শঙ্কা জেগেছে। মাত্র একদিন আগেই ভারত এই সিদ্ধান্ত নেওয়ায় ওই সিরিজ নিয়ে এখনই কোন কিছু বলতে পারেননি নিজামউদ্দিন সুজন।

পাকিস্তান সফর এগিয়ে আনার চেষ্টা

ফিরে আসা যাক পাকিস্তান সিরিজের আলোচনায়। দেশে অনুশীলনের সুযোগ না থাকায় বিসিবি এখন বিকল্প ভাবছে ক্রিকেটারদের জন্য। ১৭ আগস্ট পাকিস্তানের উদ্দেশ্যে দেশ ছাড়ার কথা থাকলেও বিসিবি থেকে সফর এগিয়ে আনার চেষ্টা করা হচ্ছে। আগেভাগে ওখানে গিয়ে যেন ক্রিকেটাররা ভালভাবে অনুশীলনের সুযোগ পান।

দেশে সেই সুবিধা না থাকায় বিকল্প চিন্তা আসছে বলে সকাল সন্ধ্যাকে জানিয়েছেন প্রধান নির্বাচক গাজী আশরাফ হোসেন লিপু, “আসলে এখন যা অবস্থা আমরা কাকে নিরাপত্তা দেওয়ার কথা বলব? প্রশাসন তো নেই। এখন আমরা একটা পরিকল্পনা করছি (১৭ আগস্টের আগে পাকিস্তান যাওয়ার) কিন্তু সরকার গঠিত না হওয়া পর্যন্ত এই সিদ্ধান্তও নেওয়া যাচ্ছে না। আজকের (বৃহস্পতিবার) পর দেখা যাক কি হয়।”

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

ad

সর্বাধিক পঠিত